প্রত্যয়কে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা তুলে নিয়ে ‘প্রতিশ্রুত’ সুপার গ্রেড এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেওয়ার দাবি করেছেন শিক্ষকরা।
Published : 25 Jun 2024, 08:44 PM
সর্বজনীন পেনশনের আওতায় নতুন করে ঘোষণা করা ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে আধাবেলা কর্মবিরতি পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকরা।
প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তকে ‘বৈষম্যমূলক’ বলে বর্ণনা করে তা তুলে নিয়ে ‘প্রতিশ্রুত’ সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করতে এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেওয়ার দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার এ কর্মসূচি পালনের ডাক দেয়।
সে অনুযায়ী এ দিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন জবি শিক্ষকরা, যা দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে। এ সময় তারা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক ঘণ্টা অবস্থান করেন।
সেখানে শিক্ষকরা বলেন, একটি কুচক্রী মহল অল্প কয়েকজন পেশাজীবীকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করে নিজেদের তার আওতামুক্ত রেখেছে। এ ধরনের স্কিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, “এটা আমাদের যৌক্তিক দাবি। আমরা আমাদের পেশার সুযোগ-সুবিধার কথা বলছি। শ্রীলঙ্কা ও নেপালের মত দেশেও শিক্ষকদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পে-স্কেল।
“পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একজন লেকচারারের পে-স্কেল আমাদের একজন অধ্যাপকের চেয়ে বেশি। আমাদের জন্য বর্তমানে যে সুযোগ আছে, সেটিকেও কেটে ফেলা হচ্ছে। আমরা শিক্ষক, আমরা আন্দোলন চাই না। আমাকে রাস্তায় রাখা হলে আমি গবেষণা করতে পারব না।”
জবি শিক্ষকদের ভাষ্য- সর্বজনীন শব্দটার যথার্থ ব্যবহার হওয়া উচিত। এ আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলন নয়, এটা শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি। এই আন্দোলন অর্থের জন্য নয়, শিক্ষকদের মর্যাদার জন্য। পেনশন স্কিমে প্রথমে প্রত্যয় স্কিম ছিল না, একটা কুচক্রী মহল এটিকে পরে নিয়ে এসে শিক্ষকদের তাতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মাশরিক হাসান বলেন, “আজ থেকে আমাদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু হল। আগামী দুই দিনও চলবে। ৩০ জুন আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করব। পরীক্ষা ও জরুরি কার্যক্রম এ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
“এ সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করব। তখন আমাদের হলের প্রভোস্ট হলে যাবেন না, কোনো বিভাগের চেয়ারম্যান বিভাগে যাবেন না, ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা ইনস্টিটিউটে যাবেন না। এমনকি যে শিক্ষকেরা প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন, তারাও দায়িত্ব পালন করবেন না।”
এর আগে একই দাবিতে গত ২৬ মে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার পেনশন স্কিম প্রত্যয় প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা।
‘প্রত্যয়’ স্কিমে যা বলা হয়েছে
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের।
গত ২০ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রত্যয় ঘোষণা করে তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে।
এর আগে গত ১৩ মার্চ ‘প্রত্যয় স্কিম’কে যুক্ত করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ এর ২৯ ধারার ক্ষমতাবলে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এসআরও আকারে প্রকাশ করা হয়।
সংশোধনী অনুযায়ী, সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগদানকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই স্কিমের নাম হবে ‘প্রত্যয়’ ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যমান কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে না এবং তাদের বিদ্যমান পেনশন বা আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
তবে, যাদের ন্যূনতম ১০ বছর চাকরি অবশিষ্ট আছে তারা আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রত্যয় স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবসর জীবনে মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন বিধায় ২০২৪ সালের ১ জুলাই এর পরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
যেভাবে শুরু হবে ‘প্রত্যয়’
এ স্কিমে অংশ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা (যা কম হয় তা) কাটা হবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে।
সেই টাকা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্পাস হিসাবে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন ফান্ড গঠিত হবে।
এ ফান্ড জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য মুনাফা এবং চাঁদা হিসেবে জমাকৃত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন দেওয়া হবে।
বিদ্যমান সিপিএফ (কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ড ফান্ড) ব্যবস্থায় কর্মচারী মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ দিয়ে থাকে।
‘প্রত্যয়’ স্কিমে প্রতিষ্ঠান দেবে মূল বেতনের ১০ শতাংশ, যা সিপিএফ ব্যবস্থা থেকে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।
এ স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা নিজ বেতন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একই পরিমাণ টাকা ৩০ বছর ধরে চাঁদা দিলে তিনি অবসরে যাওয়ার পর অর্থাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশন পাবেন।