‘আগ্রাসী ব্র্যান্ড’ ধরে রেখেই সিরিজ জয়ের অপেক্ষা

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে যে ধরনের ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ, সেই পথে হেঁটেই দ্বিতীয় ম্যাচে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চায় দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2023, 03:17 PM
Updated : 19 March 2023, 03:17 PM

সকাল থেকেই সিলেটের প্রকৃতি গুমোট। রোববার দিনজুড়েই আকাশের কান্না চলল থেমে থেমে। আগের দিন ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ দলের কোনো অনুশীলনও ছিল না। তবু কয়েকজনের আগমনে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খানিকটা আলোড়ন। তামিম ইকবাল ইকবাল হাজির কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে ও বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে। বড় রানের খোঁজে থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক ইনডোরে ব্যাটিং ঝালাই করলেন দুই কোচের সঙ্গে।

অনুশীলন সেশন শেষে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে হেরাথ। লঙ্কান স্পিন গ্রেট জীবনের পথচলায় পূর্ণ করলেন ৪৫। তার জন্মদিনের কেক কাটা হলো মাঠেই। সংবাদকর্মীসহ আশেপাশের সবার শুভেচ্ছায় আপ্লুত তিনি। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানিয়ে দিলেন, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে যে ক্রিকেট উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ, সেই ঘরানাতেই সামনে ছুটবে দল।

সেই ঘরানা হলো ভয়ডরহীন ক্রিকেট। আগ্রাসী ক্রিকেট। চাপে পড়লে প্রতিপক্ষের ওপর সেই চাপ ফিরিয়ে দেওয়া। নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জ করেই পরিস্থিতিকে জয় করা।

বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকেই ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে খেলার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন তামিম। এই যুগে ব্যাটিং উইকেটে ৩৫০ রানের আশেপাশে স্কোর হচ্ছে হরহামেশাই। বাংলাদেশের দৃষ্টিও ছিল এরকম স্কোরে। প্রথম ম্যাচে পুরোপুর তা না পারলেও অনেকটুকুই পেরেছে দল। ওয়ানডেতে নিজেদের আগের সর্বোচ্চ ৩৩৩ ছাড়িয়ে এবার করেছে ৩৩৮।

এই স্কোরের ওজন আরও বেশি হয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতির কারণে। ৮১ রানের মধ্যে প্রথম ৩ ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ, রান রেট তখনও পাঁচের নিচে। সেখান থেকেই নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোরে পৌঁছে যায় দল। অভিষেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৮৫ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলেন তৌহিদ হৃদয়, দুর্দান্ত ফর্মের ধারা ধরে রেখে সাকিব আল হাসান করেন ৮৯ বলে ৯৩।

পরের ব্যাটসম্যানরাও সাঁতরে চলেন সেই স্রোতেই। সাম্প্রতিক সময়ে যার ফর্ম ও ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল, সেই মুশফিকুর রহিম ৬ বছরের বেশি সময় পর ৬ নম্বরে নেমে খেলে ২৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। প্রথম ৩০ ওভারে ১৫৫ রান তোলা দল শেষ ২০ ওভারে তোলে ১৮৩!

বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিতে নেয় ১৮৩ রানেই। সোমবার দ্বিতীয় ম্যাচে হাতছানি সিরিজ জয় নিশ্চিত। রোববার দলে প্রতিনিধি হয়ে হেরাথ বললেন, আগের ম্যাচের সুর ধরেই সিরিজ জয়ের ম্যাচে মাঠে নামবে দল।

“ (প্রথম ম্যাচে) দলের সবার পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। বিশেষ করে, যেভাবে আমরা শুরু করেছিলাম, কয়েকটি উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলাম, সেখান থেকে সাকিব ও হৃদয় যেভাবে ব্যাট করেছে, পরে মুশি (মুশফিকুর রহিম), এমনকি ইয়াসির আলিও যেভাবে ব্যাট করেছে, বিশেষ করে অভিজ্ঞরা যেভাবে ব্যাট করেছে, ওই আগ্রাসী মানসিকতা ছিল দারুণ।”

“আমরা এই ব্র্যান্ডের ক্রিকেটই এই মুহূর্তে খেলতে চাই। আমি নিশ্চিত, আগামীকালও আমরা এই ধরনটা ধরে রাখব।”

এই ব্র্যান্ডের ক্রিকেট পুরোপুরি রপ্ত করার পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গের কথাও বললেন হেরাথ। বিশ্বকাপে ভারতের নানা প্রান্তে উইকেট হতে পারে নানারকম। বাংলাদেশ সেই চ্যালেঞ্জের জন্যই নিজেদের তৈরি রাখতে চায়।

“আমরা উইকেটকে কোনো দায় দিতে চাই না। বিশ্বকাপের ভাবনা মাথায় রাখতে হবে আমাদের, আমরা জানি না কোন ধরনের উইকেট সেখানে পাব। যে কোনো ধরনের উইকেটের জন্যই প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের।”

“আমরা জানি না কোন ধরনের উইকেট পাব। তাই এই ধরনের উইকেট থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের। উইকেট ব্যাটসম্যানদের সহায়তা করতে পারে, পেসারদের সহায়তা করতে পারে। কিন্তু সব ধরনের উইকেটেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।”

দলের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি হেরাথের আলাদা তৃপ্তি আছে স্পিনারদের নিয়েও। প্রথম ম্যাচের উইকেট স্পিনারদের উপযোগী ছিল না খুব একটা। তার পরও নাসুম আহমেদ শিকার করেন ৩ উইকেট, ৪ ওভার বোলিংয়ে ১টি উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।

“অবশ্যই আমি আনন্দিত ও গর্বিত (স্পিনারদের পারফরম্যান্সে)। এই ধরনের চ্যালেঞ্জই প্রয়োজন হয়, যেখানে স্পিনারদের সহায়তা বেশি নেই, সেখানে কীভাবে আমরা সামাল দিতে পারি, ভালো বল করতে পারি। তারা যেভাবে উইকেট পড়তে পেরেছে এবং মানিয়ে নিয়েছে, আমি তাতে খুশি।”

“উইকেটে স্পিনারদের জন্য সহায়তা খুব একটা ছিল না। ওরা সেই উইকেটেই ভালো বল করেছে।”

তার ভালো লাগা শুধু স্পিনারদের নিয়েই নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের পেস আক্রমণের এগিয়ে চলা কাছ থেকেই দেখেছেন হেরাথ। এখন দলের পেস আক্রমণের যে শক্তি ও গভীরতা, তাতে মুগ্ধ স্পিন কোচও।

“পেসারদের পারফরম্যান্সে আমরা সবাই অনুপ্রাণিত। আমাদের ফাস্ট বোলিং ইউনিট এখন খুব ভালো। ব্যাটিং ইউনিট ও স্পিন উইকেট তো ভালোই, এখন পেস ইউনিটও ভালো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যই এটা ভালো।”

প্রথম ম্যাচে বিধ্বস্ত হওয়া আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় ম্যাচে চেষ্টা করবে ঘুরে দাঁড়াতে। তবে বাংলাদেশ নিজেদের পথে থেকেই জয়ের চেষ্টা করবে বলে জানালেন হেরাথ।

“প্রতিপক্ষ হিসেবে অবশ্যই তারা কোনো পরিকল্পনা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। তবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে যা আছে, তা হলো আমাদের পরিকল্পনা। আমরা সেটিইতেই অটুট থাকব।”