সমিতির সভাপতি বলেন, “যারা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি, তারাই পুনরায় এর দায়িত্ব পাচ্ছে।”
Published : 20 Jan 2024, 11:32 PM
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এবারও নানা আপত্তি সামনে আনছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
তারা চান, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘স্বচ্ছ’ নীতিমালায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হোক, আর তখনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তাতে অংশ নিক।
শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় থাকতে দশ দফা শর্ত তুলে ধরা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, “যারা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি, তারাই পুনরায় এর দায়িত্ব পাচ্ছে। তাছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিকে ব্যাহত করার জন্যই একটি পক্ষ কাজ করে যাচ্ছে।
“আমরা শর্তসাপেক্ষে গুচ্ছতে যাওয়ার পক্ষে রায় দিলেও আমাদের শর্তগুলো পূরণ হয়নি। একরকম বাধ্য করা হচ্ছে আমাদের গুচ্ছতে থাকতে।”
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কাটাতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি শুরু হলেও বর্তমান ব্যবস্থাপনায় তা ভোগান্তির কারণ হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সেখানে বলা হয়, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট তৈরি হচ্ছে। দক্ষ শিক্ষার্থী বাছাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা হচ্ছে।
এই যুক্তিতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন এবং দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে চলতি বছরের ১ জুলাই নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরুর দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, “গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বৃদ্ধির কারণগুলো কার্যকর নিরসনের পদক্ষেপ নেওয়া এবং গুচ্ছ পরিচালনাকারীদের অদক্ষতা ও সীমাবদ্ধতাগুলোর সমাধান করা হয়নি।
“দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, যারা গুচ্ছ প্রক্রিয়ার মত সরকারের এত সুন্দর একটি উদ্যোগকে ব্যর্থ করলেন, তাদের হাতেই বারবার গুচ্ছ ভর্তির দায়িত্ব বর্তেছে। আমরা অতীতের কার্য বিবেচনায় এবারের গুচ্ছ ভর্তির সাফল্য নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছি।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গুচ্ছে যেতে চায় না জানিয়ে শেখ মাশরিক হাসান বলেন, গুচ্ছে যদি যেতেই হয়, তাহলে আগে ১০ দফা দাবি পূরণ করতে হবে।
আগামী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এনটিএ (ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি) গঠনের মাধ্যমে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে ক্লাস শুরু করা।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত স্কোর ও মেধাক্রম প্রকাশ। ভর্তি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও মাইগ্রেশনের জটিলতা নিরসন।
আর্থিক স্বচ্ছতার জন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষদের সমন্বয়ে শক্তিশালী একটি নিরীক্ষা টিম গঠন করে গত তিন শিক্ষাবর্ষের আয় ও ব্যয়ের নিরীক্ষা কার্য সম্পন্ন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেওয়া।
দেশের সকল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা গুচ্ছ করা।
শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা অনুযায়ী ভর্তি পূর্ণ করা।
ভর্তির আবেদন ফি কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ।
ভর্তি আবেদন ফি ব্যতীত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন, মাইগ্রেশন, ভর্তি বাতিল বা অন্য কোনো কারণে অর্থ প্রদান করবে না তা নিশ্চিত করা
গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আসন সংখ্যা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না করে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক আবেদনের সংখ্যা অনুযায়ী অর্থ প্রদান।
পরীক্ষা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহের জন্য এবং এর স্বচ্ছতার জন্য একটি সুস্পষ্ট আর্থিক নীতিমালা প্রণয়ন।
ভর্তীচ্ছুদের ভোগান্তি কমাতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া শুরু হলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও সেই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়।
কিন্তু ২০২৩ সালে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বকীয়তা’ ধরে রাখতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এককভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির দাবি তোলে।
গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে বেশ কিছুদূর এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির নির্দেশে গুচ্ছ পদ্ধতিতেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় গতবছর।
কিন্তু গতবছর যেসব শর্তে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হয়েছিল, সেগুলো পূরণ হয়নি দাবি করে এবার নতুন করে আপত্তি জানাল শিক্ষক সমিতি।