জাতীয় লিগের ২৬তম আসরে এসে প্রথমবার শিরোপার স্বাদ পেয়েছে সিলেট বিভাগ, সেই অর্জনের পেছনে অনেক দিনের পরিকল্পনা, ঘাম-শ্রম আর ভালোবাসার গল্প শোনালেন দল সংশ্লিষ্টরা।
Published : 27 Nov 2024, 09:21 PM
দুই ইনিংস শেষ হতেই পেরিয়ে গেল আড়াই দিন। ম্যাচ কার্যত ড্রয়ের পথে। সিলেটের তাতে খুব একটা ক্ষতি ছিল না। আরেকটি ম্যাচ তো বাকিই। তবে যে ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ, পরের ম্যাচের অপেক্ষায় আর কেন! শিরোপার সুবাস পেয়ে যাওয়া দল বৈঠকে বসে গেল। সবাই প্রতিজ্ঞা করলেন, এই ম্যাচ জিততেই হবে।
যে কথা, সেই কাজ! দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে বরিশালকে ১৪২ রানে গুটিয়ে দিল সিলেট। এরপর ১০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে এক সেশনও লাগল না তাদের। ড্রয়ের পথে থাকা ম্যাচ শেষ দুই সেশন আগেই।
ষষ্ঠ রাউন্ডের ম্যাচটি জিতে বহু কাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্তটির দেখা পেল তারা। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, অনেক হতাশা-হাহাকার চাপ দিয়ে, অনেকের স্বপ্ন পূরণ করে অবশেষে চ্যাম্পিয়ন সিলেট!
যে বিভাগের ক্রিকেট ঐতিহ্য অনেক পুরোনো, যাদের ক্রিকেট সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ, যে অঞ্চল থেকে এসে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন অনেক ক্রিকেটার, সেই সিলেট বিভাগ প্রথমবার জাতীয় ক্রিকেট লিগের শিরোপার স্বাদ পেল এই ২৬তম আসরে এসে।
শিরোপা নিশ্চিত করা ম্যাচটি একটি নমুনামাত্র। টুর্নামেন্টজুড়েই পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস, সামর্থ্যে আস্থা ও একতার শক্তিতে ধরা দিয়েছে সিলেটের এই সাফল্য। এক ম্যাচ বাকি রেখেই চ্যাম্পিয়ন হয় গেছে তারা। এখনও পর্যন্ত হারেনি একটি ম্যাচও।
১৯৯৯-০০ মৌসুমে শুরু হওয়া দেশের প্রধান এই প্রথম শ্রেণির এই টুর্নামেন্টে আগের আসরগুলোতে সাফল্য ছিল না সিলেটের। প্রথম মৌসুমে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা না থাকা আসরে রানার্স-আপ হয় সিলেট। এরপর শুধু পেছাতে থাকা। ২০১৫-১৬ মৌসুমে দ্বিস্তরবিশিষ্ট লিগ হওয়ার আগে আর একবার রানার্স-আপ হয় তারা। পরে দ্বিস্তর হওয়ার পরও শুরুতে বেশ পিছিয়ে ছিল সিলেট।
খেলোয়াড়ি জীবনের সমাপ্তি টেনে রাজিন সালেহ সিলেটে কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উন্নতির শুরু। তার কোচিংয়ে প্রথম আসরেই ২০১৮-১৯ মৌসুমে দ্বিতীয় স্তরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম স্তরে উন্নীত হয় সিলেট। পরের তিন আসরেও তারা রাখে উন্নতির ছাপ। গত দুই আসরে খুব কাছে গিয়েও রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের।
এবার ৯ বছর পর এক স্তরের লিগ পদ্ধতি ফিরে আসার পর ট্রফির সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলল রাজিনের সিলেট।
