আগামীর জন্য কী ভাবছে শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়?

বাঙালি মধ্যবিত্তের শিক্ষার বিকাশ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ভূমিকা থাকলেও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে শতবর্ষী এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষা ও গবেষণার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

রাসেল সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2021, 06:25 PM
Updated : 11 Sept 2021, 06:25 PM

শতবর্ষের হিসাব-নিকাশ করে দ্বিতীয় শতাব্দীকে সামনে রেখে বৈশ্বিক মানদণ্ডে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারণ ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতের ছক আঁকছে কর্তৃপক্ষ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল সেই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, “যেই উদ্যোগগুলো অতীতে নেওয়া হয়নি, আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আগামীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে রিাসর্চ-টিচিং নেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়।”

তিনি বলেন, “বর্তমান বিশ্বে আমরা তিন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় দেখি, টিচিং ইউনিভার্সিটি, রিসার্চ ইউনিভার্সিটি অথবা ইনস্টিটিউট, আরেকটি হলো টিচিং-রিসার্চ নেক্সাস ইউনিভার্সিটি।

“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা গবেষণা কাজ করি বটে, তবে টিচিং-রিসার্চ নেক্সাস ইউনিভার্সিটির নিম্ন পর্যায়ে আছি আমরা।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল

বৈশ্বিক র‌্যাংকিং দৌড়

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ (টিএইচই) বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২১-২২ সালের র‌্যাংকিং প্রকাশ করেছে। সেখানে বিশ্বসেরা ১ হাজার ৬৬১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০১ থেকে ১০০০ এর মধ্যে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেরা পাঁচশর তালিকায় না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির নির্দিষ্ট অবস্থান তালিকায় তুলে ধরা হয়নি।

এর আগে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা ‘কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস’ (কিউএস) প্রকাশিত জরিপেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৮০১ থেকে ১০০০ এর ভেতরে রাখা হয়।

টাইমস হায়ার এডুকেশনের জরিপ করা হয় শিক্ষার মান, গবেষণা, গবেষণা-উদ্ধৃতি, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিল্পের সঙ্গে জ্ঞানের বিনিময়ের ওপর ভিত্তি করে। 

আর একাডেমিক খ্যাতি, চাকরির বাজারে সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শিক্ষকদের গবেষণা এবং বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের উপর ভিত্তি র‌্যাংকিং করে ‘কিউএস’।

পাশের দেশ ভারত ও নেপালের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় সেরা পাঁচশর তালিকায় থাকলেও শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন সেই অবস্থানে নেই এমন প্রশ্নে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, “র‌্যাংকিং মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকার একটি বড় কারণ হল আমাদের ডকুমেন্টেশনে ঘাটতি।

“আমাদের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে র‌্যাংকিং মানের বিভিন্ন কাজ হয়। কিন্তু তাদের সব তথ্য আমাদের কাছে না থাকায় সেগুলো আমরা উপস্থাপন করতে পারি না। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়েও র‌্যাংকিং করা হয়।”

সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্মের তথ্যসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে হালনাগাদ করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট।

সেখানে তথ্য-উপাত্ত সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হলে বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করে উপ-উপাচার্য বলেন, “ওয়েবসাইট হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটলুক। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটাকে বিশ্ববদ্যিালয়ের মুখপাত্র হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

“আগামী এক বছর আরও পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষকদের গবেষণা কর্ম, পাবলিকেশন্স, সাইটেশন, জাতীয় পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনট্রিবিউশনের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সেটি আরও সমৃদ্ধ করা হবে।”

‘ইমপ্যাক্ট র‌্যাংকিংয়ে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়ে থাকবে- এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমাদের রাষ্ট্রের নেতৃত্ব ও জাতীয় উন্নয়নে প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ভূমিকা রাখছে। ইন্ডাস্ট্রি আউটকামে আমাদের শিক্ষার্থীরা কতটুকু ভূমিকা রাখছে, সেটা টাইমস হায়ার বা কিউএস সব ক্ষেত্রেই বিবেচনায় করা হয়।”

