গতি আর সুইংয়ের মিশেলে আগুনে বোলিংয়ে ৫ উইকেট শিকার করেছেন এই ফাস্ট বোলার, পাকিস্তানি পেসারদের তোপে ৩৫ ওভারে গুটিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া।
Published : 08 Nov 2024, 01:09 PM
আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং নাড়িয়ে দিয়েও পাকিস্তানকে জেতাতে পারেননি হারিস রউফ। এবার আরও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে দলের জয়ের ভিত রচনা করে দিলেন তিনি। গতি আর সুইংয়ের মিশেলে তার আগুনে বোলিংয়ে পুড়ল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপ।
২২ গজে রউফের এমন বিধ্বংসী বোলিংয়ে উইকেটের পেছনে ভরসা হয়ে ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ছয়টি ক্যাচ নিয়ে পাকিস্তানের কিপার স্পর্শ করেছেন বিশ্বরেকর্ড।
উইকেটের সামনে-পেছনে এমন সংযোগে ভেঙে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপ। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শুক্রবার অ্যাডিলেইডে মাত্র ৩৫ ওভারেই ১৬৩ রানে গুটিয়ে গেছে পাকিস্তান। এই ম্যাচ জিতলে সিরিজে সমতা ফেরাতে পারবে রউফরা।
৮ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন রউফ। ওয়ানডেতে এই স্বাদ পেলেন তিনি পঞ্চমবার। গত বছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৮ রানে ৫ উইকেট তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
রউফের সঙ্গে এ দিন দারুণ বোলিং করে পাকিস্তানের চার পেসারের বোলিং আক্রমণ। তিন উইকেট শিকার করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, একটি করে নাসিম শাহ ও মোহাম্মদ হাসনাইন।
অ্যাডিলেইড ওভালের উইকেটে এ দিন ঘাসের ছোঁয়া ছিল বেশ। তবে উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হবে বলেই ধারাভাষ্যে বারবার উল্লেখ করছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মার্ক ওয়াহ, ডেভিড ওয়ার্নার, ওয়াসিম আকরামরা। বল সেখানে ব্যাটে এসেছে দারুণভাবে। তবে যথেষ্ট মুভমেন্ট ও বাউন্সও ছিল, যা কাজে লাগান পাকিস্তানি পেসাররা।
গতি বরাবরই রউফের বড় অস্ত্র। মুভমেন্ট সবসময় আদায় করতে সেভাবে পারেন না তিনি। লাইন-লেংথও এলোমেলো থাকে অনেক সময়। তবে এ দিন তিনি ছিলেন যেন নিজের সেরা চেহারায়।
রউফ আক্রমণে আসার আগেই অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ও ম্যাথু শর্টকে ফেরান আফ্রিদি। এরপর স্টিভেন স্মিথ ও জশ ইংলিসের জুটি গড়ার চেষ্টা থামান রউফ। ইংলিসকে ফেরান তিনি লেগ স্টাম্প ঘেঁষা গতিময় ডেলিভারিতে।
নিজের পরের ওভারে তিনি ফেরান মার্নাস লাবুশেনকে। আরেক প্রান্তে দারুণ খেলতে থাকা স্টিভেন স্মিথকে ৩৫ রানে বিদায় করেন হাসনাইন।
রউফ একে একে ফেরান অ্যারন হার্ডি ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। পরে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে আউট করে তিনি পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট।
অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ উইকেট শিকার করা পাকিস্তানের নবম বোলার রউফ। সবশেষ ২০১৭ সালে পাঁচ শিকার ধরেছিলেন হাসান আলি।
পাকিস্তানের হয়ে এই অভিজ্ঞতা প্রথম হয়েছিল একজন লেগ স্পিনারের। ১৯৮৪ সালে কিউ হিউজের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন কিংবদন্তি লেগ স্পিনার আব্দুল কাদিরের। পরে ওয়াসিম আকরাম, মুদাসসার নাজার, সাকলায়েন মুশতাক, আব্দুল রাজ্জাক, শোয়েব আখতার ও সোহেল খান পান এই স্বাদ। এর মধ্যে মুদাসসারের ৫ উইকেট ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, রাজ্জাক ও সোহেলের ভারতের বিপক্ষে। বাকি সবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
রউফের এই পাঁচ উইকেটের চারটিতেই ক্যাচ নেন রিজওয়ান। সঙ্গে আরও দুটি ক্যাচ মিলিয়ে তিনি স্পর্শ করেন বিশ্বরেকর্ড।
এক ওয়ানডেতে ছয় ডিসমিসালের সপ্তদশ নজির এটি। তবে পাকিস্তানের হয়ে আগে করতে পেরেছিলেন কেবল সারফারাজ আহমেদ।
অধিনায়ক হিসেবে ছয় ডিসমিসালের কৃতিত্ব ওয়ানডে ইতিহাসে আগে ছিল কেবল একজনেরই। ২০০০ সালে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেছিলেন ইংল্যান্ডের অ্যালেক স্টুয়ার্ট।
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট একাই ছয় ডিসমিসাল করেছেন ছয় ম্যাচে। একাধিকবার এটি করতে পেরেছেন আর কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক।
রিজওয়ান, সারফারাজ ও স্টুয়ার্ট ছাড়া একবার করে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার, ইংল্যান্ডের জস বাটলার ও ম্যাট প্রায়র, স্কটল্যান্ডের ম্যাথু স্কট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের রিডলি জ্যাকব্স ও ভারতের মাহেন্দ্র সিং ধোনির।
রেকর্ডটি শুধু নিজের করে নেওয়ার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন রিজওয়ান। কিন্তু নাসিম শাহর বলে অ্যাডাম জ্যাম্পার ক্যাচ ছেড়ে দেন তিনি।