অথচ গত কয়েক আসরের নিয়মিত ক্রিকেটারদের অনেককেই এবার পায়নি তারা। বোলিং আক্রমণ আগের মতো শক্তিশালী থাকলেও জাকির হাসান, জাকের আলিরা জাতীয় দলের দায়িত্বে যোগ দেওয়ায় ব্যাটিংয়ে বড় শূন্যতা ছিল তাদের।
তবে আসরজুড়ে হার না মানা মানসিকতার পরিচয় দিয়ে সব বাধা অতিক্রম করে রাজিনের দল। ব্যাট হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অমিত হাসান। এখন পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ ৬৬১ রান এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের।
এছাড়া দলের প্রয়োজনের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন পিনাক ঘোষ, আসাদুল্লা আল গালিব, নাসুম আহমেদরা।
বোলিংয়ে গত কয়েক আসরের মতোই অন্য যে কোনো দলের চেয়ে বেশ এগিয়ে তারা। জাতীয় দল ও এর আশপাশে থাকা একঝাঁক বোলার নিয়ে প্রতিপক্ষকে কোনো ম্যাচেই বেশি দূর যেতে দেয়নি সিলেট।
চোট থেকে ফিরে আসা ইবাদত হোসেন, দারুণ ছন্দে থাকা সৈয়দ খালেদ আহমেদ, রেজাউর রহমান রাজা, অভিজ্ঞ আবু জায়েদ রাহি কিংবা উঠতি পেসার তোফায়েল আহমেদ, সবার সম্মিলিত আক্রমণে এককভাবে সিলেটের কেউই তেমন বেশি উইকেট নিতে পারেননি। তবে দল ঠিকই লাভবান হয়েছে।
কীভাবে এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হলো, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সেই গল্প শোনালেন কোচ রাজিন, অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার নাসুম ও ম্যানেজার আলি ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরি।
দীর্ঘ অপেক্ষা অবসানের অনির্বচনীয় অনুভূতি
চলতি শতাব্দীর শুরুতে সিলেটের হয়েই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যাত্রা শুরু রাজিন সালেহর। প্রায় দেড় যুগ জাতীয় লিগে খেললেও পাননি সর্বোচ্চ সাফল্য। অবসর নিয়ে কোচিংয়ে মন দেওয়ার পর ছয় বছরের মাথায় তিনি পেলেন সেই স্বাদ।
কোচিং ক্যারিয়ারের বয়স বেশি না হলেও এই সাফল্যকেই সবার ওপরে রাখলেন তিনি।
“আমার কোচিংয়ের ৬ বছরে বেশ কিছু সাফল্য পেয়েছি। জাতীয় লিগে এই প্রথম সিলেট চ্যাম্পিয়ন হলো। এটার আনন্দ আসলে অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি। বড় কোনো দল নিয়ে কাজ করলে একরকম অনুভূতি কাজ করে। কিন্তু মাঝারি বা ছোট দল নিয়ে কাজ করলে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকে, চাপ থাকে। ওই দলকে নিয়ে যখন সাফল্য আসবে, এর চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে।”
“কোচিং ক্যারিয়ারে আমার অনেকগুলো অর্জনের মধ্যে এটাই সেরা। গত বছরের বিসিএলে (বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ) আমার কোচিংয়ে ইস্ট জোন প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়। তবে সবাই তখন ধরে নিয়েছিল, ইস্ট জোন চ্যাম্পিয়ন হবে। কারণ দল শক্তিশালী ছিল। আমার মধ্যেও অত আবেগ কাজ করেনি। কিন্তু জাতীয় লিগের বিষয়টা পুরোপুরি ভিন্ন। আমাদের ব্যাটিংটা একটু দুর্বল ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভালো লাগছে বেশি।”
