আইপিএলে শেষ ওভারে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে দলকে জিতিয়েছেন রাশিদ, তবে বল হাতে ছন্দ ফিরে পাওয়াতেই বেশি খুশি আফগান তারকা।
Published : 11 Apr 2024, 01:24 PM
ব্যাটিং সাফল্যের রেশ তখনও তরতাজা। শেষ ওভারে তিন বাউন্ডারি, শেষ বলে বাউন্ডারিতে রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার ম্যাচে দলকে জিতিয়েছেন রাশিদ খান। তবে ম্যাচের পর গুজরাট টাইটান্সের আফগান তারকা বললেন, বল হাতে আপন ছন্দে ফিরতে পারার খুশিই তার কাছে বেশি।
আইপিএল বুধবার রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে যখন ব্যাট হাতে মাঠে নামেন রাশিদ, জয়ের জন্য গুজরাটের লাগে তখন ১৫ বলে ৪০ রান। পরে শেষ ওভারে সেই সমীকরণ নেমে আসে ১৫ রানে। আভেশ খানের করা ওভারের প্রথম তিন বলে দুটি বাউন্ডারি মেরে দেন রাশিদ, মাঝের বলটি থেকে আসে দুই রান।
তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নেন তিনি। পরের বলে তৃতীয় রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান রাহুল তেওয়াতিয়া। শেষ বলে প্রয়োজন পড়ে দুই রানের। আভেশ খুব ভালো ডেলিভারি করতে পারেননি। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে লেংথ বল করেন তিনি। পয়েন্টের ওপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দলকে উল্লাসে ভাসান রাশিদ। ১৯৭ রান তাড়ায় তিন উইকেটে জেতে গুজরাট।
ব্যাট হাতে ১১ বল ২৪ রানের ম্যাচ জেতানো ক্যামিওর আগে বল হাতেও রাশিদ ছিলেন কার্যকর। প্রায় চারশ রানের ম্যাচে চার ওভারে স্রেফ ১৮ রান দিয়ে ১ উইকেট শিকার করেন তিনি। তার দলের আর কোনো বোলার ওভারপ্রতি ৯ রানের কম দেননি।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরা হন তিনিই, এবারের মৌসুমে প্রথমবার।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে সঞ্চালক হার্শা ভোগলে তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কোনটিতে ভালো করার তৃপ্তি বেশি, ব্যাটিং নাকি বোলিং?’ রাশিদের উত্তর, “দলের জয়ই বেশি সন্তুষ্টির। এটিই তো চাওয়া থাকে…।”
তবে পরমুহূর্তেই নিজের পারফরম্যান্স নিয়েও বললেন এই আফগান তারকা। তার কাছে বেশি ভালো লাগেছে বল হাতে ভালো করতে পেরেছে।
“আরেকটি ব্যাপার হলো, গত চার-পাঁচ ম্যাচে বোলিংয়ে ভুগছিলাম। আজকে বেশি খুশি হয়েছি ঠিক জায়গায় বল রাখতে পেরে। ভালো জায়গায় বল ফেলতে পেরেছি, এটিই আমাকে বেশি আনন্দ দিয়েছে এবং সেই প্রাণশক্তিই ব্যাটিংয়ে বয়ে এসেছে।”
চোট ও অস্ত্রোপচারের কারণে গত নভেম্বরে বিশ্বকাপের পর লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হয় রাশিদকে। ক্যারিয়ারে যে অভিজ্ঞতা তার আগে কখনও হয়নি। তিন মাস পর গত মাসে মাঠে ফিরে আফগানিস্তানের হয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ফেরেন। দারুণ বোলিংও উপহার দেন। তবে আইপিএলে এসে বল হাতে তাকে সেই চেনা চেহারায় দেখা যাচ্ছিল না।
গুজরাটের হয়ে প্রথম পাঁচ ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিলেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি খরুচে ও ধারহীন ছিলেন তিনি। দুটি বেশি রান দেন চল্লিশ ছোঁয়া, তার সঙ্গে যা বেশ বেমানান। অবশেষে রাজস্থানের বিপক্ষে এই ম্যাচে তাকে দেখা গেল চেনা চেহারায়।
রাশিদ বললেন, চোটের পর ফিরে একটু সময় তার লাগছে আবার মানিয়ে নিতে।
“অস্ত্রোচারের কারণে গত তিন-চার মাসে বেশি বোলিং করতে পারিনি। মাঠে নেমে আবার বোলিংয়ে মানিয়ে নিতে তাই একটু সময় লাগছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার আঙুলের আবার অভ্যস্ত হয়ে ওঠা। গত ৮-৯ বছরে টানা খেলেছি। আঙুল অভ্যস্ত ছিল বল হাতে নিয়ে। এবার তিন-চার মাস বল হাতে না নিয়ে সেই সংযোগটা কিছুটা হারিয়ে ফেলেছিলাম। গ্রিপটা ঠিকঠাক হচ্ছিল না।”
“গত ম্যাচে ভালো একটি সেশন কাটিয়েছি। টানা এক-দেড় ঘণ্টা স্পট বোলিং করেছি, তা কাজে দিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, অস্ত্রোপচারের আগে যেমন ছিলাম, সেখানে কিছুটা ফিরতে পেরেছি। আজকে উপভোগ করেছি দারুণভাবে।”
রান তাড়ায় শেষ চার ওভারে এ দিন ৫৯ রান লাগত গুজরাটের। রাশিদ নামার সময়ও কাজটা ছিল কঠিন। তবে এই সময়ের ক্রিকেটে শেষ দিকে এমন সমীকরণকে নাগালের বাইরে বলে মনে করেন না তিনি।
“তিন-চারটি ছক্কারই ব্যাপার… এটা করতে পারলেই (প্রয়োজনীয়) রান রেট নিচে চলে আসে। স্রেফ ইতিবাচক থাকতে হয়। ১০ বলে যদি ৩০-৩৫ রান লাগে, তিনটি ছক্কা মারলেই ৭ বলে ১৫-১৬ রান দরকার হয়। ভেতরে ভেতরে যতটা ইতিবাচক ভাবা যায়, বাইরে প্রকাশ তেমনই হয়।”