তিনি বলেন, “পৃথিবীতে এখন কনসেপ্টটা হল- একটা দেশে কয়টা বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেটা বড় বিষয় নয়, কয়টা বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত আছে, কয়টা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত এবং স্বীকৃত, বিদেশ থেকে কয়জন শিক্ষার্থী এখানে পড়তে আসছে, সেটা এখন বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। সেই বিবেচনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এই বিষয়গুলোর উন্নয়নে আমরা কাজ করছি।”

মহামারীর এই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ফাঁকা ক্যাম্পসে একজনের দেখা মেলে কার্জন হলে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, তাদের বিভিন্ন উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ‘ফান্ডেড স্কলারশিপের’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও অধ্যাপক মাকসুদ কামাল জানান।

এছাড়া গবেষণার জন্য তহবিল গঠন এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে শিক্ষক ও গবেষকদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য সর্বোচ্চ দুই হাজার ডলার পর্যন্ত অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব বিভাগে থিসিস নেই, সেখানে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য থিসিস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বিদেশি ফ্যাকাল্টি নিয়োগ

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করেছে। তাদের মধ্য থেকে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা, সাম্মানিক অধ্যাপনা অথবা ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা অনুযায়ী তাদেরকে সেই পদে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।

তিনি বলেন, “যে যেই ক্যাটাগরিতে যুক্ত হতে চান, আমাদের সক্ষমতা বিবেচনায় তাকে আমরা সেই ক্যাটাগরিতে রাখার চেষ্টা করব। সেজন্য আগামী দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা বাজেটও রাখবে।

“আমাদের যে সমস্ত প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিদেশি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। তারা যদি বছরের কোনো একটি সময় আমাদের অনলাইনে বা অফলাইনে দেয়, তখন অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে, অনারারি ফ্যাকাল্টি হিসেবে তাদেরকে আমরা আমাদের ডিপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটগুলোর সঙ্গে যুক্ত রাখব।”

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকতায় নিয়োজিত দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বিদেশি নাগরিকদেরও ফ্যাকাল্টি হিসেবে অন্তুর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।

তিনি বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অথবা দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও যদি বিদেশি কোনো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী তাদেরকে নানাভাবে যুক্ত করার চেষ্টা করব। এ নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছি।

“বিদেশি শিক্ষক আনার ক্ষেত্রেও আমরা পদেক্ষপ নিয়েছি। এটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও চালু করেছে। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও এটা চালু করার চেষ্টা করছি। এটা শুরুতে একসঙ্গে না হলেও ধীরে ধীরে বিকশিত হবে।”

তিনি বলেন, “মূল লক্ষ্য হল বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্তর্জাতিক মানের পড়ালেখা হয়, সেভাবে আমরা কারিকুলাম সাজাব। উন্নত বিশ্বে যারা গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছে, শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছে তাদের অভিজ্ঞতা আমরা এখানে কাজে লাগাব।”

পিএইচডি প্রোগ্রাম ও বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য স্কলারশিপ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল’ নামে একটি আবাসিক হল থাকলেও সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিদেশি শিক্ষার্থী তেমন নেই। সেখানে যারা থাকেন তাদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের বিদেশি শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর অনুপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পিএইচডি প্রোগ্রাম এবং বিদেশি শিক্ষার্থী আানার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ‘ফান্ডেড স্কলারশিপ’ চালু করছে জানিয়ে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, “বিদেশি শিক্ষার্থী আনার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব কোনো স্কলারশিপ প্রোগাম নেই, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবেও স্কলারশিপ প্রোগামের ব্যবস্থা নেই।

“আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফান্ডেড স্কলারশিপ প্রোগামের জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। এটা প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। এটা দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট ও সিনেটে যাবে অনুমোদনের জন্য।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামেও সেই স্কলারশিপ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সামনের বছর থেকে বিশেষ করে পিএইচডি প্রোগ্রামেও যাতে আসতে পারে, সেই সুযোগটা আমরা করে দেব। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরাও এই স্কলারশিপের আওতায় এখানে পিএইচডি করার সুযোগ পাবে।