জাতীয় দলের ব্যস্ততায় মাঝের দুই রাউন্ড খেলতে পারেননি নাসুম। তবে শুরুর ও সবশেষ দুই ম্যাচে খেলেন তিনি, বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও অবদান রাখেন। বরিশালের বিপক্ষে ষষ্ঠ রাউন্ডে প্রথম ইনিংসে ৫৩ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৪৪ রান।
২০১১ সাল থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা শুরুর পর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে জাতীয় লিগের শিরোপা জেতার আনন্দটা একটু বেশিই বাঁহাতি এই স্পিনারের কাছে।
“যে কোনো কিছুতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সবসময়ই আনন্দের। যে কোনো খেলায় সবাই চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। তবে আমাদের আনন্দটা একটু বেশি, কারণ আমরা অনেক দিন পরে, প্রায় ২৫-২৬ বছর পার করে এসে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।”
“এর আগে ২০১৯ সালে দ্বিতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম স্তরে উঠেছিলাম। এবার ফ্ল্যাট লিগে (এক স্তর) এসে চ্যাম্পিয়ন হলাম। এখন পর্যন্ত অপরাজিত আছি। চ্যাম্পিয়ন হলে তো ভালো লাগেই। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পর সাফল্য পাওয়ায় আমিসহ আমাদের দলের বাকি সবাই একটু বেশি খুশি। একটা ম্যাচ হাতে রেখে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। এটাও অনেক ভালো লাগার।”
২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত প্রথম দফায় সিলেটের ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন ওয়াসিকুজ্জামান। প্রায় এক যুগ পর আবার একই দায়িত্বে ফিরে প্রথম টুর্নামেন্টেই তিনি পেলেন সাফল্যের স্বাদ। দীর্ঘ দিন ধরে সিলেটের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ওয়াসিকুজ্জামানের অনুভূতিটা তাই বিশেষ।
“২৬ বছর ধরে আমরা চেষ্টা করছি। এবার ২৬তম আসরে এসে শিরোপাটা পেয়েছি। এটা অনেক বড় অর্জন। এটার অংশ হতে পারার গর্ব অন্যরকম। আর আনন্দ আসলে বোঝানোর মতো না।”
দারুণ দলীয় আবহ, ক্রিকেটারদের একতা
দীর্ঘদিন সাফল্য না পেলেও সিলেটের দলীয় সমন্বয়, ক্রিকেটারদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের চর্চা বেশ পুরোনো। সেটি অব্যাহত আছে এখনও। ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ ও ম্যানেজমেন্ট মিলে দারুণ এক পরিবার গড়ে তোলার ফলই মূলত এবার পেয়েছে তারা।
সিলেটের জন্য বাড়তি সুবিধা হিসেবে কাজ করেছে একটি ব্যাপার, বোলিং বিভাগের প্রায় সবাই জাতীয় দল বা এর আশেপাশে থাকা ক্রিকেটার। জাতীয় দলের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা তারা কাজে লাগান বিভাগীয় দলেও। নিজেদের মধ্যে আলোচনায় চার দিনের ক্রিকেটে গুরুত্বারোপ করেন প্রায় নিয়মিত। নতুন যে কোনো ক্রিকেটারকে লাল বলের খেলাকে আপন করে নেওয়ার দীক্ষাটা নিয়মিতই দেন আবু জায়েদ রাহি, ইবাদত, নাসুমরা।
