এক ওভারে তিনটিসহ ম্যাচে চার উইকেট নিলেন কামরুল ইসলাম রাব্বি, ছোট পুঁজি নিয়েও দারুণ জয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালের খেলার আশা জিইয়ে রাখল রংপুর রাইডার্স।
Published : 05 Dec 2024, 11:39 AM
হালকা সুইং করা ডেলিভারি বুঝতেই পারলেন না ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে আলগা শটে আউট মইন আলি। স্কিড করে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে উপড়ে গেল শিমরন হেটমায়ারের স্টাম্প। চার বলের মধ্যেই তিন উইকেট! ছোট পুঁজি নিয়ে যেমন দরকার, তেমন শুরু এনে দিলেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। সেই পথ ধরেই দারুণ বোলিং পারফরম্যান্সে ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্টে টিকে রইল রংপুর রাইডার্স।
গায়ানায় গ্লোবাল সুপার লিগে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে কোণঠাসা হয়ে পড়া রংপুর রাইডার্স প্রথম জয়ের দেখা পেল কাগজে-কলমে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী দল গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সকে ১৫ রানে হারিয়ে।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে রংপুর ২০ ওভারে তোলে ১১৭ রান। এক পর্যায়ে ২৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে উদ্ধার করেন খুশদিল শাহ। ৪৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে চারটি ছক্কা মারেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান।
রান তাড়া কামরুলের ওই বিধ্বংসী ওভারের পর হারমিত সিংয়ের স্পিনের সামনে আর দাঁড়াতে পারেনি গায়ানা। গুটিয়ে যায় তারা ১০২ রানে।
১৩ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন কামরুল। তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবার ম্যাচে ৪ উইকেটের স্বাদ পেলেন ৩২ বছর বয়সী পেসার। ১২ রানে ৩ উইকেট নেন যুক্তরাষ্ট্রের বাঁহাতি স্পিনার হারমিত সিং।
রংপুরের বিপক্ষ দলেও বাংলাদেশের একজন ছিলেন। আসরজুড়ে গায়ানায় হয়ে দারুণ বোলিং করা তানজিম হাসান সাকিব এই ম্যাচেই দুই উইকেট নেন ২১ রানে।
প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপাকে পড়ে যায় রংপুর রাইডার্স। ম্যাচের প্রথম ডেলিভারিতেই প্রিটোরিয়াসের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন স্টিভেন টেইলর।
আফিফ হোসেনের বদলে সুযোগ পাওয়া সাইফ হাসান তিনে নেমে চার মারেন দুটি। কিন্তু ওই ওভারে তিনিও স্টাম্পে টেনে আনেন বল।
প্রথম ওভারে দুই উইকেট হারানো দল পড়ে আরও বিপদে পড়ে যায়। তৃতীয় ওভারে ইংলিশ ব্যাটসম্যান ওয়েইন ম্যাডসেনকে বিদায় করেন প্রিটোরিয়াস। পরের ওভারে সৌম্য সরকারের অফ স্টাম্প ভূপাতিত করেন তানজিম। রংপুরের রান তখন ৪ উইকেটে ১৪।
ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া শেখ মেহেদি হাসান যখন ১৩ বলে ৩ রান করে বিদায় নিলেন ইমরান তাহিরের ফুল টস বলে ক্যাচ দিয়ে, রংপুর তখন মহাবিপদে।
খুশদিল ও নুরুল হাসান সোহান সেখান থেকে টেনে তোলেন দলকে। ষষ্ঠ উইকেটে ৫৯ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন দুজন। তবে সেটি ছিল মূলত খুশদিলের অবদানেই। সোহান আউট হন ২৬ বলে ১৫ রান করে।
