’ফ্যসিবাদ’ প্রতিষ্ঠায় সংবাদমাধ্যমের মদদ থাকার কথাও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তুলে ধরেন।
Published : 21 Oct 2024, 12:43 AM
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মনে করেন শেখ মুজিবুর রহমান ‘স্বৈরতন্ত্রের’ রাস্তা দেখিয়ে গেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বাবার পথেই গত ১৫ বছর হেঁটেছেন।
রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ‘ফ্যাসিবাদী বয়ান নির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন তিনি।
‘ডায়লগ ফর ডেমোক্রেস ‘নামের একটি সংগঠন আয়োজিত এ সভায় মাহমুদুর বলেন, “শেখ মুজিব দেশের ফেরার পর প্রথম যে ব্যবস্থাগুলোকে ধ্বংস করেছেন তার মধ্যে অন্যতম গণতন্ত্র। বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিলেন তিনি। সাড়ে তিন বছরের শাসনে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছেন, দুর্ভিক্ষে মানুষ মরেছে, রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে হাজার হাজার বিচারবর্হিভূত হত্যা করেছেন।
”দেশের সব মিডিয়া, বিরোধীমতের কণ্ঠকে রোধ করেছেন। আজ শেখ মুজিব বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের রাস্তা দেখিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা তার বাবার পথেই গত ১৫ বছরে হেঁটেছেন।"
‘ফ্যাসিবাদ’ প্রতিষ্ঠায় বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করে তিনি অভিযোগ করেন, “বিরোধীমত দমন করার জন্য তারা এই বিষয়গুলোকে গত ১৫ বছরে কাজে লাগিয়েছে।"
’ফ্যসিবাদ’ প্রতিষ্ঠায় সংবাদমাধ্যমের মদদ থাকার কথা তুলে ধরে আমার দেশ সম্পাদক বলেন, "গত ১৫ বছরে মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে অসংখ্য মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। জঙ্গি কার্ড ব্যাবহার করা হয়েছে ইসলামিফোবিয়া ছড়ানো হয়েছে। সেটি প্রচারে বেশ কিছু পত্র-পত্রিকা সেখানে অগ্রগন্য ভূমিকা পালন করেছে। এখনও আমরা দেখছি সেই মিডিয়াগুলো ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে কাজ করে যাচ্ছে। তারা বলছে শেখ হাসিনা খারাপ, কিন্তু শেখ মুজিব ভালো।
”ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামও দেখছি সে কথা লিখেছেন। কিন্তু শেখ মুজিবের প্রত্যাবর্তনের পরের চিত্র শেখ হাসিনার থেকে ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্টের চিত্র। মিডিয়ার উচিত ১৫ বছরে যা হয়েছে সেটা নিয়ে রিভিজিট করা। সেই সঙ্গে আর্থিক খাতগুলোতে কীভাবে আওয়ামী সরকার প্রকল্পের নামে দুর্নীতি করেছে তার পর্দা ফাস করা।"
সভায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অভিযোগ করে বলেন, “গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং গণমাধ্যম কীভাবে তা বৈধতা দিয়েছে তা ইতিহাসে খুব অদ্বিতীয় ঘটনা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশ এবং বিশ্বের গবেষরা একটি নির্মোহ গবেষণা করতে পারেন।
”গণ অভূত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে আমরা যেন কখনই কোনো জনগোষ্ঠীকে বাদ না দেই। গত ১৫ বছরের প্রতি পরতে পরতে এটা ছিল। বিভিন্ন পত্রিকা শিরোনামের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকে ন্যায্যতা দিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকে ন্যয্যতা দিয়েছে। ২০১৩ সালের ৬ মে হেফাজতের উপর ’ক্রাকডাউনের’ পর একটি পত্রিকার লেখক প্রথম পাতায় হেফাজতকে ‘এনশিয়েন্ট অ্যানিমাল’ এর সাথে তুলনা করেছে। কীভাবে গণতন্ত্র না থাকাই ভালো, তা দেখানো হয়েছে।“
সংবাদমাধ্যমকে সঠিক পথে আনতে সব মতের মানুষকে জায়গা দিতে হবে বলে তিনি তুলে ধরেন। গত ১৫ বছরে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে একটি নিজস্ব অনুসন্ধান করতেও সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।