দলে সিনিয়র ক্রিকেটার এখন মূলত তারাই। তুলনামূলক তরুণ অমিত, নতুন উঠে আসা মুবিন আহমেদ দিশান, আসাদুল্লা আল গালিব, তোফায়েলদের সঙ্গে এরই মধ্যে ভাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তারা।
নাসুম জানালেন, দলের সবার মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া অনেক এগিয়ে দিয়েছে তাদের।
“আমাদের এখনের যে দলটা, আমরা সবাই প্রায় সমান, কাছাকাছি। অনেক সিনিয়র কেউ নেই, অনেক জুনিয়রও কেউ নেই। আমরা দুই-একজন, যেমন আমি, খালেদ, রাহি, ইবাদত আছি... তারাও অন্যদের সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক। পারলে ওরা (জুনিয়ররা) এসে ‘তুই’ করে সম্বোধন করে। তাতেও কোনো আপত্তি নেই আমাদের। খেলার মধ্যে আমরা সবাই এক।”
“আমাদের সব কিছুর মূল হলো একতা। আসর শুরুর আগে নিজেদের মধ্যে অনেক কথা হয়েছে। আমার যেমন একটা কথা ছিল, ‘প্রতি বছর আমরা অনেক কিছু অর্জন করি। কিন্তু শেষ ধাপটা পার করতে পারি না। এবার যদি কোনো সুযোগ আসে, সেটা যেন পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে আসতে পারি।’ তো আমরা কোনো সুযোগ হাতছাড়া করিনি। এর ফলটাও এখন হাতে।”
তবে দলের বাইরের কিছু চাপও সইতে হয়েছে রাজিনকে। দল গঠনের প্রক্রিয়া কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তার ওপর আসে বিভিন্ন ধরনের চাপ। সেসবকে পাত্তা দেননি সিলেটের প্রধান কোচ। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে সাফল্য পাওয়ার কথা বলেন।
“যখন নিজের কাজে সৎ থাকবেন, সবসময় সামনে এগোতে থাকবেন। (কোচ হিসেবে) শুরু যখন করি, বিভাগীয় ক্রিকেটে আমার অনেক সমালোচনা হয়, অনেক কিছু শুনতে হয়। যা আমাকে মানসিকভাবে ধাক্কা দেয়। তবে নিজের জায়গায় শক্ত ছিলাম। কারও সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকতেই পারে। তবে কাজের ক্ষেত্রে কোনো আপোষ নেই।”
“আপনি কাজ না করলে আমি আপনাকে রাখব না। এটা আমার সততা। অনেক কোচের যেমন পছন্দের অনেকে থাকে, যাকে দলে রাখতে চায়। আমি এটি নিয়ে একদম কঠোর ছিলাম। তাই সমালোচনার ঝড় ছিল। কিন্তু আমি অনড় থাকায় এখন সাফল্যটা এসেছে। ক্রিকেটাররা ধারাবাহিকভাবে গত ৪-৫ বছর ধরে পারফর্ম করে যাচ্ছে।”
ক্রিকেটার-কোচরা মাঠে খেললেও বাইরে থেকে তাদের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার কাজটা করতে হয় ম্যানেজমেন্টের। সেদিক থেকে দলের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি দেখে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে খেলতে দেওয়া হয়েছে, জানালেন ম্যানেজার ওয়াসিকুজ্জামান।
“সব কিছু ক্রিকেটারদের অর্জন। তারা নিজেদের স্কিলের প্রদর্শনী করেছে। ফলে সাফল্যটা এসেছে। আমরা বাইরে থেকে চেষ্টা করেছি সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে। আমাদের দলের একটা বিষয় হলো, এখানে আবহ খুব আনন্দের থাকে। সবাই হাসিখুশি থাকলে মাঠের খেলাটাও ভালো হয়।”
ব্যাট হাতে অমিতের সামনে থেকে নেতৃত্ব
জাকির হাসান জাতীয় দলের দায়িত্বে ব্যস্ত থাকায় এবার সিলেটের অধিনায়কত্ব করছেন অমিত। মাত্র ২৩ বছর বয়সে বড় দায়িত্বের চাপ দারুণভাবে সামাল দিচ্ছেন তিনি।
