সোমবার সকাল থেকে জগন্নাথ হলের মাঠে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে সরস্বতীর আরাধনা করবেন শিক্ষার্থীরা।
Published : 02 Feb 2025, 12:44 AM
বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর কৃপা-লাভের আশায় এবার ৭৪ মণ্ডপে পূজার আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল।
সোমবার সকাল থেকে জগন্নাথ হলের মাঠে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে সরস্বতীর আরাধনা করবেন শিক্ষার্থীরা।
এবারও হলের খেলার মাঠের চারিদিক দিয়ে বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা পূজার আয়োজন করেছে। ৭৪টি মণ্ডপের বেশির ভাগই বিভিন্ন বিভাগের 'থিমের' আদলে গড়া।
অন্য বছরের মত এবারও এ হলের পুকুরের মাঝে বসানোর জন্য দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা তৈরি করেছে চারুকলা অনুষদ।
ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এ পূজার মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
শনিবার সন্ধ্যায় হল প্রশাসন এবং পূজা উদযাপন কমিটির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে এবারের সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিক পর্ব শুরু হবে।
হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জগন্নাথ হলের পক্ষ থেকে একটি, বিভাগ ও ইনস্টিটিউশনগুলোর পক্ষ থেকে ৭২টি এবং হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যুবাদের সংগঠন থেকে একটি মণ্ডপের আয়োজন করা হয়েছে। পূজার সার্বিক তত্ত্বাবধানে হল প্রশাসনের মোট ১১টি উপ-কমিটি কাজ করছে।
“জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার এক মহান প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। এবারের সরস্বতী পূজা তাই এক ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজিত হতে চলেছে।”
এবার জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে দুদিনব্যাপী এ আয়োজনে থাকছে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং রক্তদান কর্মসূচি।
এছাড়াও হলের অভ্যন্তরে দর্শনার্থী শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদন উপযোগী বেশ কিছু রাইড, খেলনা ও খাবার দোকানের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এবারের পূজায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ২৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মানসী চৌধুরী জানান এবারের তাদের প্রতিমাটি পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মানসী বলেন, "এবারে দেবী সরস্বতীর প্রতিমাতে বাঁশ এবং শীতল পার্টির ব্যবহার রয়েছে। অধিকাংশ অঙ্গই এসব দ্বারা বানানো হয়েছে। বীণার পুরো অংশটি বাঁশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে। তবে হাতগুলো নির্মাণ করতে ককশিটের ব্যবহার করতে হয়েছে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রাবস্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এবার বসন্ত পঞ্চমী তিথি সকাল ১০টা ৪৭ এ শেষ হবে।
“বাণী বন্দনা, পুষ্পাঞ্জলী ও হাতেখড়ি সবই বসন্ত পঞ্চমীর তিথি শেষ হওয়ার আগে পালন করতে হয়। সকাল ৯ টার আগেই বাণী বন্দনা হওয়ার কথা রয়েছে। "
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বাঁধন দেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, " এবছর আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে এমন একটি থিম ধরা হয়েছে যা মানুষকে ভাবাবে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা বাংলাদেশে আছে কিনা? বাকিটা পূজোর দিন দেখা যাবে।”
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভগবানের জ্ঞান ও বিদ্যার রূপ হলেন দেবী সরস্বতী। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যাদেবীর পূজা হয়। হাতে বীণা থাকে বলে সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়।
সাদা রাজহাঁস এ দেবীর বাহন। ঐতিহ্য অনুযায়ী এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে বিদ্যাদেবীর মন্দিরে সন্তানদের প্রথম বিদ্যার পাঠের হাতেখড়ির আয়োজন করেন।
দেবাশীষ পাল বলেন, “পূজার সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, বর্ডার গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
“পুরো হলে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি হলের প্রবেশমুখে মেটাল ডিটেক্টরসহ অন্যান্য প্রযুক্তি থাকবে। একই সাথে পটকা বা আতশবাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ স্টিকার সরবরাহ করা হয়েছে।”
এর বাইরে পূজা উপলক্ষে হলের শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার পাশাপাশি হলে মোটরসাইকেল প্রবেশে অনুমতি নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে হল প্রশাসনের নির্দেশনায়।
আর অতিথিদের জন্য নির্দেশনায় বলা হয়েছৈ, তারা হাই কোর্ট ও বকশীবাজার দিয়ে আগত অতিথিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এবং নীলক্ষেত, শাহবাগ ও পলাশী দিয়ে আগতরা হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে যানবাহন পার্কিং করতে পারবেন।
এছাড়া দর্শনার্থীগণ হলের দক্ষিণ দিকের গেইট (বুয়েট সংলগ্ন) বা উত্তর দিকের গেইট (টিএসসি সংলগ্ন) দিয়ে প্রবেশ ও প্রস্থান করতে পারবেন।
দক্ষিণ গেইট সংলগ্ন অতিথি কক্ষে ‘ব্রেস্ট ফিডিং’ কর্নারে মায়েরা তাদের শিশুদের দুগ্ধপান করাতে পারবেন।
অতিথিদের রাত ১০ টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে নির্দেশনায়।
পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মিঠুন কুমার সাহা এবং হলের আবাসিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।