দারুণ খেলতে থাকা খুশদিলকে সপ্তদশ ওভারে বিদায় করেন তানজিম। এরপর রিশাদ হোসেন দুটি বাউন্ডারি ও হারমিত সিংয়ের দুটি বাউন্ডারিতে ১১৭ রান পর্যন্ত যেতে পারে রংপুর।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারেই তিন উইকেট নিয়ে গায়ানাকে নাড়িয়ে দেন কামরুল। দ্রুত রান তোলার জন্য ওপেনিংয়ে পাঠানো প্রিটোরিয়াস ও বিপজ্জনক দুই ব্যাটসম্যান মইন-হেটমায়ারকে হারানোর সেই ধাক্কা আর সামলাতে পারেনি গায়ানা।
এক ওভারে তিন উইকেট নেওয়া কামরুল পরে হারমিত সিংয়ের বলে ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন রোস্টন চেইসকে। হাসান খানের রান আউটে পঞ্চম ওভারের মধ্যে হারায় তারা পাঁচ উইকেট।
শেই হোপ এক প্রান্ত আগলে রাখেন লম্বা সময়। গুডাকেশ মোটি ও কিমো পলের সঙ্গে ৩৬ ও ২৬ রানের দুটি জুটি গড়েন তিনি। তবে রান রেটের চাপ বাড়তে থাকে। একটি ছক্কা ও চার মেরে পল বোল্ড হন হারমিতের বলে।
শেই হোপও পারেননি দলের ত্রাতা হতে। রিশাদ হোসেনকে স্লগ সুইপ করে অষ্টাদশ ওভারে তিনি আউট হন ৪৪ বলে ৩৫ রান করে।
গায়ানার শেষ ভরসা ছিলেন রোমারিও শেফার্ড। খুশদিল শাহকে একটি ছক্কা মারলেও আগ্রাসী এই ব্যাটসম্যানকে শান্তই রাখতে পারে রংপুর। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১৬ রানের। স্ট্রাইকে ছিলেন শেফার্ডই। কিন্তু প্রথম বলেই তাকে ফিরিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন কামরুল।
বোলারদের ম্যাচে একমাত্র ফিফটিতে ম্যাচ-সেরা খুশদিল শাহ।
রংপুরের এই জয়ে ফাইনালে ওঠার লড়াই পৌঁছে গেল প্রাথমিক পর্বের শেষ দিনে। কাগজে-কলমে সম্ভাবনা টিকে আছে আসরের পাঁচ দলেরই।
প্রাথমিক পর্বের শেষ দিনে দুটি ম্যাচ। চার পয়েন্ট পাওয়া ভিক্টোরিয়া লড়বে দুই পয়েন্ট পাওয়া হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে, পরে রংপুরের প্রতিপক্ষ চার পয়েন্ট পাওয়া লাহোর কালান্দার্স। ফাইনালে উঠতে হলে রংপুরকে শুধু জিতলেই চলবে না, রান রেটের কঠিন সমীকরণও মেলাতে হবে। তবে তাদের ম্যাচটি শেষে থাকায় রান রেটের সমীকরণ জেনেই মাঠে নামার সুবিধা তারা পাবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রান আটটায় শুরু ভিক্টোরিয়া-হ্যাম্পশায়ার ম্যাচ। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায় রংপুরের ম্যাচ। ফাইনাল শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোর পাঁচটায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১১৭ (টেইলর ০, সৌম্য ২, সাইফ ৮, ম্যাডসেন ৪, শেখ মেহেদি ৩, খুশদিল ৫৮, সোহান ১৫, রিশাদ ১০, হারমিত ১১, চ্যাপেল ২, কামরুল ১*; প্রিটোরিয়াস ৪-০-১৫-৩, তানজিম ৪-০-২১-২, শেফার্ড ৪-০-২৭-১, তাহির ৪-০-২৪-২, মোটি ২-০-১৭-২, চেইস ১-০-৮-০, মইন ১-০-৫-০)।
গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স: ১৯.১ ওভারে ১০২ (মইন ৫, প্রিটোরিয়াস ১, হোপ ৩৫, হেটমায়ার ০, হেইস ৯, হাসান ১, মোটি ১৫, পল ১৮, তাহির ২, শেফার্ড ৯, তানজিম ২*; চ্যাপেল ২-০-১৩-০, কামরুল ৩.১-০-১৩-৪, হারমিত ৪-০-১২-৩, রিশাদ ৪-০-২২-১, শেখ মেহেদি ৩-০-২২-১, খুশদিল ৩-০-২২-০)।
ফল: রংপুর রাইডার্স ১৫ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: খুশদিল শাহ।