এখন পর্যন্ত ৮২.৬৩ গড়ে লিগের সর্বোচ্চ ৬৬১ রান তার। আসরের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিটিও এসেছে তার ব্যাট থেকে। খুলনার বিপক্ষে চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে দশ ঘণ্টার বেশি সময় ক্রিজে থেকে ক্যারিয়ার সেরা ২১৩ রান করেন তিনি।
ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে থাকায় অধিনায়কত্ব করাও সহজ হয়ে গেছে তার। রাজিন বললেন, ব্যাটিংয়ে তো বটেই, অধিনায়ক হিসেবেও দলের নেতা হয়ে উঠেছেন অমিত।
“একজন অধিনায়কের আসলে সবচেয়ে ঠাণ্ডা থাকা খুব জরুরি। যা অমিত মধ্যে বেশ ভালোভাবেই আছে। নিজের রাগ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই ক্রিকেটারদের ভালোভাবে পরিচালিত করতে পারে।”
“আমার মনে হয়, অধিনায়ক হিসেবে প্রতিটা ক্রিকেটার ওকে যথাযথ সম্মান করেছে। খুব ভালো নেতৃত্ব দিয়েছে। কখনও ভড়কে যায়নি। অমিতের পারফরম্যান্সও অসাধারণ। ৩-৪ বছর ধরেই রান করেছে। এই বছর সে তার সেরা ক্রিকেট খেলেছে।”
দশ ইনিংসে এখন পর্যন্ত ৩ ফিফটির সঙ্গে ২টি সেঞ্চুরি করেছেন অমিত। বাকি পাঁচ ইনিংসেও তিনি খেলেছেন পঞ্চাশের বেশি বল। একবারও তাকে ২৫ রানের নিচে থামাতে পারেনি কোনো দল।
দলের সাফল্যে অমিতের এসব ছোট ছোট অবদানের কথাও মনে করিয়ে দেন রাজিন।
“দলে বড় অবদান তো অমিত প্রায়ই রাখে। পাশাপাশি প্রতি ম্যাচেই সে গুরুত্বপূর্ণ ছোট ছোট অবদান রেখেছে। যেগুলো ম্যাচের পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে। এর ফলও আমরা পেয়েছি।”
ব্যাটিংয়ের ঘাটতি মেটাতে নাসুমের নতুন দায়িত্ব
গত কয়েক বছর ধরেই শক্তিশালী বোলিং বিভাগ থাকা সিলেটের এবার দেখা দেয় ব্যাটসম্যান সংকট। দলের সবচেয়ে বড় দুই পারফর্মার জাকির ও জাকেরকে না পাওয়ায় ঘাটতি মেটাতে বাঁহাতি স্পিনার নাসুমকে ওপরে উঠিয়ে আনেন রাজিন। সবশেষ দুই রাউন্ডে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করেন নাসুম।
জাতীয় দলে নাসুমের পরিচয় বাঁহাতি স্পিনার হলেও তাকে ভিন্নভাবে দেখেন সিলেটের কোচ রাজিন।
“নাসুমকে আমি ব্যাটসম্যান হিসেবে উঁচুতে রাখি। বাংলাদেশ ক্রিকেটে ওকে ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখা হয় কি না, জানি না (হাসি)। তবে আমি ভালো অলরাউন্ডার হিসেবেই দেখি। কোচ যখন কোনো ক্রিকেটারের ওপর বিশ্বাস রাখে, তখন ওই ছেলেটা নিজের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টাই করে।”
নাসুমের ব্যাটিং প্রতিভার আভা গত বছরই দেখতে পান রাজিন। রংপুরের বিপক্ষে শেষ রাউন্ডের ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৮ নম্বরে নেমে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন নাসুম। পরের ইনিংসে তাকে চার নম্বরে নামিয়ে দেন রাজিন। কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়ে ৭১ রানের ইনিংস খেলেন নাসুম।
ওই ম্যাচের পরই মূলত নাসুমকে ওপরে খেলানোর পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেন রাজিন।
