“সমাজের সব ক্ষেত্রে এখনো প্রতিবন্ধী ও ট্রান্সজেন্ডারদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারছি না।”
Published : 07 Apr 2023, 08:21 PM
বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে ইফতার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামাজিক সংগঠন বৃহন্নলা।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যাফেটেরিয়ায় এ ইফতারের আয়োজন করা হয়। সেই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও ট্রান্সজেন্ডারদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
বৃহন্নলার প্রধান উপদেষ্টা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “ট্রান্সজেন্ডার মানুষরা আমাদের সমাজে অবহেলিত এবং বঞ্চিত একটি শ্রেণি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ তাদের এড়িয়ে চলে, তাদের সম্পর্কে কিছু বদ্ধমূল ধারণা পোষণ করে, যা তাদের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে। এই বদ্ধমূল ধারণা ভাঙার জন্যই মূলত এই একীভূত আয়োজন।
“আমরা চাই একীভূত সমাজ। কোনো একটি অংশকে বাদ দিয়ে সমাজ একীভূত হতে পারে না। বৃহন্নলাদের নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে আমরা কাজ করছি।”
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থী অংকিতা ইসলামকে বিশেষ উপহার দেওয়া হয়।
অংকিতা বলেন,“ মহান স্রষ্টা তার সৃষ্টির মধ্যে বৈচিত্র্যতা রেখেছেন। যেমন আমাদের আঙুলগুলো সব সমান না, স্রষ্টা আমাদের কাউকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন, কাউকে কিছু সীমাবদ্ধতাও দিয়েছেন। তবে স্রষ্টার সৃষ্টি সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী।
"আমাদের চারপাশে ট্রান্সজেন্ডার বলেন, অথবা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি বলেন- তাদেরও বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে, সেটা প্রমাণ দিতে গেলে আশেপাশের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। আমি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, অনেকের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়েছে।"
অনুষ্ঠানে ট্রান্সজেন্ডার প্রতিনিধি সাগরিকা বলেন, “আমরা কারও কাছে হাত পাততে চাই না। আমরা কাজের বিনিময়ে খাদ্য চাই। আমরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নই। আমাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে।
"নানা প্রতিবন্ধকতায় এখনও আমরা সমাজের মূল ধারায় বসবাস করতে পারছি না। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশাপাশি সরকারের উচিত আমাদের জীবন-মান উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া।”
বৃহন্নলার সভাপতি সাদিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার সুযোগ্য কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন।
“তিনি ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও অধিকার আইন প্রণয়ন করেছেন। একই বছর আমাদের সমাজের সদাবঞ্চিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ দুটি বিষয় আমাদের সমাজে বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তারপরও কোথায় যেন ঘাটতি আছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক এই শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা প্রতিবন্ধী ও ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে এক সঙ্গে চলতে পারছি না। সমাজের সব ক্ষেত্রে এখনো কিন্তু তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারছি না। আমরা সমাজে সেই পরিবর্তন আনতে চাই।"