“সকল কোটা বাতিলের নামে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কোটা বাতিল করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের এই বিভ্রান্তিকর অবস্থানের বিপরীতে শুধু স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন নয়, চাই সচেতন ছাত্র আন্দোলন।”
Published : 07 Jul 2024, 04:15 PM
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল এবং নারী, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটা বহাল রেখে এই প্রথার ‘যৌক্তিক সংস্কার’ দাবি করেছে ৭ বাম ছাত্র সংগঠনের মোর্চা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’।
রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে করে এ দাবি জানান জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “২০১৮ সালে আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা যখন সমস্ত কোটা বাতিলের বিভ্রান্তিকর ঘোষণা দেন, তখন আমরা বামপন্থি প্রগতিশীল সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলাম। কোটা সংস্কার আন্দোলনে তৎকালীন সুবিধাবাদী, আপসকামী নেতৃত্ব তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে শেখ হাসিনার দুরভিসন্ধিমূলক ঘোষণা মেনে নেয়।
“তখন বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি নারী ও আদিবাসী কোটা বাতিল হওয়াকে নিজেদের আদর্শিক বিজয় মনে করেছিল। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কোটা পদ্ধতিতে বৈষম্যের অবসান হয়নি। এখনও শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে পোষ্য কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ বিভিন্ন বৈষম্যমূলক কোটা জিইয়ে রাখা হচ্ছে। আবার এই বৈষম্য দেখিয়ে সকল কোটা বাতিলের নামে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কোটা বাতিল করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের এই বিভ্রান্তিকর অবস্থানের বিপরীতে শুধু স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন নয়, চাই সচেতন ছাত্র আন্দোলন।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
ওইদিনই রায় প্রত্যাখান করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন। একই দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
এ আন্দোলনে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি কোটাপ্রথার ‘যৌক্তিক’ সংস্কারও দাবি করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক রাগীব নাঈম।
তিনি বলেন, “সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ এদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ আন্দোলন করে আসছে। সর্বশেষ ৫ জুন ২০২৪ তারিখে হাইকোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে আবারও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা চালু হওয়ায় সারাদেশের ছাত্রসমাজ আন্দোলনে নেমেছে।
“ইতিমধ্যে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন চলছে। রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের লড়াকু অবস্থানের প্রতি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট একাত্মতা পোষণ করছে। একইসাথে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে সচেতন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট্রের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি দীপা মল্লিক, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তওফিকা প্রিয়া।