ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এদিন পঞ্চাশের দেখা পেয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন, জহুরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন।
Published : 16 Apr 2023, 07:38 PM
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আগের দুই ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই হতাশা ঝেড়ে ফেলে এবার জ্বলে উঠলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ব্যাটসম্যান। তার অপরাজিত সেঞ্চুরিতে সিটি ক্লাবকে অনায়াসে হারাল আবাহনী লিমিটেড।
আরেক ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে অপরাজিত সেঞ্চুরি উপহার দেন নাসির হোসেন। এছাড়া লিগে রোববার দিন ফিফটি করেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, সাদমান ইসলামসহ বেশ কয়েকজন।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে সিটি ক্লাবের বিপক্ষে ৫ উইকেটে জিতেছে আবাহনী। প্রতিপক্ষকে ১৭২ রানে গুটিয়ে দিয়ে জয়ের বন্দরে তারা পৌঁছে যায় ৮৯ বল বাকি থাকতে।
গত দুই ম্যাচে ২১ ও ২ রান করা শান্ত এবার খেলেন ১০২ রানের চমৎকার এক ইনিংস। ৩ ছক্কা ও ১১ চারে সাজানো ১১২ বলের ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনি।
লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে এটি শান্তর সপ্তম সেঞ্চুরি। ইনিংসটির পথে এই সংস্করণে ৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
আবাহনীর এই জয়ে অবদান কম নয় রিশাদ হোসেনের। দুর্দান্ত লেগ স্পিনে ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে দুইশর আগে গুঁড়িয়ে জয়ের ভিতটা গড়ে দেন তিনিই।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা সিটি ক্লাব একপ্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে হারায় উইকেট। অন্যপ্রান্তে নিজের মতো খেলে যান তৌফিক খান। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন তিনি।
৫১ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলে সিটি ক্লাবের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন তৌফিক। এই ওপেনারের ইনিংসে ৬টি ছক্কার সঙ্গে চার ৭টি।
দলটির আরও চার ব্যাটসম্যান যান দুই অঙ্কে। কিন্তু তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন আবদুল্লাহ আল মামুন।
রান তাড়ায় নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায় আবাহনী। প্রথম দুই ওভারে মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও এনামুল হককে হারিয়ে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৭ রানে ২ উইকেট।
চাপে পড়া দলকে কক্ষপথে ফেরান শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। দুইজনে গড়েন ১০৫ রানের জুটি। ৪ চারে ৩৯ রান করা জয়কে ফিরিয়ে তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন রবিউল হক। এক বল পর এই পেসার এলবিডব্লিউ করে দেন আফিফ হোসেনকে।
আবাহনীর অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেনকেও টিকতে দেননি রবিউল। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন শান্ত। ১০৯ বলে তিন অঙ্কের পা রাখা টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান বাকি পথ পাড়ি দেন রিশাদকে নিয়ে।
৩৮ রানে ৪ উইকেট নেন সিটি ক্লাবের রবিউল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিটি ক্লাব: ৩৯.২ ওভারে ১৭২ (মইনুল ৬, তৌফিক ৭৯, কমল ১১, রাফসান ০, মামুন ২২, রাতুল ১৭, রাজু ৩, রবিউল ১, ইফরান ৯, সাজ্জাদ ১৪*, আসিফ ১; তানজিম ৬-০-২২-১, রকিবুল ৫-০-৩৬-০, নাহিদুল ৯-০-৩০-১, তানভির ৮-২-২৮-২, রিশাদ ৬.২-১-২৯-৪, মোসাদ্দেক ৫-০-২১-২)
আবাহনী লিমিটেড: ৩৫.১ ওভারে ১৭৪/৫ (এনামুল ১, নাঈম শেখ ০, শান্ত ১০২*, জয় ৩৯, আফিফ ০, মোসাদ্দেক ১১, রিশাদ ১২*; রবিউল ১০-৩-৩৮-৪, আসিফ ৭-০-৩৬-১, সাজ্জাদ ৭.১-০-২৪-০, মইনুল ২-০-১০-০, রাজু ৪-০-৩১-০, ইফরান ৫-০-২৯-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত
নাসিরের সেঞ্চুরি ও মুশফিক-মিঠুনের ফিফটি
চলতি প্রিমিয়ার লিগে সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারা নাসির এবার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ছড়ালেন আলো। চমৎকার এক অপরাজিত সেঞ্চুরিতে প্রাইম ব্যাংকের জয়ের নায়ক তিনি। অগ্রণী ব্যাংককে হারানোর পথে ফিফটি করে অবদান রাখলেন মুশফিক ও মিঠুন।
মিরপুরে অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে প্রাইম ব্যাংকের জয় ৬ উইকেটে। ২৭৪ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে ২০ বল বাকি থাকতে।
