বিশ্বকাপ ফাইনালে জয়ের পর চোখের পানি ঝরিয়ে হার্দিক পান্ডিয়া বললেন, পরিশ্রম ও পারফরম্যান্স দিয়ে অন্যায়ের জবাব দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি।
Published : 30 Jun 2024, 03:37 PM
সতীর্থরা যখন হাসির জোয়ারে ভাসছেন, হার্দিক পান্ডিয়ার গাল বেয়ে তখন নামছে ফোটা ফোটা জল। অশ্রুসজল চোখেই তিনি ঘুরে বেড়ালেন মাঠময়। শামিল হলেন সতীর্থদের উদযাপনে। তার ঠোটে হাসির রেখা তেমন একটা দেখা গেল না। সুখের কান্নার দিনে মুখের হাসি হয়তো জরুরি নয়!
এক পর্যায়ে তার দিকে এগিয়ে গেলেন রোহিত শার্মা। ভারতীয় অধিনায়ক কোলে তুলে নিলেন এই অলরাউন্ডারকে। একটু পর পরম মমতায় পান্ডিয়ার গালে হাত দিয়ে কিছু একটা বললেন তিনি। কে বলবে, এই দুজনের সম্পর্কের অবনতি কিংবা শীতলতা নিয়ে কিছুদিন আগেও কত আলোচনার ঝড় উঠেছে ভারতীয় ক্রিকেটে!
গুজরাট টাইটান্স ছেড়ে নাটকীয় এক পালাবদলে পুরোনো দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে ফেরেন পান্ডিয়া। ভারতীয় ক্রিকেট তুফান ওঠে কদিন পর, যখন আইপিএলের সফলতম অধিনায়ক রোহিতকে সরিয়ে মুম্বাইয়ের অধিনায়ক করা হয় পান্ডিয়াকে।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সমর্থকদের বড় একটা অংশ এটা মেনে নিতে পারেননি। ভারতীয় ক্রিকেটে আরও নেক সমর্থকও। কাঠগড়ায় তোলা হয় পান্ডিয়াকে। রীতিমতো খলনায়ক হয়ে ওঠেন যেন এই অলরাউন্ডার। সংবাদমাধ্যম, বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে আমজনতা, সবাই পান্ডিয়াকে ধুয়ে দিতে থাকেন দিনের পর দিন। নেতৃত্বকে ঘিরেই রোহিতের সঙ্গে তার চরম দ্বন্দ্বের খবরও বাজার পেয়ে যায়। এমন প্রবল চাপে তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও হারিয়ে যায়।
এসবের সঙ্গে যোগ হয় তার দাম্পত্য জীবন ভেঙে যাওয়ার জোরাল গুঞ্জন। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স হারতে থাকে ম্যাচের পর ম্যাচ। সব মিলিয়ে পান্ডিয়ার জীবন হয়ে ওঠে নরকসম।
সেই পান্ডিয়া এখন যেন সপ্তম স্বর্গে! বিশ্বকাপের ফাইনালের মোড় ঘুড়িয়ে দেওয়ার নায়ক তিনি। হাইনরিখ ক্লসেনকে ফিরিয়ে তিনিই ভারতকে ফেরান ম্যাচে। শেষ ওভারে ডেভিড মিলারকে বিদায় করে দূর করে দেন শেষ বাধা। আইপিএলের সময় সামাজিক মাধ্যমে তুমুল ট্রল ও গালিগালাজের শিকার হওয়া ক্রিকেটার, প্রবল সমালোচনা হাবুডুবু খেতে থাকা সেই ক্রিকেটারই এখন গোটা দলের ও দেশের মধ্যমণি।
দুঃসময় সময়টায় এসব বিতর্ক নিয়ে খুব একটা কথা বলেননি তিনি। বিশ্বকাপ ফাইনাল জয়ের পর তার কান্নায় যেন অনেক জবাব দেওয়া হয়ে গেল। সেই অভিমান আর এই প্রাপ্তির মেলবন্ধন ফুঠে উঠল এবার তার কণ্ঠেও।
“আমার জন্য এটা আরও বেশি স্পেশাল। গত ছয় মাস যেমন ছিল… একটি শব্দও উচ্চারণ না করে শোভন থাকার চেষ্টা করেছি আমি। অনেক কিছুই অন্যায় হয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করেছি, কঠোর পরিশ্রম করে যেতে থাকলে উজ্জ্বল হয়েই উঠব এবং যা সবসময় করেছি, তা করতে পারব। এটিই বলে দিচ্ছে সবকিছু।”
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে তার ঝড়ো ফিফটিতেই শেষ দিকে দ্রুত রান তুলেছিল ভারত। কিন্তু সেটি যথেষ্ট হয়নি। ইংল্যান্ডের কাছে স্রেফ উড়ে যায় তারা। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালেও সেই অসহনীয়য় হারের স্বাক্ষী তিনি।
অনেক হতাশার প্রহর পেরিয়ে অবশেষে শিরোপায় সিক্ত হয়ে তিনি আপ্লুত। ফাইনালে নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনের কারিগরদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি।
“এই জয়ের মাহাত্ম্য অনেক। খুবই আবেগময় অর্জন। আমরা কঠোর পরিশ্রম করছিলাম। কিন্তু কিছু একটা কাজ করছিল না। তবে আজকে সেই দিন, যেদিন গোটা জাতির প্রত্যাশা পূরণ হলো। এত এত লোকে সমর্থন করেছে…।”
“আমরা সবসময়ই বিশ্বাস করেছি, আমরা পারব। ব্যাপারটি ছিল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা, ধীরস্থির থাকা ও চাপ তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়ার। শেষ চার-পাঁচ ওভারে যারা বোলিং করেছে, জাসি (জাসপ্রিত বুমরাহ) ও তাদেরকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। এটাই সব বদলে দিয়েছে।”
ওই শেষ চার ওভারের দুটি করেছেন তিনি নিজেই। এমন চাপের সময়ে বোলিং করার অভিজ্ঞতা তার নতুন নয়। অতীতের অভিজ্ঞতা এবার কাজে লেগেছে বলেই জানালেন তিনি।
“আমার জন্য ব্যাপারটি ছিল নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের। প্রতিটি ডেলিভারিতেই নিজের শতভাগ দেওয়ার। আগেও এই ধরনের পরিস্থিতিতে ছিলাম, ম্যাচ জিতেছি। চাপের মুহূর্তে সবসময়ই উপভোগ করেছি। সব মিলিয়ে দারুণ।”