“পৃথিবীর খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মত আমাদের এখানে পিএইচডি হয় না। এখানে পিএইচডি করতে বছরের পর বছর লেগে যায়। কারো ক্ষেত্রে চার বছর, কারো ক্ষেত্রে পাঁচ বছর, কারো ক্ষেত্রে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। সমসাময়িক বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে যে টুলসগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো কিন্তু আমরা বহুলাংশে সন্নিবেশ করতে পারি নাই।”

তিনি বলেন, “ডেডিকেটেড স্কলারশিপ প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে চার বছরের মধ্যেই তার পিএইচডি শেষ করার চেষ্টা করা হবে। ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালে তার প্রকাশনা থাকতে হবে। অন্তত দুটো প্রকাশনার শর্তে আমরা তাকে সেখানে রাখতে চাচ্ছি।”

এ নিয়ে নীতিমালা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা নিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন হয়ে গেলেই আমরা সরকারের কাছে আর্থিক বরাদ্দের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ খাত থেকেও অর্থ যোগানের ব্যবস্থা করব। আমাদের অ্যালামনাইদের কাছ থেকে ফান্ড কালেকশন করা হবে।”

স্নাতকোত্তরে থিসিস বাধ্যতামূলক

উচ্চশিক্ষা কিংবা গবেষণামুখী হওয়ার প্রথম ধাপ বলা চলে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থিসিস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩টি বিভাগ, ১২টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে চল্লিশটিরও বেশি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তরে থিসিস নেই।

সম্প্রতি সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থিসিস বাধ্যতামূলক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, “একজন শিক্ষার্থী ক্রিটিক্যাল অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে থিসিসের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চল্লিশটির বেশি ডিপার্টমেন্ট আছে, যেগুলোতে মাস্টার্স পর্যায়ে থিসিস নেই, আছে টার্ম পেপার ও মনোগ্রাফ। যার ফলে এই ডিপার্টমেন্টগুলোতে গবেষণা কাজ অপ্রতুল এবং পাবলিকেশন্স সংখ্যাও বেশি নয়।

“গবেষণাকে আমাদের সিলেবাস বা কারিকুলামকে ইন্টিগ্রেটেড করতে আমরা সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থিসিস বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে এই থিসিস করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে আমরা যে নীতিমালা করেছি, সেখানে বলা হয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি নয়। ডিাপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটকে আমরা ফ্রিডমও দিয়েছি।

“তারা যদি মনে করে তার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থীকে সঠিক সুপারভাইজারের নেতৃত্বে মানসম্পন্ন গবেষণা করাতে পারবেন, আমরা তাদের সেই ফ্রিডম দিয়েছি। মানসম্পন্ন গবেষণার জন্য সঠিক সুপারভাইজার না থাকলে, তার চেয়ে কমও নিতে পারবে।”

এছাড়া শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ও প্রায়োগিকভাবে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘গ্র্যাজুয়েট প্রমোশন অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।

এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক মান বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের শিক্ষার মানও যেমন বাড়বে, বৈশ্বিক র‌্যাংকিয়ে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যাব।

“আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা দেশের ভেতরে এবং বাইরে কন্ট্রিবিউট করার জন্য প্রস্তুত হতে যাচ্ছে। শতবর্ষ উপলক্ষে আমরা যে উদ্যোগগুলো হাতে নিয়েছি, এই উদ্যোগগুলো যদি বাস্তবায়িত হয়, আগামী চার পাঁচ বছরের মধ্যেই আমরা বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে পাঁচশর মধ্যে চলে আসতে পারব।”

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, “টিচিংয়ের দিক দিয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়ে আছি। গত একশ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৩৫ লক্ষ শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েট করেছে, প্রায় ১৮শ জনকে পিএইচডি দিয়েছে, প্রায় সাড়ে ১৬শ জনকে এমফিল ডিগ্রি দিয়েছে।

“আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা দেশে এবং বিদেশে মর্যাদার সঙ্গে কাজ করছে, আমাদের দেশের জাতীয় উন্নয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা ভূমিকা রাখছে। সুতরাং নেশন বিল্ডিং প্রসেসে এই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রিবিউশন অপরিসীম। সেটিকে যেন বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আরও বেশি অর্থবহ করা যায়, সেটিই হলো এই শতবর্ষী বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য।”