“আজকেও একটি দল অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের মাঠে শক্তি নেই এজন্য তারা ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে চাচ্ছে, বলেন উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।
Published : 23 Aug 2023, 09:03 PM
অসাংবিধানিক শক্তির উত্থান ঘটলে দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় মন্তব্য করে এ বিষয়ে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস উপলক্ষে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
২০০৭ সালের ২৩ আগস্টের ঘটনাকে জাতির জীবনে এক কালো অধ্যায় উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক ভাবধারায় বাংলাদেশকে পরিচালিত করার হীন চেষ্টা চালিয়েছিল। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সারা দেশের মানুষ এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করে দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় সর্বদা সোচ্চার থাকতে হবে।”
রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ২০০৭ সালের শুরুতে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০ অগাস্ট সেনা সদস্যদের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষের জের ধরে ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্য স্থান ও বিশ্ববিদ্যালয়েও। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের গ্রেপ্তারও করা হয়।
কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহের পর ছাত্র-শিক্ষকদের ধারাবাহিক আন্দোলনের মুখে মুক্তি পান কারাবন্দি ছাত্র-শিক্ষকরা। পরের বছর থেকে ২৩ অগাস্টকে 'কালো দিবস' হিসেবে পালন করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা।
এ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞের ঘটনা, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার ন্যক্কারজনক ঘটনা এবং ২০০৭ সালের ২০-২৩ আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা।
“স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তি এসব বেদনার্ত, নির্মম ও নিন্দনীয় ঘটনা ঘটিয়েছিল। এরা গণতন্ত্রের শত্রু, সংবিধানের শত্রু।”
আলোচনা সভায় উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আজকেও একটি দল অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের মাঠে শক্তি নেই এজন্য তারা ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে চাচ্ছে।
“৫২ থেকে শুরু করে ৬৯, ৭১ থেকে পরবর্তী সকল আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যুগপৎ ভূমিকা রেখেছেন। এখনও বিরোধীদের কূটচাল নস্যাৎ করতে ভূমিকা রেখে যাবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।”
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সজাগ ছিল। তবে সেসময় কিছু শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষকদের এ ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল, কারণ তারা সেনাসমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকারকে সমর্থন করেছিল।”
২০০৭ সালের ২৩ অগাস্টের ঘটনায় কারা নির্যাতিত শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত করে না, তারা সেদিন রাস্তায় নেমে পড়েছিল। এসময়ের শিক্ষার্থীরা কি পারবে সেদিনের মতো স্বৈরাচারের সামনে দাঁড়াতে? শিক্ষার্থীরা যাতে সেদিনের সাহসিকতা সম্পর্কে জানতে পারে, সেজন্য ২৩ অগাস্টের কালো দিবস পালন করছি আমরা।
সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী ও তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ২০০৭ সালের ২৩ অগাস্টের ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য ছিল বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা, তাকে ক্ষমতা থেকে মাইনাস করা। কিন্তু আমরা সেদিন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সেদিন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল।
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি ও চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য রাখেন। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।