চামড়া শিল্পে দূষণ: শিল্প ও বাণিজ্য সচিবকে তলব করবে সংসদীয় কমিটি

শিল্পমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকেও বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2022, 03:39 PM
Updated : 22 August 2022, 03:39 PM

সাভারের চামড়া শিল্পীনগরীর দূষণ বন্ধে ‘দৃশ্যমান অগ্রগতি’ না হওয়ায় শিল্প ও বাণিজ্য সচিবকে তলব করতে যাচ্ছে সংসদীয় কমিটি; বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হবে দুই মন্ত্রীকেও।

কমিটির পরের বৈঠকে দুই সচিবকে তলব করা হবে বলে সোমবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে “এ বিষয়ে কী করা হচ্ছে, সেজন্য আগামী বৈঠকে শিল্প ও বাণিজ্য সচিবকে ডাকা হবে। আমরা শিল্পমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানাব।

“তাদের আমরা অনুরোধ করব, যদি তারা সময় করতে পারেন তবে আসবেন। কিন্তু দুই সচিবকে অবশ্যই থাকতে হবে।”

সাভারে ট্যানারির দূষণ নিয়ে গত দেড় বছরে শুধু সভাই হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। তাদের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। আমরা বলেছি, এখন থেকে এ নিয়ে যত মিটিং হবে তাতে নেতৃত্ব দেবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয় অন্যদের ডাকবে। কারণ এটা পরিবেশের বিষয়।”

অনেক টানাহেঁচড়ার পর ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরের শিল্পনগরীতে ট্যানারিগুলো যেতে বাধ্য হয়। আর এ শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজ এরও অর্ধযুগ আগে শুরু হলেও এখন সিইটিপিসহ পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক)।

Also Read: চামড়া শিল্পনগরে দূষণ: সংসদীয় কমিটির 'পদক্ষেপ' কাজে আসছে?

Also Read: চামড়া শিল্পনগরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যানের

Also Read: সাভারে ট্যানারি বন্ধে অভিযান চায় সংসদীয় কমিটি

সব ধরনের বর্জ্য পরিশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার বা সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (সিইটিপি) কাজ শেষ না হওয়ায় শিল্পনগরীর ট্যানারিগুলো দূষিত করছে আশেপাশের এলাকা এবং নদীর পানি।

ওই নগরীতে ১৫৫টি ট্যানারিকে জমি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার তৈরি করে দেওয়ার কথা বিসিকের। তারা এ জন্য একটি চীনা কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয় ২০১২ সালে। তবে তারা যথাসময়ে সিইটিপি পুরো চালু করতে পারেনি। আবার এই সিইটিপির সক্ষমতা ও কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

দূষণে বিপর্যস্ত হচ্ছে পুরো শিল্পনগরী। ট্যানারির কারখানা থেকে বর্জ্য ফেলা হয় ডোবার ভেতরে। স্থানীয়রা জানায়, রাতের আঁধারে তা ফেলা হয় ধলেশ্বরী নদীতে। এতে বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশের এলাকায়।

সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হয়, যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ঘনমিটার।

সংসদীয় কমিটি বলছে, দৈনিক ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিবেশে মিশছে। গত তিন বছরে এক কোটি ৬৪ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে গেছে। এর বাইরে ক্রোমিয়াম শোধনের ব্যবস্থাও নেই সেখানে।

এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে গত বছরের অগাস্টে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হওয়ায় সাভারের চামড়া শিল্পনগরী ‘আপাতত বন্ধ রাখার’ সুপারিশ করে।

কমিটির সুপারিশের পর পরিবেশ অধিদপ্তর বিসিককে চিঠি দেয়। চামড়া শিল্পনগরী ‘কেন বন্ধ করা হবে না’, তা বিসিকের কাছে জানতে চায় সংসদীয় কমিটিও। তবে ওই বক্তব্য ‘সন্তোষজনক নয়’ বলে জানিয়েছিল কমিটি।

এরপর সংসদীয় কমিটি প্লট ধরে ধরে অভিযান চালিয়ে দূষণে জড়িত ইউনিটগুলো বন্ধের সুপারিশ করে। গত ১৭ জুলাই কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশও আসে।

সোমবারের বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন বলেন, “আমাদের জানানো হয়েছে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান কমপ্ল্যায়েন্স অনুসরণ করেছে। তাদের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু যারা করছে না তাদের বন্ধ করতে হবে। কমপ্ল্যায়েন্স না ঠিক করে ট্যানারি চালাবে- এটা হতে দেওয়া যায় না।”

পরিবেশের গুণমান জানার জন্য বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ‘পরিবেশ দক্ষতা সূচক’ ও ‘স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টিং’ প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন সাবের।

তিনি বলেন, “পরিবেশ দক্ষতা সূচক প্রণয়নের অংশ হিসেবে প্রথমে ৪/৫টি নির্দেশক যেমন বায়ুদূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ বিবেচনা করা হবে।”

এ সূচক প্রণয়নের জন্য সব অংশীজনের সঙ্গে সভা করার কথাও জানান তিনি। পরিবেশ দক্ষতা সূচক তৈরির পর প্রথম বছরকে ‘বেইজ ইয়ার’ হিসেবে ধরা হবে।

‘স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টিং’ প্রণয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এর মূল্য বাড়ল না কমলো তা জানার জন্য এটি করা হবে।

বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে এনফোর্সমেন্ট অভিযানের মাধ্যমে কতজনকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে তার হালনাগাদ তথ্য আগামী সভায় উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে।

এছাড়া বালু মহাল ইজারায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

Also Read: দূষণ: সাভার শিল্পনগরীর ভবিষ্যত কোন পথে

Also Read: চামড়া শিল্পের জন্য পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব

Also Read: সাভারের ট্যানারি কেন বন্ধ হবে না, বিসিকের কাছে ব্যাখ্যা দাবি

Also Read: ‘চামড়া বর্জ্যে হাজারীবাগের পরিণতি হচ্ছে হরিণধরায়’

সভায় শব্দ দূষণরোধে হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি ও প্রস্তুত নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও কমিটি সুপারিশ করে।

সাবের হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল জয়, রেজাউল করিম বাবলু ও খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশ নেন।