প্রথম ইনিংসে ৫০০ রান তুলেও ইনিংস ব্যবধানে হারের প্রথম নজির গড়ল পাকিস্তান, মুলতানের ব্যাটিং স্বর্গে স্মরণীয় এক জয় পেল ইংল্যান্ড।
Published : 11 Oct 2024, 01:46 PM
যা ছিল অকল্পনীয় ও অভাবনীয়, সেটিই এখন বাস্তব। সড়কের মতো উইকেট, যেখানে ড্র ছাড়া অন্য কোনো ফল কারও কল্পনার সীমানায় ছিল না ম্যাচের বেশির ভাগ সময় ধরে, সেই ম্যাচ শেষ হয়ে গেল শেষ দিন সকালেই। ম্যাচের প্রথম দুই দিনে রানের জোয়ার বইয়ে দেওয়া পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত বাজেভাবে হেরে গেল টেস্ট ইতিহাসের প্রথম নজির গড়ে।
মুলতান টেস্টে পাকিস্তানকে ইনিংস ও ৪৭ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজের এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে প্রায় দেড়শ ওভার ব্যাট করে রান তুলেছিল ৫৫৬। সেই দলটিই শেষ পর্যন্ত হেরে গেল শোচনীয়ভাবে।
টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো দল এক ইনিংসে ৫০০ রান তুলেও ইনিংস ব্যবধানে হেরে গেল।
এশিয়ায় মাত্র দ্বিতীয়বার ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বাদ পেল ইংলিশরা। সবশেষ ১৯৭৬ সালে দিল্লিতে ভারতকে হারিয়েছিল তারা ইনিংস ও ২৫ রানে।
বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর ইংল্যান্ডের কাছে এমন হার, পাকিস্তানের দুঃসময় দীর্ঘায়িত হলো আরও। শান মাসুদের নেতৃত্বে তারা হারল টানা ছয় টেস্টে।
এবার মুলতানে এই টেস্টের প্রথম দিন থেকে উইকেট নিয়েই ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচনা। নিষ্প্রাণ উইকেটের সমালোচনা চলছিল ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে। ‘এই উইকেটে টানা তিন বল ব্যাটে লাগাতে না পারলে ব্যাটসম্যানকে আউট দেওয়া উচিত’, ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইনের এমন মন্তব্যই ফুটিয়ে তোলে উইকেটের অবস্থা।
পাকিস্তানের ৫৫৬ রানের জবাবটা দারুণভাবে দেয় ইংল্যান্ড। হ্যারি ব্রুকের ৩২২ বলে ৩১৭, জো রুটের ২৬২, চতুর্থ উইকেটে ৪৫৪ রানের বিশ্বরেকর্ড জুটি, সব মিলিয়ে ৭ উইকেটে ৮২৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে তারা। তখনও পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্যে ড্র ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায়নি।
কিন্তু চতুর্থ দিন বিকেলে নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং। উইকেটের চরিত্র খুব একটা পাল্টায়নি, তবে পাকিস্তান ক্রিকেটের চিরায়ত চরিত্র ফিরে আসে। অবিশ্বাস্যভাবে ৮২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে তারা।
পরে সালমান আলি আঘা ও আমের জামালের জুটিতে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে ওঠে বটে। কিন্তু ম্যাচের ভাগ্য পরিষ্কার হয়ে যায় অনেকটাই।
শেষ দিনে শুক্রবার ৬ উইকেটে ১৫২ রান নিয়ে দিন শুরু করে পাকিস্তান। আগের দিনের অবিচ্ছিন্ন জুটি এ দিন আরও কিছুদূর টেনে নেন সালমান ও জামাল।
দারুণ এক আর্ম ডেলিভারিতে সালমানকে ফিরিয়ে ১০৯ রানের জুটি ভাঙেন জ্যাক লিচ। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান সালমান এবার বিদায় নেন ৬৩ রানে।
এরপর আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ইংল্যান্ডকে। শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহকেও অল্প সময়ের মধ্যে ফেরান লিচ। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়া আবরার আহমেদ ফেরেননি মাঠে।
দ্বিতীয় টেস্ট ফিফটিতে ৫৫ রানে অপরাজিত রয়ে যান অলরাউন্ডার জামাল।
চার উইকেট নিয়ে শেষ করেন লিচ। শেষ দিনে ১৭.৫ ওভারেই শেষ খেলা।
এক ইনিংসে ৫০০ রান ছুঁয়েও শেষ পর্যন্ত হেরে যাওয়ার ঘটনা এবার নিয়ে ১৯ বার দেখল টেস্ট ক্রিকেট। সর্বোচ্চ পাঁচবার এমন পরাজয়ের শিকার হলো পাকিস্তান।
পাকিস্তান প্রথমবার দেশের মাঠে হোয়াইটওয়াশড হয়েছিল ইংল্যান্ডের সবশেষ সফরে। ২০২২ সালের সেই সিরিজে বেন স্টোকসের দল দারুণ আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে জিতেছিল ৩-০ ব্যবধানে। এবার চোটের কারণে স্টোকস খেলতে পারেননি এই টেস্টে। নিয়মিত অধিনায়ককে ছাড়াই আরেকটি ইতিহাসগড়া জয় পেল ইংলিশরা।
পাকিস্তানে তাদের টেস্ট জয়রথ পৌঁছে গেল টানা চার টেস্টে।
৩২২ বলে ৩১৭ রানের ইনিংসটির জন্য ম্যাচের সেরা হ্যারি ব্রুক।
সিরিজের পরের টেস্ট এই মাঠেই আগামী মঙ্গলবার থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৫৬
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮২৩/৭ (ডিক্লে.)
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৫২/৬) ৫৪.৫ ওভারে ২২০ (সালমান ৬৩, জামাল ৫৫*, আফ্রিদি ১০, নাসিম ৬, আববার অনুপস্থিত; ওকস ১২-১-৪১-১, অ্যাটকিনসন ১৪-২-৪৬-২, বাশির ৬-০-৩২-০, কার্স ১৬-১-৬৬-২ লিচ ৬.৫-১-৩০-৪)।
ফল: ইংল্যান্ড ইনিংস ও ৪৭ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: হ্যারি ব্রুক।