আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা রায়ান রিকেলটন বললেন, দুরু দুরু মন নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তিনি।
Published : 22 Feb 2025, 11:24 AM
২৫৯ রানের ম্যারাথন ইনিংসটির স্মৃতি এখনও তরতাজা। ছোট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আরও কিছু ভালো পারফরম্যান্স আছে। নিজের ছাপ রেখেছেন রায়ান রিকেলটন। তার পরও আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুক্রবার মাঠে নামার সময় তার মনটা ছিল দুরু দুরু। ক্যারিয়ারের প্রথম আইসিসি টুর্নামেন্ট বলে কথা!
রিকেলটনের ব্যাটিং দেখে অবশ্য বোঝা যায়নি তার ভেতরে অবস্থা। বরং ২২ গজে ছুটেছেন তিনি সাবলিল ছন্দে। আফগানদের বৈচিত্রময় বোলিং আক্রমণের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে ম্যাচের আগে আলোচনা ছিল অনেক। সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দারুণভাবে দেওয়ায় বড় ভূমিকা রিকেলটনের।
তার ১০৩ রানের ইনিংস ও অন্য তিন ব্যাটারের ফিফটিতে ৩১৫ রানের পুঁজি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। আফগানিস্তান পারেনি ধারেকাছ যেতেও।
ম্যাচের প্রথম ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করেন রিকেলটন। খুব ঝড়ো ব্যাটিং তিনি করেননি। তবে রানের গতি ঠিকই সচল রাখেন। ফিফটি করেন ৪৮ বলে। একই গতিতে ছুটে শতরানে পা রাখেন ১০১ বলে।
সাত ম্যাচের ছোট্ট ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি এটি। গত অক্টোবরে আবু ধাবিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯১ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। এবার সেই আক্ষেপ রাখেননি। আইসিসি টুর্নামেন্টে অভিষেকেই পেলেন তিন অঙ্কের ছোঁয়া।
তবে ম্যাচের পর তিনি বললেন, ম্যাচের আগে স্নায়ুর চাপ অনুভব করছিলেন ভালোভাবেই।
“এই অনুভূতি একটু ভিন্ন। এই ম্যাচে নামার আগে বেশ নার্ভাস ছিলাম। আমার প্রথম যথাযথ আইসিসি ইভেন্ট এটি! প্রথম ম্যাচেই দলে অবদান রাখতে পেরে এবং দলে জয়ের ভিত গড়ে দিতে পেরে আমি উচ্ছ্বসিত।”
“আমাদের হয়ে হয়েছিল, উইকেট একটু চিটচিটে হতে পারে। তবে ক্রিজে নেমে দেখলাম, খুব একটা খারাপ নয় আচরণ। বাউন্স কিছুটা অসমান ছিল বটে, তবে এটুকু মানিয়ে তো নিতেই হয়। আমার মনে হয়, আমাদের যা ছিল, সবকিছু নিয়েই দারুণ খেলে লড়িয়ে একটা স্কোর গড়তে পেরেছি আমরা।”
একসময় চুটিয়ে রাগবি খেলেছেন তিনি। স্কোয়াশে খেলেছেন প্রাদেশিক পর্যায়ে। ভারত্তোলনে অনূধর্ব-১৪ পর্যায়ে প্রাদেশিক রেকর্ড ছিল তার। তবে শেষ পর্যন্ত থিতু হয়েছেন ক্রিকেটে। ২০১২ সালে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ষসেরা ক্রিকেটার হন অনূর্ধ্ব-১৫ পর্যায়ে। কিন্তু এরপর কিছুটা পথ হারিয়ে জায়গা করে নিতে পারেননি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে জায়গা পাকা করে নিতেও লড়েছেন বেশ।
পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে সব সংস্করণ রাঙিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে। এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পায়ের তলায় জমিন শক্ত করার চেষ্টা করছেন। গত কিছুদিনে তার ব্যাট আলো ছড়িয়েছে সব সংস্করণেই। গত মাসে কেপ টাউন টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ ঘণ্টার বেশি ক্রিজে থেকে ৩৪৩ বল খেলে ২৫৯ রানের ইনিংস উপহার দেন। ডিসেম্বরে টেস্ট সেঞ্চুরি স্বাদ পান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এখনও পর্যন্ত ১৩টি। খুব দারুণ কিছু এখনও করতে পারেননি। তবে এর মধ্যে ৭৬ রানের একটি ইনিংস খেলে সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন। এবারের এসএ টোয়েন্টিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান ছিল তার। এক ম্যাচে খেলেন ৩৯ বলে ৮৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস।
এবার ওয়ানডেতেও পেলেন শতরানের স্বাদ। ম্যাচ-সেরা হয়ে ২৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান বললেন, তিন সংস্করণেই দলের ভরসা হয়ে উঠতে চান তিনি।
“ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে নিজের ব্যাটিংকে আমি যতটা সম্ভব সরলীকরণ করার চেষ্টা করছি। আমার ব্যাটিংয়ের ভিত বেশ ভালো এবং বরাবরই আমার চাওয়া তিন সংস্করণের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা। কাজেই ভিত শক্ত থাকাটা আমার জন্য জরুরি ছিল।”
“গত দুই মাসে তিন সংস্করণেই ভালো করতে পারা নিজের জন্য বেশ প্রেরণাদায়ী। নিজের জন্যও যখন ব্যাপারটাকে একটু সহজভাবে ভাবি, আমার চেষ্টা থাকে মূলত মানসিকতা ও অ্যাপ্রোচে জোর দেওয়ার।”
ওয়ানডে দলে এখন ইনিংস ওপেন করার পাশাপাশি কিপিংও করছেন রিকেলটন। আফগানদের বিপক্ষে যদিও কিপিংয়ে কিছু ঘাটতি তার ছিল। তবে এই দ্বৈত ভূমিকা চালিয়ে যেতেই তিনি প্রত্যয়ী।
“ছেলেবেলা থেকেই এটা করতে আসছি। এটায় আমি দারুণ গর্ব খুঁজে নেই। অবশ্যই গ্লাভস হাতে আমার সেরা ম্যাচ ছিল না। তবে ভুল থেকে শিখব।”