দেড় মাসের বেশি সময় শিক্ষা কার্যক্রম না চলায় দীর্ঘ সেশনজটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
Published : 25 Aug 2024, 09:15 AM
সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদ ছেড়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া প্রশাসনিক পদে দায়িত্বপ্রাপ্তরা; বিশ্ববিদ্যালয় খোলার এক সপ্তাহ পরও নানা অবস্থানে থাকা শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবি চলছে; অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় ক্যাম্পাসগুলো হয়ে আছে স্থবির।
অ্যাকাডেমিক-প্রশাসনিক কাজের দায়িত্বে শিক্ষকদের ফেরানো ছাড়া পরিস্থিতি যে বদলাবে না, তা মানছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে তিনি বলেন, “ভিসি, প্রোভিসি সবইতো খালি হয়ে আছে। যেখানে যতদূর পারা যায়, কোনো জায়গায় হয়ত পুরোটাই দেওয়া যাবে, কোথাও কোথাও শুধু ভিসিটা এখন দেওয়া হবে, এভাবে চেষ্টা করা হবে। এটা খুব শিগগিরই হবে।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার মধ্যে গত ১৬ জুলাই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরদিন বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে খালি করা হয় হলগুলো।
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পরদিন আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাস খুললেও এখনও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরেনি। এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ১৮ অগাস্ট রোববার থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেন।
এর আগে সার্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের বিরোধিতায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে ১ জুলাই থেকে বন্ধ ছিল ক্যাম্পাসগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিকে প্রশাসনহীন, অন্যদিকে কোথাও কোথাও প্রশাসনিক পদে থাকা ব্যক্তি ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। দেড় মাসের বেশি সময় শিক্ষা কার্যক্রম না চলায় দীর্ঘ সেশনজটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
প্রশাসনিক পদ থেকে অনেকের সরে যাওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের বলতে যে, শিক্ষাঙ্গনে কোনো বলপ্রয়োগ চলবে না।
“বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়েতো দলীয়ভাবে বা দলীয় পরিচয়ে কাউকে হেনস্তা করা একদমই অগ্রহণযোগ্য। এটা চলতে থাকলেতো পরিবেশ কখনই ভালো হবে না।”
তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, আমরা আহ্বান করছি, ছাত্র যারা সক্রিয় আছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কিছু প্ল্যাটফর্ম আছে, তারা এখনই চেষ্টা করছেন, তাতে এটা এখনই থামানো যায়। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি।”
দেশে প্রায় অর্ধশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত ৪২টিতে এখন উপাচার্য ও অন্যন্য গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্লাস পরীক্ষাও ব্যাহত হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে অন্যান্য বেসরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে।
অভিভাবকহীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্ষমতার পালাবদলে উপাচার্য, প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ ও ডিনদের পদত্যাগের হিড়িকে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রোববার থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দিলেও ক্লাসে যাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি, আন্দোলনের সময় যেসব শিক্ষক নিপীড়নকারীদের পক্ষ নিয়েছিলেন, তাদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না। শিক্ষার্থীদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন অনুষদে ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালাচ্ছেন।
উপাচার্য পদত্যাগ করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বে বহাল রয়েছেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার।
বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যে তলানিতে ঠেকেছে, এটাকে উদ্ধার করতে অনেক সময় লেগে যাবে। শিক্ষকরাতো ট্রমাটাইজড।”
জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিনের বাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুই শিক্ষকের ছবিতে জুতা নিক্ষেপের মত ঘটনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নাই, প্রক্টর নাই। প্রক্টর থাকলে তাদের কাউন্সিলিং করতে পারত। আমি নিজে যেভাবে রয়েছি, তারা তো আমার কথা সেভাবে শুনবে না। আমি তো একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাব। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত দিতে পারে। কিন্তু শিক্ষকদের এভাবে হয়রানি করা ঠিক না।”
সম্পর্কের অবনতি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদে দ্রুত নিয়োগের ওপর জোর দেন সাবেক উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এবং বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান।
অধ্যাপক আখতার বলেন, “একটা অস্বস্থিকর পরিবেশে সবাই আছে। এখান থেকে উত্তরণ দরকার। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একে অপরের সম্পূরক। এখানে ফাটল থাকার কোনো সুযোগ নেই।
“আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হলে, স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
অধ্যাপক লুৎফর বলেন, “প্রশাসনের যে শূন্যপদগুলো রয়েছে, সেগুলো যত দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে, তত দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে। প্রশাসন থাকলে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বসে তাদের প্রত্যাশা ও দাবি-দাওয়া সমাধান করতে পারবে। আমি মনে, বর্তমানে যে সমস্যা বিরাজ করছে, তা দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।”
বিশেষ কোনো দলের ‘ট্যাগ’ থাকবে, এমন কাউকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ দেওয়া না হয়, এমন চাওয়ার কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিলা হক অপরাজিতা।
“বছরের পর বছর বিভিন্ন দলীয় ভিসির হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া পূরণ করতে পারেননি, নানা শোষণের শিকার হয়েছেন, তাই তারা চান অসাম্প্রদায়িক, দলীয় ট্যাগবিহীন, শিক্ষার্থীবান্ধব নতুন একজন ভিসি।”
শিক্ষকদের বিষয়ে আন্দোলন চলার কথা তুলে ধরে এই শিক্ষার্থী বলেন, “ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে যেসব শিক্ষক ফ্যাসিবাদের নীরব সমর্থন করেছেন বা সরাসরি নীল দলের পক্ষে কন্ঠ তুলে নির্বিচারে নিরপরাধ ছাত্র-জনতার গণহত্যাকেই মতান্তরে সমর্থন করেছেন, তাদের কাছে আর যাই হোক, পাঠ নিতে আগ্রহী না।
“তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফ্যাসিবাদ সমর্থনকারী ডিন, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে শিক্ষকদের বয়কট ও পদত্যাগের দাবি তোলা হচ্ছে। রাজনীতিমুক্ত সুস্থ ক্যাম্পাস সবার চাওয়া।”
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাফা উসরাত জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এখনও খালি। দ্রুত এসব নিয়োগ হলেই বিশ্ববিদ্যালয় আগের মত সচল হবে।
"শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের সম্পর্কের যে অবনতি দেখা যাচ্ছে সেক্ষেত্রে প্রথমেই শিক্ষকদের উচিৎ শিক্ষার্থীদের সাথে বসা, তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো শোনা, আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সিদ্ধান্তে আসা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষকদের না, শিক্ষার্থীদেরও।"
কোনো কোনো বিভাগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বহিষ্কারের দাবিতেও ক্লাসে না ফেরার কথা বলছেন শিক্ষার্থীরা।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফেরাহ ফারহীন বলেন, “যেসব শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিল, তাদের এখনও অফিসিয়ালি বহিষ্কার করা হয়নি। যে ছাত্ররা জুলাই ১৫ তারিখে আমাদের গায়ে হাত তুলে জখম করেছে, ওদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাস করব না।
“ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং এর সাথে জড়িত শিক্ষক, কর্মচারীরা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ক্লাস শুরু করতে চায় না শিক্ষার্থীরা।”
ক্লাসে ফিরতে চান রাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুই উপ-উপাচার্য, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক, প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সব সদস্য, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকসহ প্রশাসনের অন্তত ৭৮ জন পদধারী ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন।
গত রোববার থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা থাকলেও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে দেখা যায়, উপাচার্য দপ্তর, জনসংযোগ দপ্তর, অর্থ ও হিসাব দপ্তর, সহউপাচার্যের দপ্তরসহ সবকটি অফিস খোলা ছিল। তবে শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করায় কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ না করলেও তাদেরকে দপ্তরে দেখা যায়নি।
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার থেকে স্বল্প পরিসরে ক্লাসে ফিরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ। এছাড়া সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মোহা. জামিরুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে একটি ব্যাচের ক্লাস নিয়েছেন।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম জানান, বুধবার থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। কম উপস্থিতি থাকায় বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ উজ জামান নিজের কক্ষেই তৃতীয় বর্ষের শুভেচ্ছা ক্লাস নিয়েছেন। ক্লাসে প্রায় ১৪ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
গত ৬ অগাস্ট থেকেই শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে শুরু করেছেন। কর্মকর্তারা জানিযেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৭টি আবাসিক হলের মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ২ হাজার ২৯০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা গত ১১ অগাস্ট হল প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এছাড়া হল রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৭ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে এর দুইদিন পর থেকেই বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ করতে দেখা যায়। এখন পর্যন্ত ১০ হলের প্রাধক্ষসহ ৩১ আবাসিক শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “রোববার প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়কসহ অন্যান্য প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে আমাদের এ ব্যাপারে আলোচনা হয়। আলোচনায় আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের স্বপদে মেয়াদ থাকা সাপেক্ষে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তারাও সম্মতি জানিয়েছিলেন।
“কিন্তু হঠাৎ তাদের এমন সিদ্ধান্ত আবারও প্রমাণ করে যে, তারা দলীয় রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তা না হলে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের এভাবে অরক্ষিত করে পদত্যাগ করতে পারতেন না।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি এখন তারা নিজেরাই নিশ্চিত করবে। সঙ্গে আমরাও কিছু পদক্ষেপ নেব যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।”
সরেজমিনে হলগুলোতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা যায়। তবে প্রতিটি হলেই হাজিরা খাতায় সই করে আবাসিক কার্ড থাকা সাপেক্ষে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বাভাবিক হওয়ায় দ্রুত ক্লাসে ফিরতে চান শিক্ষার্থীরা।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আগেই সেশন জটে ছিলাম। শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতিসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে আবারও জটে পড়েছি। আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল, ২টা পরীক্ষা দিয়েছি, আরও ৩টা বাকি। এ অবস্থায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। দ্রুতই পরীক্ষা-ক্লাসে ফিরতে চাই।"
ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শশি আহমেদ বলেন, “ভাইস চ্যান্সেলর না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালু করা যাবে না এমনটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিভাগের চেয়ারম্যান মহোদয়গণ চাইলে শুরু করতে পারেন। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ক্লাস শুরু করা যাচ্ছে না, এটা খোঁড়া যুক্তি।"
তবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আল মামুন বলছেন ভিন্ন কথা।
তিনি বলেন, “ক্লাস তো যেকোনো সময়ই চালু করা যেতে পারে। তবে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি দরকার। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। যেহেতু প্রশাসন নেই ক্লাস চালুর পর শিক্ষার্থীদের উপর কোনো হামলা হলে সে দায় কে নিবে?
