বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ
জ্যামাইকা টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশ দ্রুত দুটি উইকেট হারানোর পর তিনটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
Published : 01 Dec 2024, 08:48 AM
কিমার রোচের বলে যখন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন মুমিনুল হক, ধারাভাষ্যকার বললেন, “এই দলের বিপক্ষে উইকেট শিকার করায় সে আসক্ত…।” আদতেই তা-ই। সেই ২০০৯ সালে মূল ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে তার অভিষেক। সেই সিরিজেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়ে দুই টেস্টে শিকার করেছিলেন ১৩ উইকেট। এবার মুমিনুলের উইকেট নিয়ে দারুণ এক মাইলফলক তার পূর্ণ হলো। প্রথম পেসার হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫০ টেস্ট উইকেট শিকারি তিনিই।
বাংলাদেশ তখন ১০ রানেই হারিয়ে ফেলেছে ২ উইকেট। কিন্তু এরপর খেলা হলো আরও ২৩ ওভারের বেশি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেট নিতে পারল না আর একটিও। সুযোগ যদিও এসেছিল। কিন্তু তিন-তিনটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন ক্যারিবিয়ান ফিল্ডাররা। মাঠ ভেজা থাকায় জ্যামাইকা টেস্টের প্রথম দিনে শনিবার খেলা হয়েছে ৩০ ওভার। বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৬৯।
দুই দফায় জীবন পেয়ে সাদমান ইসলাম অপরাজিত ১০০ বলে ৫০ রানে। একবার জীবন পেয়ে শাহাদাত হোসেন দিন শেষ করেন ৬৩ বলে ১২ রানে।
তিনটি সুযোগের একটি নিতে পারলেও দিনের চিত্র ভিন্ন হতো। তবু দিন শেষে সন্তুষ্টির কথাই বললেন কিমার রোচ।
“আগের দিনই আমরা আলোচনা করেছিলাম, ওদের বিপক্ষে কোথায় বল রাখতে চাই। আমরা চেষ্টা করেছি ওদেরকে সামনের পায়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে। চেষ্টা করেছি অফ স্টাম্পের আশেপাশে ওদের পরীক্ষা নিতে। পার্শ্বীয় মুভমেন্ট ছিল, যা কাজালে লাগাতে চেষ্টা করেছি।”
“উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো। কাজেই আমাদের জন্য জরুরি ছিল ধারাবাহিক থাকা। লম্বা সময় কেউ চ্যানেলে বল করে গেলে পুরস্কার মিলবেই। সব মিলিয়ে দিনটা মোটামুটি সমানে সমান বলা যায়, তবে দুটি উইকেট নিতে পেরে আমরা খুশি।”
উইকেট যে ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো, টসের সময় তা বলেন মেহেদী হাসান মিরাজও। এজন্যই টস জিতে ব্যাটিং নেন তিনি। যদিও ম্যাচের আগের দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট যা বলেছিলেন, তাতে ধারণা করা হচ্ছিল, পেস-সহায়ক উইকেট হয়তো অপেক্ষায়। ম্যাচের দিন দেখা গেল, উইকেটে একপাশে ঘাসের আচ্ছাদন কিছু আছে, আরেকপাশে আছে বিচ্ছিন্ন ঘাসের ছোঁয়া। মুভমেন্ট কিছু যদিও আছে। তবে খুব ভয়ঙ্কর কিছু নয়।
বাংলাদেশের শুরুটায় যদিও ছিল বিপর্যয়ের ইঙ্গিত। আবারও অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হন মাহমুদুল হাসান জয় (৩)। উইকেটের পেছনে ভালো ক্যাচ নেন জশুয়া দা সিলভা।
জয়কে ফেরানোর পরের ওভারে মুমিনুলকে ফিরিয়ে ৫০ পূর্ণ করেন রোচ। অফ স্টাম্পের হালকা বাইরে পিচ করে একটু বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট পেতে দিয়ে মুমিনুল ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে।
সবশেষ ছয় ইনিংসে এই নিয়ে তিনবার শূন্য রানে আউট হলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সাত টেস্টে শূন্যতে ফিরলেন চারবার।
বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি শূন্যের রেকর্ডও এখন তার। ১৭ বার শূন্যতে আউট হয়ে তিনি ছাড়িয়ে গেলেন মোহাম্মদ আশরাফুলকে (১৬)।
বাংলাদেশের অবস্থা আরও নাজুক হতে পারত, যদি ক্যাচগুলি না পড়ত। জাকির হাসানের বদলে একাদশে ফেরা সাদমান ১৫ রানে রক্ষা পান স্লিপে। পরে জীবন পান ৩৫ রানে, শর্ট কাভারে ক্যাচ ছেড়ে দেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট।
এই টেস্ট দিয়েই স্যার গ্যারি সোবার্সকে ছাড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টানা সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার (৮৬টি) কীর্তি গড়লেন ব্র্যাথওয়েট। কিন্তু দিনটিতে তেমন প্রভাব রাখতে পারলেন না তিনি।
দুই জীবনের ফাঁকে ভালো কয়েকটি শট খেলেন সাদমান। অনিয়মিত স্পিনার কাভেম হজকে একটি ছক্কাও মারেন তিনি। তার ২০ টেস্টের ক্যারিয়ারের প্রথম ছক্কা যেটি।
শাহাদাত স্লিপেই জীবন পান ৮ রানে। উইকেটে তার পুরো সময়ের উপস্থিতি ছিল অস্বস্তিময়। একটি বাউন্ডারি পেয়েছেন ব্যাটের কানায় লেগে।
তবে শেষ পর্যন্ত সাদমান ও শাহাদাত টিকে গেছেন, এটাই বাংলাদেশের স্বস্তি।