প্রায় ১২ বছর পর বিপিএলে ফিফটি করলেন ও ম্যাচ-সেরা হলেন নাঈম ইসলাম, নতুন অধিনায়ক নিয়েও একগাদা ক্যাচ ছেড়ে রাজশাহীর বড় হার।
Published : 20 Jan 2025, 11:07 PM
বর্তমান কোচ শট টেইট আর সহকারী কোচ এনামুল হক জুনিয়র তখন চিটাগং কিংসের খেলোয়াড়। অধিনায়কের নাম ব্রেন্ডান টেইলর। বিপিএলের সেটি দ্বিতীয় আসর। সেই ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সবশেষ ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন নাঈম ইসলাম। একমাত্র ম্যাচ সেরার স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন সেই আসরে। অনেক পথ পেরিয়ে, বয়স ৩৮ ছাড়িয়ে বিপিএলে ভুলে যাওয়া জোড়া স্বাদ এক ম্যাচেই পেলেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
৪১ বলে ৫৬ রানের ইনিংসের পর বল হাতে তিন ওভারে ছয় রান দিয়ে দুই উইকেট। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে নাঈম দেখালেন হারিয়ে যাওয়া দিনের ঝলক। দুর্বার রাজশাহীকে ১১১ রানে উড়িয়ে জয়ে ফিরল চিটাগং কিংস।
নাঈম, গ্রাহাম ক্লার্ক, মোহাম্মদ মিঠুনদের ব্যাটিংয়ের জন্য চিটাগংকে বড় স্কোরের সুযোগ করে দেয় রাজশাহীর ফিল্ডাররা। একের পর এক ক্যাচ ফেলেন না। পরে বড় রান তাড়ায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে রাজশাহীর ইনিংস।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সোমবার ২০ ওভারে চিটাগং তোলে ১৯১ রান। রাজশাহীর ইনিংস শেষ মাত্র ৮০ রানে।
ঘরের মাঠে টানা দুই ম্যাচ হারার পর আবার জয় পেল চিটাগং। আট ম্যাচে পঞ্চম জয়ে প্লে অফ খেলার পথে আরেকটু এগিয়ে গেল তারা। ৯ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে রাজশাহীর অবস্থান পঞ্চম।
রাজশাহীর অধিনায়ক বদল
ম্যাচের ঘণ্টাদুয়েক আগে অধিনায়ক পরিবর্তনের খবর জানায় রাজশাহী। আগের ম্যাচে দলকে জেতাতে না পারায় আবেগে ভেঙে পড়ার কারণ দেখিয়ে এনামুল হককে সরিয়ে তাসকিন আহমেদকে দায়িত্ব দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
ফিরেই দ্বিতীয় জীবন নাইমের, ফের ব্যর্থ উসমান
অধিনায়কত্ব পেয়ে বল হাতে প্রথম ওভারেই সুযোগ তৈরি করেন তাসকিন। কিন্তু নাঈমের ক্যাচ ছেড়ে দেন সানজামুল ইসলাম। একাদশে ফেরার ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই বেঁচে যান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
তবে পরের ওভারে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি উসমান খানের। জিসান আলমের বলে আউট হন তিনি সাত রানে।
টানা তিনটি পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস খেলার পর চার ম্যাচে রান নেই উসমানের ব্যাটে।
ক্লার্ক-নাঈমের জুটি
জীবন পেয়ে কাজে লাগাতে ভুল করেননি নাঈম। অভিজ্ঞতার সবটুকু ঢেলে দিয়ে ফিফটি করেন তিনি ৩৬ বলে।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে জিসানের বলে পরপর দুটি ছক্কা মারেন নাঈম। দুই ওভার পর সানজামুল ইসলামকে চার মারার পর ওড়ান ছক্কায়।
প্রায় সাড়ে চার বছর পর স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা ক্যারিবিয়ান পেসার মিগেল কামিন্স বিপিএল অভিষেকে প্রথম বলেই করেন বিশাল ওয়াইড। ওই ওভারে তাকে দুটি ছক্কা মারেন গ্রাহাম ক্লার্ক।