বল হাতে ১৩ উইকেট নেওয়া নাসুমের ব্যাট হাতে এখন পর্যন্ত সংগ্রহ ১৩৭ রান। ষষ্ঠ রাউন্ডে দুই ইনিংস মিলে তিনি করেন ১০৭ রান। তারই ছিল শিরোপা জেতানো শট খেলার সুযোগ। কিন্তু জয়ের জন্য ১ রান বাকি থাকতে ছক্কা মারতে গিয়ে উল্টো ক্যাচ আউট হন।
সেটি নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ থাকলেও দল থেকে পাওয়া ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে পারার তৃপ্তিই বেশি নাসুমের।
“ব্যাটিংটা আসলে আমি নতুন বা আলাদা দায়িত্ব হিসেবে দেখি না। সিলেট দল আমার ওপর ভরসা করে। সেটার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করি। জয়ের মুহূর্তটা আসলে... জিততে যখন ৭ রান বাকি, আমি তখন ৩৮ রানে। তখন অমিতকে বলছিলাম যে, ‘যদি (পঞ্চাশের) সুযোগ পাই, আমি নিয়ে নেব।”
“দুই বল পর মেরে দিই, ছক্কা হয়ে যায়। এরপর একই ধরনের বল ছিল। তবে একটু আগে খেলে ফেলি। মূলত জয় যেহেতু নিশ্চিত, আমি পঞ্চাশের চেষ্টাই করেছিলাম। হয়নি। নয়তো জেতার শটটা আমারই হতে পারত।”
দশে মিলে করি কাজ
৬৬১ রান নিয়ে ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সবার ওপরে অমিত। ২৪ উইকেট নিয়ে বোলারদের মধ্যে দুই নম্বরে খালেদ। তবে দুই-তিনজনের পারফরম্যান্সে তো আর চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় না। লিগজুড়ে নানা সময়ে অবদান রেখেছেন আরও অনেকেই। প্রয়োজনের সময় কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে গেছেন।
পিনাক, মুবিন, আসাদুল্লাদের ব্যাট থেকে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ সব ইনিংস। দলের প্রয়োজনে নাসুম ছাড়াও ভিন্ন দুই ম্যাচে মহামূল্যবান দুটি ফিফটি করেছেন দুই পেসার তোফায়েল ও রাজা।
সবার সম্মিলিত অবদানের জয়গান গাইলেন কোচ রাজিন।
“অমিত ছাড়াও আরও ব্যাটিংয়ের আরও কয়েকজন ছোট ছোট অবদান রেখেছে। পিনাক ঘোষ, তোফায়েল, আসাদুল্লা আল গালিব ভালো খেলেছে। সবাই মিলে এরকম অবদান রেখেছে বলেই মূলত আমাদের হারতে হয়নি।”
“শুরুতে যেটা বললাম, ব্যাটিংয়ে এবার আমাদের একটু ঘাটতি ছিল। তবে আমি গত ২-৩ বছর ধরে দুই-একটা ছেলেকে দেখে রেখেছিলাম, যাদের ভবিষ্যতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। (মুবিন আহমেদ) দিশান খেলেছে, ইয়ুথ ক্রিকেট লিগ থেকে। এই ছেলেটা খুব ভালো ব্যাটসম্যান। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইনিংস খেলেছে।”
কোচের কথার প্রতিধ্বনি নাসুমের কণ্ঠেও।
“আমাদের বোলিংয়ের দিকে মনে হয় খালেদ আছে ২৪ উইকেট আর অমিত আছে সর্বোচ্চ রান। বাকিগুলো সব কিছু মিলিয়ে আমরা সবাই কম-বেশি গড়পড়তা পারফরম্যান্স করে গেছি।”
“ব্যাটিং, বোলিং- দুই দিকেই সবার কিছু না কিছু অবদান ছিল। এর চেয়ে বড় কথা, দলের বন্ধন ভালো ছিল। দলের পরিবেশ দারুণ ছিল। যখন যেভাবে দরকার পড়েছে, কাজ করে দিয়েছে। যার যখন যেমন সহায়তা দরকার ছিল, সেটাও করা হয়েছে। এই জন্যই আসলে...।”
আর বলার প্রয়োজন পড়ল না নাসুমের। বাকিটা তো সবাই জানেন!