সারফারাজ খানের ছোট ভাই মুশির খান আলোড়ন তুলেছেন ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে।
Published : 16 Mar 2024, 11:03 AM
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ মাতিয়ে আসার পর ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে আলোড়ন তুলেছেন মুশির খান। তবে সামনেই আইপিএলে তাকে থাকতে হবে দর্শক হয়ে। তাতে অবশ্য আক্ষেপ নেই সারফারাজ খানের ছোট ভাই এই প্রতিভাবান ক্রিকেটারের। বরং বাবার চাওয়া অনুযায়ী ভারতের হয়ে টেস্ট খেলার জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে চান তিনি।
সারফারাজকে নিয়ে বাবা নাওশাদ খানের সংগ্রামের অধ্যায় সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত গল্পগুলোর একটি। অনেক প্রতীক্ষার পর সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় সারফারাজের। অভিষেক টেস্টে জোড়া ফিফটি করেন তিনি। তৃতীয় টেস্টে ফিফটি করেন আরেকটি।
শুধু সারফারাজই নয়, এই সময়টায় খান পরিবারের জন্য আনন্দের উপলক্ষ বয়ে আনেন মুশিরও। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ৬০ গড় ও ৯৮.০৯ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেন ৩৬০ রান, টুর্নামেন্টের যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেঞ্চুরি করেন দুটি। তার আগে এক আসরে দুটি সেঞ্চুরি করা একমাত্র ভারতীয় ব্যাটসম্যান ছিলেন শিখার ধাওয়ান, যেটি তিনি করেছিলেন সেই ২০০৪ আসরে।
যুব বিশ্বকাপ থেকে ফেরার পর মুশির যোগ দেন মুম্বাইয়ের রঞ্জি স্কোয়াডে। একাদশে অবশ্য সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল না তার। তবে শ্রেয়াস আইয়ার ও শিভাম দুবের চোট ও বড় ভাই সারফারাজ জাতীয় দলে থাকায় জায়গা ফাঁকা হয় কিছু। তাতেই সুযোগ মেলে মুশিরের। কোয়ার্টার-ফাইনালে বারোদার বিপক্ষে খেলতে নামেন তিনি, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যা ছিল তার চতুর্থ ম্যাচ।
সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিকে রূপ দেন ডাবল সেঞ্চুরিতে। সেমি-ফাইনালে তামিল নাড়ুর বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে আসে ফিফটি। এরপর ফাইনালে তো তিনিই মূলত গড়ে দেন ম্যাচের ভাগ্য। বিদার্ভার বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে উপহার দেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। পাশাপাশি বল হাতে দুটি উইকেট শিকার করেন তিনি।
রঞ্জির সফলতম দল মুম্বাই স্বাদ পায় ৪২তম শিরোপার। ১৯ বছর ১৬ দিন বয়সে ফাইনালে ম্যাচ সেরা হয়ে ইতিহাস গড়েন মুশির। রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে সর্বকনিষ্ঠ ম্যান অব দা ম্যাচ তিনিই। ২০১৬ সালে ২১ বছর ৮৩ দিন বয়সে ম্যাচ সেরা হয়ে আগের রেকর্ড ছিল শ্রেয়াস আইয়ারের।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬ ম্যাচে এখন তার ব্যাটিং গড় ৫৮.৭৭। বাঁহাতি স্পিনে উইকেট ৭টি।
প্রতিভার এমন ঝলক দেখে ভারতীয় ক্রিকেটে আলোচনা চলছে তিনি আইপিএলে না থাকায়। তবে সেসব খুব একটা স্পর্শ করছে না মুশিরকে। সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ বাবা যেভাবে সারফারাজকে তৈরি করেছেন টেস্ট ক্রিকেটের জন্য, মুশিরের হৃদয়েও সেভাবে গেঁথে দিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটকে।
এমন নয় যে তিনি আইপিএল খেলতে চান না। তরুণ এই ক্রিকেটার পিটিআইকে বললেন, এত তাড়া নেই তার।
“আমার নাম আইপিএলে নেই। কিন্তু আমি তাতে হতাশ নই। আমার বাবা আমাকে সবসময় বলেন টেস্ট ক্রিকেট খেলতে, দেশের হয়ে খেলতে। আইপিএলে খেলার সুযোগ আসবেই, আজ হোক বা কাল।”
“এটা বরং ভালো হয়েছে যে আইপিএলের জন্য আরও একটি বছর নিজেকে প্রস্তুত করার সময় পেয়েছি আমি। এতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কিভাবে খেলব এবং কিভাবে এই সংস্করণের জন্য প্রস্তুতি নেব, এসব আরও ভালো করে বুঝতে পারব আমি।”
মুশির বাঁহাতি স্পিনার হলেও ভাইয়ের মতোই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। দুজনের ব্যাটিংয়ে মিলও অনেক। সেসব নিয়ে অনেক ভিডিও আছে সামাজিকমাধ্যমে। দুই ভাইয়ের সম্পর্কও দারুণ। মুশির বললেন, বড় ভাইকে প্রেরণা মেনেই তিনি এগিয়ে চলেছেন।
“আমার ভাইয়ের যে নিবেদন এবং যেভাবে ব্যাট করেন, তাতে আমি দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হই। আমাদের ব্যাটিংয়ের ধরন একইরকমের।”
“(রঞ্জি ফাইনাল) ম্যাচের আগের তিনি আমাকে বলেছেন এটিকে সাধারণ ম্যাচ হিসেবেই ভাবতে এবং খুব বেশি চাপ না নিতে। মাঠের বাইরে থেকে এটাকে আর সব ম্যাচের মতো মনে হলেও মাঠে নামলে চাপ থাকেই। তিনি আমাকে বলেছেন নিজের স্কিলে আস্থা রাখতে হবে এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে।”