ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ঘ’ ইউনিট বহাল রাখার দাবিতে উপাচার্যকে খোলা চিঠি দিয়ে ‘কঠোর’ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।
Published : 15 Feb 2022, 05:24 PM
মঙ্গলবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী এমন হুঁশিয়ারি দেন।
“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজন ছাড়া কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল চাচ্ছে না। ‘ঘ’ ইউনিট বহাল রাখার দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যেমে আমরা উপাচার্যকে খোলা চিঠি দিচ্ছি।
“‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা না করলে আমরা শুধু খোলা চিঠির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব না। শিক্ষার্থীদের সংঘটিত করে খুব দ্রুত আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ‘ক’ ইউনিটে, মানবিকে ‘খ’ ইউনিট, বাণিজ্যে ‘গ’ ইউনিট, বিভাগ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ’ঘ’ ইউনিট এবং চারুকলার জন্য ‘চ’ ইউনিটে পরীক্ষা নেওয়া হত।
উচ্চ মাধ্যমিকের বিভাগ পরিবর্তনের জন্য বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ইউনিটে আবেদনের যোগ্যতাপূরণ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে আবেদন করতে পারতেন।
তবে গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তিতে ক, খ, গ ও চ এই চার ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। অর্থাৎ ঘ ইউনিট থাকছে না।
এ খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ঘ’ ইউনিটের দায়িত্ব যাদের, সেই সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, তাদের মতামত না নিয়েই এই ইউনিট বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের দাবি, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত সাদ।
তিনি জানান, ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের সভায় ১৬টি বিভাগের একাডেমিক কমিটির সম্মতিতে ‘ঘ’ ইউনিট তুলে না দেওয়ার পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তার প্রতিবেদন একাডেমিক কাউন্সিলে পাঠানো হয়। তারপরও সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট একাডেমিক কমিটিসমূহের।
“ফলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ অধ্যাদেশ পরিপন্থী।”
প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের পেছনে সময়সাপেক্ষ ভাবনা ও যথাযথ আলোচনা প্রয়োজন জানিয়ে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেকটা ‘দায়সারা’ উপায়ে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “কিন্তু প্রশাসন হুট করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা না ভেবে, শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
“‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করার পর শিক্ষার্থীরা কিভাবে নিজেদের স্ব স্ব বিভাগ পরিবর্তন করে অন্য বিভাগের সাবজেক্টে ভর্তি হবে সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।”
করোনাভাইরাস মহামারীতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা মানসিক এবং একাডেমিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন জানিয়ে বলা হয়, “‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের মতো অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত তাদের সামগ্রিক কষ্ট বাড়িয়ে দিবে।”
বিভাগ পরিবর্তনে এই ইউনিট বহাল রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরে সাদ জানান, ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের ফলে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে।
এর আগে একজন বিজ্ঞান, বা মানবিক বা বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী তার নিজ ইউনিট এর সাথে সাথে ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে দুইবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেত।
“নিজ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থীরা ‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে আরেকবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেত। এই সুযোগটা এখন আর থাকছে না।
“আগে থেকেই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না থাকা ও প্রায় ১ হাজার ৪০টি আসন কমানোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে বলা যাচ্ছে যে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল হলে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ সংকুচিত হবে।
“অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধীরে ধীরে শিক্ষা সংকোচন নীতির দিকে এগোচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করেছে।
“সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আজ এরূপ অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা, সহ-সভাপতি সাদিকুল ইসলাম এবং প্রচার সম্পাদক মোজাম্মেলক হক উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন