৪ বছর পর সৌম্যর সেঞ্চুরি, ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষের নায়ক মাহমুদউল্লাহ

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে জয় পেয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 01:46 PM
Updated : 13 May 2023, 01:46 PM

৬ বলে প্রয়োজন ১৩ রান। চিরাগ জানির ওভারের দ্বিতীয় বল স্কুপ করে চার মারলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পরের বল লং অন দিয়ে ওড়ালেন ছক্কায়। এক বল পর ফুল টসে থার্ড ম্যান দিয়ে চার মেরে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে দারুণ এক জয় এনে দিলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। 

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে সৌম্য সরকারের দারুণ সেঞ্চুরি ও মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে মোহামেডান। রূপগঞ্জের করা ২৯৮ রান এক বল বাকি থাকতে টপকে গেছে তারা।

দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এ দিন নিজের সেরা সময়কে মনে করিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। দারুণ দক্ষতায় মিলিয়েছেন দুই ওভারে ২৯ রানের সমীকরণ। ৪৯তম ওভারে ২ ছক্কায় ১৬ রান নেওয়ার পর শেষ ওভারে নিয়েছেন বাকিটা। ৪২ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৬১ রান করে জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো ফিনিশিংয়ের আগে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেঞ্চুরি করেন সৌম্য। ১১২ বলে খেলেন ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ১০২ রানের ইনিংস। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে চার বছরের বেশি সময় পর তিন অঙ্কের দেখা পেলেন সৌম্য। 

এর আগে সবশেষ ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচেই আবাহনী লিমিটেডের হয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ২০৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ৫৫ ইনিংসে আবার করলেন সেঞ্চুরি।

এই জয়ে ১৫ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে থেকে লিগ শেষ করল মোহামেডান। তাদের চেয়ে এক পয়েন্ট বেশি নিয়ে চতুর্থ রূপগঞ্জ।

রান তাড়ায় সৌম্যর সেঞ্চুরি ও রুবেল মিয়ার ফিফটিতে উড়ন্ত সূচনা পায় মোহামেডান। দুই ওপেনার মিলে গড়েন ১৮১ রানের জুটি। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৯০ বলে ৮৭ রান করে ফেরেন ৩০ বছর বয়সী রুবেল। 

রুবেল ফেরার পর মুক্তার আলির বলে পুল করে বাউন্ডারিতে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন সৌম্য। হেলমেট খুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে যেন স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেন তিনি। 

সেঞ্চুরির পর অবশ্য আর এগোতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে পুল করে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ মিড উইকেটে। 

সব মিলিয়ে এবারের লিগটা খুব একটা ভালো যায়নি সৌম্যর। শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরির পরও ১১ ইনিংসে স্রেফ ২৬.৬৪ ইনিংসে তার সংগ্রহ ২৯৩ রান। পঞ্চাশ ছুঁতে পেরেছেন আর মাত্র একটি ম্যাচে। 

সৌম্যর বিদায়ের পরের ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। চতুর্থ উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ ও ইমরুল কায়েসের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করা আরিফুল হক। 

৪৫তম ওভারে তিন বলের মধ্যে আরিফুল ও শুভাগত হোমকে আউট করে রূপগঞ্জের জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেন মুক্তার। শেষ পর্যন্ত যা হতে দেননি মাহমুদউল্লাহ। 

আব্দুল মজিদের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে স্রেফ ২৬ বলে তিনি যোগ করেন ৪২ রান। যেখানে মজিদের অবদান ১৪ রান। জয়ের জন্য ১৩ বাকি থাকতে মজিদ রানআউটে কাটা পড়েন। তবে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। 

দিনের প্রথম ভাগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রূপগঞ্জকে তিনশ ছুঁইছুঁই স্কোর এনে দেন সাব্বির রহমান ও ইরফান শুক্কুর। 

চলতি লিগে নিজের চতুর্থ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ৮২ রান করেন সাব্বির। তিন নম্বরে নেমে ৯০ বলের ইনিংসটি সাজান ৯ চার ও ১ ছক্কায়। সব মিলিয়ে ১৪ ম্যাচে ৪২.২৩ গড়ে তার সংগ্রহ ৫৪৯ রান।

আগের ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম লিস্ট 'এ' সেঞ্চুরি করা ইরফান এদিন খেলেন ৭৮ রানের অপরাজিত ইনিংস। ৭৩ বলে ৫ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন তিনি। ১৫ ইনিংসে ৭ ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭০৩ রান। 

