শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে শিক্ষার্থী কমিয়ে আনার যে পরিকল্পনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করেছে, তাতে এবার ভর্তির আসন ১ হাজার ৪০টি কমে যাচ্ছে।
Published : 08 Feb 2022, 03:42 PM
দেশের সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়েটির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে বিদ্যমান ৭ হাজার ১২৫ আসনের মধ্যে ১ হাজার ৪০টি আসন কমিয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৬ হাজার ৮৫ টি আসনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের চাহিদার আলোকে ডিনস কমিটির প্রস্তাবের পর সোমবার সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় এই সংখ্যক আসন কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়।
ভর্তি কমিটির এই সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের আসন্ন সভায় আলোচনার পর চূড়ান্ত হবে।
আসন সংখ্যা পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে আসন সংখ্যা কমলেও কোনো কোনোটিতে আবার বাড়ছে।
শতবর্ষ পেরিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলের আহ্বান ছিল।
গত কয়েক দশকে অপরিকল্পিতেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট খোলায় শিক্ষক ও অবকাঠামোর অনুপাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
এতে শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা, গ্রন্থাগার সুবিধা, শ্রেণিকক্ষ ও পরিবহন থেকে শুরু করে সর্বত্র অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে।
আসন সংখ্যা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভর্তি পরীক্ষার মোট আসন শিক্ষার গুণগত মান, পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের জীবনমান, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগিতা প্রভৃতি সূচকের আলোকে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হয়। এরই আলোকে আসন সংখ্যা পুনর্নির্ধারিত হচ্ছে। এতে কোথাও বৃদ্ধি পেয়েছে, কোথাও কমেছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে ডিগ্রিপ্রাপ্তরা। ফাইল ছবি: মাহমুদ জামান অভি
কোন বিভাগে কত কমছে
ভর্তি কমিটি সবচেয়ে বেশি আসন কমানোর সুপারিশ করেছে কলা অনুষদের বিভাগগুলোর ক্ষেত্রে।
বর্তমানে অনুষদটির ১৭টি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তিতে আসন রয়েছে ১ হাজার ৮৭৫টি। ভর্তি কমিটি সেখানে ৫৩৫টি কমিয়ে ১ হাজার ৩৪০টিতে পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।
কলা অনুষদে বিভাগগুলোর যেসব বিভাগে আসন কমছে, তা হলো- বাংলায় ১৩২ থেকে ১১০, ইংরেজিতে ১৫০ থেকে ১১০, আরবিতে ১৫০ থেকে ১০০, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ১০০ থেকে ৭৫, উর্দুতে ১১০ থেকে ৭০, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজে ৯০ থেকে ৫০, ইতিহাসে ১৩০ থেকে ১১০, দর্শনে ১৭০ থেকে ১২০, ইসলামিক স্টাডিজে ১৮৫ থেকে ১০০, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ১৬০ থেকে ১১০, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় ৭৫ থেকে ৬৫, ভাষাবিজ্ঞানে ৯০ থেকে ৭০, সংগীতে ৮০ থেকে ৬০, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ১০০ থেকে ৬০ এবং নৃত্যকলা আসন ৩৫ থেকে ৩০টিতে।
একই অনুষদে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজে আসন সংখ্যা ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২৫ নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের নয়টি বিভাগের মধ্যে আটটিতেই আসন সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
এই অনুষদে ১ হাজার ২৫০ আসনের মধ্যে ২০০ আসন কমিয়ে ১ হাজার ৫০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, মার্কেটিং ও ফাইন্যান্স এই চারটি বিভাগের প্রতিটিতেই আসন সংখ্যা ১৮০ থেকে কমিয়ে ১৫০টিতে নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এই তিন বিভাগের প্রতিটিতে ১১৫ থেকে কমিয়ে ১০০ করার কথা বলা হয়েছে।
ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের আসন ১৫০ থেকে কমিয়ে ১০০ করার সুপারিশ এসেছে।
অন্যদিকে অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগে আসন ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হচ্ছে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি বিভাগে ১ হাজার ২২২ আসন থেকে ১৫২ আসন কমিয়ে ১০৭০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে।
বিভাগগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ২০০ থেকে ১৫০, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ১০০ থেকে ৮০, সমাজবিজ্ঞানে ১৮৫ থেকে ১৫০, লোকপ্রশাসনে ১১০ থেকে ৯০, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নে ৬০ থেকে ৪০, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজে ৪৫ থেকে ৪০, ক্রিমিনোলজিতে ৬০ থেকে ৫০, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারসে ৪০ থেকে ৩০ ও জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষার্থী আসন ৬০ থেকে কমিয়ে ৫০ করার কথা বলা হয়েছে।
আসন বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করা বিভাগগুলোর মধ্যে অর্থনীতিতে ১২৮ থেকে ১৩০, পপুলেশন সায়েন্সেসে ২৫ থেকে ৪০ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ২৮ থেকে বাড়িয়ে ৪০ করার কথা বলা হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা (৬৬), নৃবিজ্ঞান(৫৫), টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি (৩০) ও প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজে (৩০) আসন অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
বড় এ তিনটি অনুষদের বাইরে বিজ্ঞান ও প্রকৌশলসহ অন্য অনুষদগুলোর বেশিরভাগেই আসন সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে আসন কমানোর কথা বলা হলেও সেটি খুবই কম সংখ্যক। এছাড়া বেশকিছু বিভাগে আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখার কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞান অনুষদের পাঁচটি বিভাগে ৪৬৮ আসন থেকে ২ আসন বাড়িয়ে ৪৭০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। শুধু পরিসংখ্যান বিভাগের আসন ৮৮ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা রঙের আলোয় রঙিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল। ফাইল ছবি: মাহমুদ জামান অভি
জীববিজ্ঞান অনুষদে আটটি বিভাগের মধ্যে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশে ১২০ থেকে ১০০, উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ৭৫ থেকে ৭০, প্রাণিবিদ্যায় ১০০ থেকে ৮০ ও মনোবিজ্ঞানে ১৩০ থেকে কমিয়ে ৮০ করার কথা বলা হয়েছে।
জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগে আসন সংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান (৬০), অণুজীব বিজ্ঞান (৪০) ও মৎস্য বিজ্ঞানে (৪০) আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদে পাঁচটি বিভাগের ২৪৫ আসনের মধ্যে ১০ আসন কমিয়ে ২৩৫ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এর মধ্যে তিনটিতে বাড়ছে, একটিতে কমছে ও অন্য একটিতে অপরিবর্তিত থাকছে।
বিভাগগুলোর মধ্যে সমুদ্র বিজ্ঞানে ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনায় ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪০ ও আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগে ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫টি করার কথা বলা হয়েছে। আর ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ১২০ থেকে কমিয়ে ৮০ নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ভূতত্ত্ব বিভাগে (৫০) শিক্ষার্থী আসন অপরিবর্তিত থাকছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদে পাঁচটি বিভাগের মধ্যে কোনোটিতেই শিক্ষার্থী আসন কমানোর সুপারিশ আনা হয়নি।
নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ২৫ থেকে ৩০ ও রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২০ থেকে ২৫ নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। বাকি তিনটি বিভাগে আসন অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
ফার্মেসিতে আসন সংখ্যা ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ ও আইনে ১৩০ থেকে কমিয়ে ১১০ নির্ধারণ করার সুপারিশ আনা হয়েছে।
চারুকলা অনুষদের আটটি বিভাগের সাতটিতেই আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকছে। শুধু অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগে ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ করার কথা বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ইনস্টিটিউটে ৯১৫ আসন থেকে ৪০টি কমিয়ে ৮৬৫ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
এর মধ্যে তিনটিতে কমানো, দুটিতে বাড়ানো ও বাকি পাঁচটিতে শিক্ষার্থী আসন অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
ইনস্টিটিউটগুলোর মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণায় ১৬০ থেকে কমিয়ে ১২০, সমাজকল্যাণ ও গবেষণায় ১০৫ থেকে ১০০ ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ১৬০ থেকে কমিয়ে ১৩০ নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
আর পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞানে ৩৫ থেকে ৪০ ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করার কথা বলা হয়েছে।