ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বার্ষিক মিলনমেলায় জড়ো হয়েছিলেন ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তনীরা।
Published : 19 Jan 2024, 09:05 PM
কেউ ক্যাম্পাস ছেড়েছেন ষাটের দশকে, কেউ আবার দুই-তিন বছর আগে। কারো মুখের বলিরেখায় বয়সের ভার; কেউ এখনও তরুণ তুর্কি। মিলনমেলায় এসে সবাই যেন একাকার।
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততার মাঝে একসময়ের সহপাঠীদের সান্নিধ্য পেতে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা। স্মৃতি রোমন্থন আর আড্ডা-গানে কাটল তাদের একটি বিকেল।
ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট অ্যালামনাই সোসাইটির (ইডাস) এ পুনর্মিলনী আয়োজনে প্রাক্তনীরা আসতে শুরু করেন বিকাল ৩টা থেকেই। একের পর এক দেখা মেলে পুরানো দিনের বন্ধুদের। অনেক দিন পর প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
কেউ কেউ পুরোনো দিনের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে মাতেন রসিকতায়। প্রিয় মুখের সঙ্গে নতুন করে স্মৃতি ধারণ করেন মোবাইল ফোনে, ক্যামেরায়। কেউ কেউ বিদেশ থেকেও এসেছেন পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে মিলতে৷
তাদের একজন নাসিম জামিল জয় বলছিলেন, “আমি ২০০০ সালের ব্যাচের ছিলাম। তুরস্কে থাকি। ব্যস্ত জীবনের কারণে বন্ধুদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ হয় না। প্রায় ২০ বছর পর সকলের সাথে মিলিত হতে পেরে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছি।”
২০০১ ব্যাচের দীপক অধিকারী বলেন, “চাকরির তাগিদে সিলেটে থাকতে হয়। একঘেয়ে জীবন থেকে বের হয়ে প্রতি বছর আমরা একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করি। ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে দেখা হওয়ার একটা দারুণ সুযোগ তৈরি হয় এখানে।
"এই যে কাজল কিশোর ব্যানার্জি স্যার, তাহমিনা ম্যাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ তোফাজ্জল মিয়ার মত অসাধারণ ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করার একটা দারুণ মুহূর্ত তৈরি হয়েছে, তাদের একটা কথা জীবনবোধকে বদলে দিতে পারে। প্রতিবছর এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি।"
ইডাস প্লাটফর্মটি খুবই কার্যকরী হয়ে উঠেছে মন্তব্য করে ১৯৯১ ব্যাচের শিক্ষার্থী অধ্যাপক তাজিন আজিজ বলেন, “এই বড়দের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হচ্ছে। পাশাপাশি এই প্লাটফর্ম থেকে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা আছে।
“মেধাবী অসচ্ছল প্রায় সবাই বৃত্তির আওতায় চলে আসছে। ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ররা আর্থিক সহায়তা, ক্যারিয়ার বিষয়ক পরামর্শ খুবই আন্তরিকতার সাথে প্রদান করে থাকেন।”
মিলনমেলার অংশ হিসেবে আলোচনাসভারও আয়োজন করা হয়। সেখানে এ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, “এখন আমরা যখন ব্যাচের দিকে তাকাই- অবাক হয়ে যাই। আমরা পাস করেছিলাম ১৯৬৫ সালে। আমার জীবনে দুর্বিষহ হল সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের মত মানুষকে সহ্য করার পাশাপাশি পেয়েছি সিরাজুল ইসলাম স্যারকে। আরও অসহ্য ছিল সাজ্জাদ হোসেনের টিউটোরিয়াল ক্লাসের ছাত্র হওয়া।
"ইংরেজি একটি বিদেশি ভাষা, সেটি চর্চার পাশাপাশি আমরা আমাদের দেশীয় ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চাও করব। সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।"
তিনি বলেন, “আমার জানা মতে, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা এখানে ভূমিকা রাখতে পারি- শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা, বৃত্তি দেওয়া এবং বিভাগের বিভিন্ন অবদান রাখা। মনে হয় বাৎসরিক ৫০০ টাকার বেশি হবে না চাঁদা। আশা করি, আমাদের বিভাগ ও বিভাগের শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।“
আলোচনা পর্বে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিক ড. নিয়াজ জামানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তিনিও এ বিভাগের প্রাক্তনী।
আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। এসময় বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একক ও দলীয় গান, নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর রাতের খাবার সেরে মিলনমেলায় অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র।