রান আউটে ভাঙে নাঈমের সঙ্গে ক্লার্কের ৫১ বলে ৮৪ রানের জুটি। সেঞ্চুরির পর দুই ম্যাচ নিষ্প্রভ থাকা ক্লার্ক এদিন ২ চার ও ৩ ছক্কায় খেলেন ২৮ বলে ৪৫ রানের ইনিংস।
মিঠুন-হায়দারের ব্যাটে চিটাগংয়ের দুইশ
শুরুতে নাঈমকে জীবন দেওয়ার পর ত্রয়োদশ ওভারে মোহাম্মদ মিঠুনের ক্যাচ ছাড়ে রাজশাহী। ৬ রানে বেঁচে যান চিটাগং অধিনায়ক। এক ওভার পর রায়ান বার্লের বলে আবার জীবন পান মিঠুন। ১৮ রানে তার ক্যাচ ছাড়েন জিসান।
২০১৩ বিপিএলে চিটাগং কিংসের হয়েই ছয় ম্যাচের মধ্যে তিনটি ফিফটি করেছিলেন তিনি। বিপিএল ক্যারিয়ারে আর কোনো ফিফটি ছিল না তার। সেই খরা এবার কাটালেন পুরোনো দলের হয়েই।
পাঁচটি চার ও তিন ছক্কার ইনিংস খেলা নাঈমের ইনিংন থামান সানজামুল।
এরপর হায়দারের সঙ্গে মিলে দলকে এগিয়ে নেন মিঠুন। ২টি করে চার-ছক্কায় ২০ বলে ৩২ রান করেন চিটাগং অধিনায়ক।
পাঁচ নম্বরে নামা হায়দার আলির ব্যাট থেকে আসে ১৪ বলে ২৫ রান। ১৯তম ওভারে লং অফে তাসকিনের বলে তার ক্যাচ ছাড়েন বার্ল। ওই ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টায় চোট পান জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার। যে কারণে পরে আর ব্যাটিংয়েও নামা হয়নি তার।
নতুন দায়িত্বেও চেনা তাসকিন
অধিনায়কত্বের ভার নিয়েও বলের ধার কমেনি তাসকিনের। সতীর্থদের বাজে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের দিনও বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন তিনি। দুইটি সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পরও ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রানে শিকার করেন ২ উইকেট।
৯ ম্যাচে এখনও পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ ২০ উইকেট তার।
রাজশাহীর তাসের ঘর
আগের ম্যাচে ২১০ রানের লক্ষ্যে সমানে-সমান লড়াই করা রাজশাহীর এদিনের ব্যাটিং পুরোপুরি বিপরীত। শুরু থেকে একবারও মনে হয়নি ম্যাচটি জিততে পারে তারা। নিয়মিত উইকেট হারিয়ে মোটে ১৪.২ ওভার টেকে তাদের ইনিংস।
অথচ প্রথম ওভারে বিনুরা ফার্নান্দোর টানা দুই বলে মিড অনে মোহাম্মদ হারিসের দুটি ক্যাচ ছাড়েন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি আগের আট ম্যাচেও ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান।
পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারায় রাজশাহী। এরপর আর ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো আশাও জাগাতে পারেনি তারা।
তিন নম্বরে নেমে দলের সর্বোচ্চ ২১ রান করেন অধিনায়কত্ব হারানো এনামুল। এছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন শুধু আকবর (১৩ বলে ১০)।
চিটাগং কিংস: ২০ ওভারে ১৯১/৮ (নাঈম ৫৬, উসমান ৭, ক্লার্ক ৪৫, মিঠুন ৩২, হায়দার ২৫, শামীম ৫, রাহাতুল ১৬, খালেদ ০*, শরিফুল ১*; তাসকিন ৪-০-২৩-২, জিসান ৩-০-৩২-১, সানজামুল ৪-০-২৬-১, কামিন্স ২-০-৩২-০, ডেয়াল ১-০-১৩-০, মোহর ৪-০-৪৬-২, বার্ল ২-০-১৮-০)
দুর্বার রাজশাহী: ১৪.২ ওভারে ৮০ (হারিস ৯, জিসান ৪, এনামুল ২১, ইয়াসির ৫, আকবর ১০, ডেয়াল ৬, সানজামুল ৭, তাসকিন ৩, কামিন্স ৮*, মোহর ১, বার্ল আহত অনুপস্থিত; ফার্নান্দো ২-০-১৯-১, সানি ২-০-১১-১, শরিফুল ২-০-১০-২, খালেদ ২-০-৯-১, রাহাতুল ১.২-০-১৫-১, নাঈম ৩-০-৬-২, শামীম ২-০-৮-১)
ফল: চিটাগং কিংস ১১১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাঈম ইসলাম