পুরো আসরে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখানো চিরাগ জানির ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান। পরে বল হাতে তিনি নেন ১টি উইকেট। 

সব মিলিয়ে ১৫ ইনিংসে ৭ ফিফটিতে ৬৬৯ রান ও বল হাতে ২৪ উইকেট নিয়ে ভারতীয় এই অলরাউন্ডার জিতেছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ২৯৮/৭ (ফারদিন ৪৪, পারভেজ ২৪, সাব্বির ৮২, ইরফান ৭৮*, চিরাগ ৩৩, মাশরাফি ৬, সোহাগ ৪, মুক্তার ৪; মাহমুদউল্লাহ ৭.৪-১-৪৬-০, শুভাগত ১০-০-৪৮-১, আবু জায়েদ ১০-০-৬৬-৩, নাজমুল ৯.২-০-৩৫-০, রুয়েল ৫-০-৩৯-২, এনামুল ৮-০-৫৩-১)

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৯.৫ ওভারে ৩০০/৬ (সৌম্য ১০২, রুবেল ৮৭, মাহিদুল ৭, আরিফুল ২১, মাহমুদউল্লাহ ৬১*, শুভাগত ০, মজিদ ১৪, আবু জায়েদ ০*; জাওয়াদ ১০-০-৩৮-০, চিরাগ ৯.৫-১-৬২-১, সোহাগ ৬-০-৪৫-০, মাশরাফি ৯-০-৪৮-১, অনুপ ৭-১-৪৩-১, মুক্তার ৮-০-৬৪-২)

ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

কাশিফ ভাট্টির ঘূর্ণিতে শেষ ম্যাচে জিতল প্রাইম ব্যাংক

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে অনায়াস জয়ে আসর শেষ করেছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। 

ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে তাদের জয় ৭৩ রানে। ২৫৩ রানের লক্ষ্য দিয়ে গাজী গ্রুপকে ১৭৯ রানে আটকে দিয়েছে প্রাইম ব্যাংক।

এই জয়ে ১৫ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে লিগে তৃতীয় হলো প্রাইম ব্যাংক। ১৫ পয়েন্ট পাওয়া গাজী গ্রুপের অবস্থান ষষ্ঠ। 

প্রাইম ব্যাংকের জয়ে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখান কাশিফ ভাট্টি। ব্যাট হাতে ২৭ রানের পর বোলিংয়ে নেন ৪ উইকেট। তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। 

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দলের স্কোর আড়াইশ পার করতে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ মিঠুন। এছাড়া জাকির হাসান ৪৩, শাহাদাত হোসেন ২৭, নাসির হোসেন করেন ২১ রান। 

সুমন খান নেন ৪৫ রানে ৪ উইকেট।

রান তাড়ায় গাজী গ্রুপের পক্ষে ভালো কিছু করতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যান। সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন ফরহাদ হোসেন ও মোহাম্মদ এনামুল। আসাদুল্লা আল গালিব করেন ২৬ রান। 

কাশিফের ৪ উইকেট ছাড়া অলক কাপালি ও রুবেল হোসেন ধরেন ২টি করে শিকার।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫২/৯ (শাহাদাত ২৭, জাকির ৪৩, মিঠুন ৫৭, প্রান্তিক ১৫, নাসির ২১, আলআমিন ১৯, শেখ মেহেদি ১১, অলক ১৭, কাশিফ ২৭, রাজা ২*, রুবেল ১*; এনামুল ১০-০-৩২-১, টিপু ১০-১-৪০-২, সুমন ১০-০-৪৫-৪, নিহাদুজ্জামান ১০-০-৫৯-০, আসাদুল্লা ৭-০-৪২-১, মেহেরব ৩-০-২৬-১)

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৩.১ ওভারে ১৭৯ (মেহেদি ১২, হাবিবুর ০, ফরহাদ ৩১, আসাদুল্লা ২৬, আকবর ১৬, জুবারুল ১৩, এনামুল ৩১, সুমন ৫, নিহাদুজ্জামান ৯, টিপু ৮; কাশিফ ১০-০-৪১-৪, শেখ মেহেদি ১০-০-৪৭-০, রুবেল ৫-০-২৩-২, নাসির ৯-০-৩৭-২, রাজা ৩-০-১৩-০, অলক ৬.১-১-১৬-২)

ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৭৩ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: কাশিফ ভাট্টি