প্রাইম ব্যাংকের জয়ের কারিগর নাসির খেলেন ৩ ছক্কা ও ১২ চারে ৯৮ বলে ১১২ রানের ইনিংস। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটি তার নবম সেঞ্চুরি। এই সংস্করণে সবশেষ শতকের দেখা পেয়েছিলেন তিনি গত বছরের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে, রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে।
একটি করে ছক্কা চারে ৫৩ রান করেন মুশফিক। ২ ছক্কা ও ৪টি চারে ঠিক ৫০ রানে থামেন মিঠুন।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অগ্রণী ব্যাংক শুরুতে আমির আহমেদকে হারালেও পাকিস্তানের উসমান খান ও সাদমান ইসলাম দলকে টেনে নেন। দুই ব্যাটসম্যানই স্পর্শ করেন ফিফটি।
১ ছক্কা ও ৭ চারে ৫৩ রান আসে উসমানের ব্যাট থেকে। সাদমানের ৬২ রানের ইনিংস সাজান ২ ছক্কা ও ৪টি চারে।
এরপর দলের রান দুইশ পার করে বিদায় নেন জহুরুল ইসলাম। তিনি খেলেন ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৫৮ রানের ইনিংস। শেষদিকে দ্রুত রান বাড়ান মার্শাল আইয়ুব ও আবু হায়দার রনি।
১ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৪ রান করেন মার্শাল। ৪ ছক্কা ও ১ চারে ১৫ বলে ৩৬ রানের ক্যামিও খেলেন আবু হায়দার।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারে প্রান্তিক নওরোজ নাবিলকে হারায় প্রাইম ব্যাংক। শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় তারা শাহাদাত দিপু ও মিঠুনের ব্যাটে। ৫ চারে ৩৫ রান করেন দিপু।
মিঠুনের পর মুশফিকের সঙ্গে জুটি গড়েন নাসির। এই দুই জুটিতেই জয়ের কাছে পৌঁছে যায় প্রাইম ব্যাংক। মিঠুনের মতো মুশফিকও শেষ করে আসতে পারেননি কাজ।
নাসির ৯৩ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৭৩/৪ (আজমির ১৪, উসমান ৫৩, সাদমান ৬২, জহুরুল ৫৮, মার্শাল ৩৪*, আবু হায়দার ৩৬*; রাজা ৮-০-৫৯-০, জানাত ৬-০-৫৩-১, তাইজুল ১০-০-৬৪-২, মেহেদি ৭-০-২৯-০, নাসির ১০-০-২০-০, আলিস ৯-০-৪১-১)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৬.৪ ওভারে ২৭৭/৪ (প্রান্তিক ১, শাহাদাত ৩৫, মিঠুন ৫০, নাসির ১১২*, মুশফিক ৫৩, ইয়াসির ১৬*; আবু হায়দার ৮-০-৫১-০, শরিফুল্লাহ ৯-০-৪৫-১, এনামুল ৭.৪-০-৫৪-১, ইলিয়াস ১০-০-৫০-১, পায়েল ৬-০-৩৪-১, জাভেদ ৬-০-৪০-০)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাসির হোসেন
সাইফ-রবিউলের ফিফটিতে শেখ জামালের সহজ জয়
সম্মিলিত চেষ্টায় লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে দেড়শ পার হতেই থামিয়ে দিলেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বোলাররা। অল্প রানের লক্ষ্যে দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও রবিউল ইসলামের ফিফটিতে সহজ জয় তুলে নিল শিরোপাধারীরা।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে রূপগঞ্জকে ৮ উইকেটে হারায় শেখ জামাল। প্রতিপক্ষের ১৬২ রান তারা পেরিয়ে যায় ১৩১ বল বাকি থাকতে।
শেখ জামালের জয়ের পথে ৪ ছক্কা ও ৬ চারে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা সাইফ। ৯ চারে ৫৮ রান করেন রবিউল।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রূপগঞ্জের শুরুটা হয়ে দুঃস্বপ্নের মতো। তাদের দুই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ও পারভেজ হোসেন খুলতে পারেননি রানের খাতা। এরপর আরও দ্রুত আরও তিন উইকেট হারিয়ে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৪৯/৫।
খাদের কিনার থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা চালান ইরফান শুক্কুর। ৬ চারে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন তিনি। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের টুকটাক অবদান কোনোমতে দেড়শ পার করে রূপগঞ্জ।
শেখ জামালের হয়ে ২৯ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ভারতীয় অলরাউন্ডার পারভেজ রসুল।
লক্ষ্য তাড়ায় সাইফ ও রবিউলের উদ্বোধনী জুটিতেই জয়ের কাছে পৌঁছে যায় শেখ জামাল। তাদের ১৪১ রানের প্রতিরোধ ভাঙে রবিউলের বিদায়ে।
কয়েক ওভার পর সাজঘরে ফিরে যান সাইফও। এরপর আর উইকে হারায়নি শেখ জামাল। ফজলে মাহমুদ ও তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৪৫.১ ওভারে ১৬২ (মুনিম ০, পারভেজ ০, সাব্বির ১৫, ফারদিন ১২, চিরাগ ৪, ইরফান ৫৩, সোহাগ ২৯, মুক্তার ১৮, মাশরাফি ১০, অনুপ ১, হালিম ০*; শফিকুল ১০-১-২৮-২, রসুল ৯.১-১-২৯-৩, ইবাদত ৮-১-২৭-১, আরিফ ১০-১-৩৭-২, সাইফ ১-০-৯-০, রবিউল ১-০-১২-০, তাইবুর ২-০-২-১, জিয়াউর ৪-০-৮-১)
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ২৮.১ ওভারে ১৬৮/২ (সাইফ ৭৮, রবিউল ৫৮, ফজলে মাহমুদ ২৪*, হৃদয় ১*; চিরাগ ২-০-১৯-০, হালিম ৪-১-২৬-০, অনুপ ১০-০-৫৪-০, সোহাগ ৬-১-৩৭-১, মাশরাফি ৩-০-১৫-০, পারভেজ ২-১-১-১, ফারদিন ১.১-০-১৪-০)
ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাইফ হাসান