ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের মামলায় গ্রেপ্তার `প্রলয় গ্যাংয়ের’ দুই সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) রাশেদুল আলম সোমবার আসামি নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও সাকিব ফেরদৌসকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন ।
এ সময় দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো রিমান্ড চাওয়া হয়নি। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব আহমেদ তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন ফকির আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলের সামনে স্যার এফ রহমান হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী জুবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের পর ‘প্রলয় চক্রের’ এই সদস্যদের নাম সামনে আসে।
তাদের বিরুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক সেবন ও মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এই চক্রের সদস্যরা ক্যাম্পাসে সংঘবদ্ধভাবে চলাফেরা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসাকেন্দ্রের তৃতীয় তলায় তাদের একটি ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
ভুক্তভোগী জোবায়েরের মা সাদিয়া আফরোজ খান রোববার রাতে শাহবাগ থানার মামলা দায়ের করেন। সেখানে জোবায়েরকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের’ অভিযোগ আনা হয়। ১৯ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয় সেখানে।
ওই ১৯ আসামির মধ্যে দুর্জয় ও সাকিবকে রোববার রাতেই থানায় সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী জানান।
মামলার এজহারে বলা হয়, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে বিভাগের বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করছিলেন জোবায়ের। হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার বেপরোয়াভাবে যাচ্ছিল। গাড়ির গতি বেশি থাকায় তাদের গায়ে কাদার ছিটা লাগে। এ সময় গাড়ির ভেতরে উচ্চস্বরে গান বাজছিল।
সাদিয়া আফরোজ খান অভিযোগে লিখেছেন, “আমার ছেলে এবং তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ডাক দেওয়ার পরও গাড়িটি থামেনি। এরপর আমার ছেলে ও তার বন্ধুরা ইফতার শেষ করে কার্জন হলের দিকে যাচ্ছিল। বাংলা একাডেমি পার হওয়ার পর তিন নেতার মাজারের সামনে ওই গাড়িটা দেখে তারা চিনতে পারে। চালককে জিজ্ঞেস করে, এভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল কেন। পরে গাড়ি থেকে পাঁচজন ছেলে বের হয়। আমার ছেলে এবং তার বন্ধুরা দেখে যে তারা ক্যাম্পাসের ছাত্র।
“পরে তাদের একজন কথা না বাড়িয়ে চলে যেতে বলে। ক্যাম্পাসের ভেতরে কেউ এভাবে গাড়ি চালায় কি না, প্রশ্ন করলে অভিযুক্তরা উত্তেজিত হয়ে যায়। এ নিয়ে আমার ছেলে এবং তার বন্ধুদের সঙ্গে তাদের কথা-কাটাকাটি হয়।”
জোবায়েরের মা বলেন, “কথা-কাটাকাটির পর আমার ছেলে কবি জসীমউদ্দীন হলের দিকে চলে যায়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে তাকে ফোন দিয়ে সে কোথায় আছে জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে আমার ছেলে তার অবস্থান জানায়।
“কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অভিযুক্তরা জোবায়েরকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্টাম্প, রড, বেল্ট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে মাথা ও চোখে গুরুতর জখম হয়। ছিঁড়ে যায় ডান পায়ের লিগামেন্ট।”
মারধরের সময় জোবায়েরের বন্ধুরা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাদেরও এলোপাতাড়ি পেটানোর কথা বলা হয়েছে মামলার এজাহারে।
সেখানে বলা হয়, জোবায়ের ও তার বন্ধুদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়াসহ ভয়ভীতি দেখানো হয়। মারধরে জোবায়ের চেতনা হারিয়ে ফেললে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে জোবায়েরকে তার বন্ধুরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন: মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়া, সিফাত সাহিল, মো. সোভন ও সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ ওরফে সাইদ; সূর্য সেন হলের ফারহান লাবিব; মুহসীন হলের অর্ণব খান ও আবু রায়হান; কবি জসীমউদ্দীন হলের সাদ, রহমান জিয়া, মোশারফ হোসেন; জহুরুল হক হলের হেদায়েত নূর, মাহিন মনোয়ার, সাদমান তাওহিদ ওরফে বর্ষণ ও আবদুল্লাহ আল আরিফ; জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা ও জয় বিশ্বাস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফেরদৌস আলম ওরফে ইমন। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (দ্বিতীয় বর্ষ) শিক্ষার্থী।