“পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে দেখুন, এরকম একজন মানুষ পৃথিবীর কোথাও আসেনি; তিনি আসলে বিশ্ববন্ধু,” বলেন অধ্যাপক দেলোয়ার।
Published : 14 Mar 2024, 10:59 PM
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ‘নান্দনিকতায় চিত্তাকর্ষক’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান।
তিনি বলেছেন, “এই ভাষণ ছিল সুগভীর, দার্শনিক চিন্তা, নান্দনিকতায় চিত্তাকর্ষক। এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাকই দেন নাই, ভবিষ্যতের রূপরেখাও তুলে ধরেছেন।”
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ: রাষ্ট্রগঠন ও আন্তর্জাতিক আইনে গুরুত্ব' শীর্ষক আলোচনায় তিনি একথা বলেন।
অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, “এই ভাষণ মহাকালের কথা বলে। এই ভাষণে তিনি বাঙালির মুক্তির চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছিলেন। সেদিনের ভাষণের মাধ্যমে মুক্তার মতো বের হয়ে এসেছিল বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো।
“অপূর্ব ভাষাভঙ্গি, কণ্ঠের ওঠানামা, ঘাড় ফিরিয়ে জনতার দিকে তাকানো, মাঝে মাঝে নিজের সঙ্গে কথা বলা, ফের হুঙ্কার, জনতার দীপ্ত আওয়াজ, পুরো জনতাকে মুক্তির অভিমুখে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া- এসব মিলিয়ে এই ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল নান্দনিক।”
বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে অধ্যাপক আতিউর বলেন, “তিনি একজন গণতান্ত্রিক, শান্তিবাদী ও আপসহীন নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে- বাঙালির প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন।
“মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই তিনি সকলের মনে স্থান করে নিয়েছিলেন। তরুণ বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির জন্য কাজ করেছেন।”
আলোচনা সভায় সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, “আমি সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে রোকেয়া হলে থাকতাম। ৭ মার্চ ভোর আনুমানিক পাঁচটার দিকে আমার দাদু শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আমাকে কুমিল্লা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার মাকে পাঠায়। আমি প্রথমে যেতে রাজি না হলে পরে হলের প্রাধ্যক্ষের কথায় গাড়িতে উঠে কুমিল্লায় চলে যাই।
“কুমিল্লায় ফিরে যাওয়ার পর দাদুকে জিজ্ঞেস করি, কেন আমাকে ফিরে যেতে বলা হল? প্রত্যুত্তরে দাদু আমাকে বললেন, আজ শেখের ব্যাটা, বাঘের বাচ্চা, স্বাধীনতা ঘোষণা করবে। রক্তের বন্যা বইবে। তোমাদের বয়সী ছেলে-মেয়েদেরকে কচুকাটা করবে। তাই তোমাকে আমার ফিরিয়ে আসতেই হল।”
সংরক্ষিত আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, “সাতই মার্চের আগেই বাঙালিদের মারা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে লালমনিরহাট এবং চিটাগাংয়ের দিকে বিহারীরা নির্মমভাবে বাঙালিদের মারতে লাগে।
“সাতই মার্চের দিন বিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হল। আর কোনো টিভি-চ্যানেল নাই। কলকাতার দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় এবং বিবিসি বাংলা রাত ৮টায় ভাষণটি সম্প্রচার করল। আমার দাদা তখন অঝোরে কাঁদছেন আর বলছেন, বাঘের বাচ্চা শেখের বেটা। সে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে এসেছে। ঈশ্বরই তাকে প্রেরণ করেছেন।”
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর প্রতীক লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, “বাঙালি যোদ্ধার জাতি। প্রকৃতি আমাদের যোদ্ধা বানিয়ে দিয়েছে। যে জাতি ঝড়, বন্যা ও খড়ার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে, সেই জাতিকে সহজে দমন করা যায় না।
“আমরা তিতুমীর, হাজী শরীয়ত, সুভাষ বসুর সন্তান। আমাদের হাজার বছরের যুদ্ধের ঐতিহ্য আছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমাদের দাবায়া রাখা যাবে না। আমাদের দাবায়া রাখা যায়নি।”
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইতিহাসে নেলসন ম্যান্ডেলা, আব্রাহাম লিংকন, রুজভেল্ট, মহাত্মা গান্ধী বা জহরলাল নেহেরুসহ অনেকের নাম আছে। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, বঙ্গবন্ধু অতুলনীয়।
“আমাদের বাংলাদেশের বলে বলছি না। পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে দেখুন, এরকম একজন মানুষ পৃথিবীর কোথাও আসেনি। তিনি আসলে বিশ্ববন্ধু।”
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস)-এর পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন)।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণকে অনেকেই শুধু কাব্য নয়, মহাকাব্য বলেছেন। কিন্তু কেন? একটি ভাষণ কীভাবে মহাকাব্য হয়ে ওঠে?
“লক্ষ লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে ব্রাত্যজনের নেতা মুজিবরের বজ্রকণ্ঠের তেজস্বী ভাষণে ইতিহাসের বর্ণনা ছিল, বাঙালির হাজার বছরের বৈষম্য ও বঞ্চনার স্পষ্ট উন্মোচন ছিল, বাঙালি জাতিসত্তার চিরায়ত বিদ্রোহের সাহসী উচ্চারণ ছিল, ছিল বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাঙক্ষার মূর্ত প্রকাশ। ভাষণটি শুধু বাঙালি জাতি নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা।”