“দ্রুতই এক সপ্তাহের মধ্যে ভিসিসহ প্রশাসনিক পদগুলোর নিয়োগের মাধ্যমে ক্লাস-পরীক্ষা চালু করে দেওয়া উচিত।"
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক তারিকুল হাসান বলেন, “বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপাচার্য নেই এবং ভারপ্রাপ্ত কাউকে দায়িত্বও দেয়া হয়নি। তাই শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপাচার্য না থাকায় এ মূহুর্তে সিন্ডিকেট সভাও সম্ভব নয়।"
সেশনজটের শঙ্কায় শাহজালালের শিক্ষার্থীরা
অভিভাবকশূন্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা চলায় সেশনজটের শঙ্কায় প্রায় নয় হাজার শিক্ষার্থী।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা আশা বলেন, “এতদিনে আমাদের নতুন একটা সেমিস্টার শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন ও ঈদের ছুটি পরবর্তীতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হয়েছে। সবমিলিয়ে আমাদের জীবন থেকে তিন মাসের অধিক সময় চলে গেছে।
“এসব কারণে সময়মত গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন না হওয়ায় চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না শিক্ষার্থীরা। যারা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাইবে তাদেরও একটি সেশন হারাতে হচ্ছে। এছাড়া করোনাভাইরাস মহামারী আমাদের সকলের জীবন থেকে প্রায় দেড় বছর সময় নষ্ট করেছে। সিলেটের আকস্মিক বন্যার কবলেও অনেক সময় নষ্ট হয়েছে শিক্ষার্থীদের।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মখলিসুর রহমান (পারভেজ) বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামের কারণে সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি কিছু সেবার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরকে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা রাখতে সম্মতি দিয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রত উপাচার্য নিয়োগ না দিলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে সচলতা ফিরবে না বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আল আমিন।
তিনি বলেন, “যেহেতু একটি সফল অভুত্থানের মাধ্যমে সরকরের পতন হয়েছে, তাই নতুন যে সরকার গঠন হয়েছে সেই সরকারকে সময় দিতে হবে। কারণ খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে অবার একই মানুষের প্রশাসনিক কার্যক্রমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
“যে কোনো বিপ্লব ও উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট তৈরি হয়। তবে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা ও প্র্যাকটিক্যালে সময় দিয়ে সেমিস্টার সম্পন্ন করলে এই জট কাটানো সম্ভব।”
জগন্নাথের ভার কোষাধ্যক্ষের কাঁধে
বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির মধ্যে পদ ছেড়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরিয়াল বডি, প্রাধ্যাক্ষ, পরিবহন প্রশাসকসহ প্রশাসনিক পদধারীরা।
এখন নিজ উদ্যোগে ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার নিয়োগ, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানের রদবদলসহ উপাচার্যের দায়িত্বভার পালন করছেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর চৌধুরী; যেটাকে ‘নিয়মবহির্ভূত’ বলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকে।
উপাচার্যসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন ফলপ্রসূ হলেও নতুন ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মাণ, জবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন, গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসা, ক্যান্টিনের খাবার মানবৃদ্ধি, অবৈধ নিয়োগ বাতিল, পোষ্যকোটায় ভর্তি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবি আসছে শিক্ষার্থীদের দিক থেকে।
বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনায় মদদদাতা শিক্ষকদের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা অনড় রয়েছেন। ফলে ক্যাম্পাস খুললেও বিভাগগুলো পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, সেশনজট নিরসনে দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী চয়ন কৃষ্ণ দেব বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীতে আমাদের প্রায় দেড় বছর সময় নষ্ট হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আরও দুই মাস পড়াশোনার বাইরে। এখন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা উচিত। সেশনজট কিছুটা হলেও কমানোর জন্য দ্রুত ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রমে ফেরা উচিত।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবি তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটা অংশ।
সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা হাসান বলেন, “শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০০ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক আছেন ১৫০ জন। এর মধ্যে গ্রেড-১ অধ্যাপক ৪০ জন আছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ডেপুটেশনে অন্য জায়গায় গিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ারও যোগ্যতা রাখেন তারা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার পরিবর্তন আসুক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ হওয়া উচিত।”
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী স্বর্ণা রিয়া বলেন, “আমরা চাচ্ছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি নিয়োগ হোক। কিন্তু কোনো দলীয় শিক্ষক আমরা চাই না। দলীয় শিক্ষক উপাচার্য হলে তিনি পরে দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে। এটা আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেব না।”
দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে অচলাবস্থা নিরসনের কথা বলছেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদদীন।
তিনি বলেন, “যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা কাকে উপাচার্য হিসেবে চান, সেদিকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”
একই দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাশরিক হাসানেরও।
“জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রায় অচলাবস্থা চলছে। কয়েকটি বিভাগ ছাড়া অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। দাপ্তরিক কাজেও বিঘ্ন ঘটছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত স্বার্থে অধ্যাপকগণের মধ্য থেকে সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নেই
সরকার পতনের দুদিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ১৭ আগস্ট থেকে হলে আসন বরাদ্দ দিয়ে ১৯ আগস্ট থেকে সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ১০, ১২ ও ১৩ আগস্ট একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুই উপ-উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি এবং সব আবাসিক হলের প্রভোস্টরা পদত্যাগ করায় প্রশাসনের সব পদ খালি হয়ে যায়।
প্রশাসনহীন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সচল করা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষকরা বলছেন, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একাডেমিক কার্যক্রম সচল করার জন্য সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। আবার সিন্ডিকেট সভা ডাকার অধিকার কেবল উপাচার্যেরই রয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট থেকে শাটল চলাচল শুরু হয়। তবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম এবং হলে আসন বরাদ্দের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্রী সামিরা ইসলাম বলেন, "প্রশাসন না থাকায় যে অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা ঠিক করতে অনতিবিলম্বে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন দরকার। আমরা কোনো দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করবে এমন ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে চাচ্ছি না এবং এ বিষয়ে দলীয় ব্যাকগ্রাউন্ডের কাউকে ভরসা করতে পাচ্ছি না, কারণ অতীতে আমরা এমন কাউকেই দলীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে দেখিনি।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষক কর্তৃক নির্বাচিত সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরির প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "শিক্ষার্থীরা অনেকদিন পড়াশোনা থেকে বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারকে উপযুক্ত উপাচার্য নিয়োগ করে ভূমিকা রাখতে হবে।"
জাহাঙ্গীরনগরে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
১৮ অগাস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হেনস্তার শিকার হন এক নারী শিক্ষার্থী। কিন্তু ঘটনার বিচার দাবিতে প্রক্টর অফিসে গিয়ে ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা দেখতে পান, পুরো প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগের কারণে অভিযোগ জানানোর মতো কেউ নাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম পদত্যাগ করছেন ৭ আগস্ট। এরপর দুই উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরিয়াল বডি এবং কয়েকটি হলের প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন।
এমন পরস্থিতিতে নিরপত্তা শঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগেই ক্লাস শুরু হয়নি গত সপ্তাহে। তবে এই রোববার থেকে ক্লাস শুরু হলে শিক্ষর্থীরা অংশ নেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য প্রশাসনিক কাজেও জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মালিহা নামলাহ বলেন, "হাইয়ার অথরিটি না থাকায় অনেক কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। পরিচিতদের মধ্যে অনেকেই সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলন, নামের বানান সংশোধনের জন্য দেড়-দুই মাস আগে আবেদন করেছিলেন, কিন্তু এখনো এসব বিষয় সুরাহা হয়নি। আর উপার্চায না থাকায় এগুলো করা সম্ভবও হবে না।"
উপার্চায না থাকায় বেতন পাননি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী ও আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত কর্মচারীরাও।
শিক্ষকরা বলছেন, বিশ্ববদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় দ্রুত নিয়োগ প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, "ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের আঙ্গিকে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজানো জরুরি। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে প্রশাসনিক পদগুলোয় নিয়োগ গুরুত্বর্পূণ।"
[প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাসুম বিল্লাহ। তথ্য ও ছবি পাঠিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাসেল সরকার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি অনুপম মল্লিক আদিত্য, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নোমান মিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হাসিব জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শেখ ফাহিম আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. জারিফ খন্দকার]