‘চামড়া বর্জ্যে হাজারীবাগের পরিণতি হচ্ছে হরিণধরায়’

সাভারের হরিণধরায় চামড়া শিল্পনগরীর অর্ধেক কারখানা চালু না হতেই দূষিত হয়ে উঠেছে এলাকার বাতাস।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2018, 10:44 AM
Updated : 17 July 2018, 04:10 PM

বর্জ্য পরিশোধন না করে সরাসরি ধলেশ্বরীতে ফেলায় দূষিত হচ্ছে পানি। এর প্রতিবাদে এলাকায় বিশেষ সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানোর পাশাপাশি মানববন্ধনও করা হয়েছে।

স্থানীয় তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর বলেন, “বিভিন্ন বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে। মাত্র ১৫-১৬টি কারখানা চালু হতেই শিশুরা অসুস্থ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। জমিতে ফসল ফলছে না।

“স্পষ্টতই চামড়া শিল্পনগরীর কারণে সাভারের হরিণধরা ঢাকার হাজারীবাগের পরিণতি বরণ করছে। এর প্রতিবাদে একাধিকবার বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।”

ঢাকার হাজারীবাগে চামড়ার বর্জ্যে বুড়িগঙ্গা ও এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছিল। এক আবেদনের পর ২০০১ সালে চামড়াশিল্প হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ২০০৯ সালে আবার আদেশ দেয় আদালত। এর পর সরকার উদ্যোগ নেয়।

ঢাকার হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের সময় যেসব প্রতিশ্রুতি বিসিক কর্মকর্তারা দিয়েছিলেন সেসব রক্ষা করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন ‘নদী বাঁচাও দেশ বাঁচাও আন্দোলন’ কমিটির সাভারের আহ্বায়ক মনির হোসেন।

তিনি বলেন, “বর্তমানে ট্যানারির বর্জ্য নিষ্কাশন অব্যবস্থাপনায় পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এই দূষিত পানি ফেলা হচ্ছে ধলেশ্বরী নদীতে। এতে করে বুড়িগঙ্গার মত ধলেশ্বরী নদীর পরিবেশও বিপন্ন হচ্ছে।”

পরিকল্পিত ডাম্পিং স্টেশন গড়ে না তোলার জন্য বিসিক কর্তৃপক্ষ ও মালিকদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন তারা।

প্রকল্প পরিচালক সাব্বীর আহমেদও অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, “বর্জ্য পরিশোধন শতভাগ হচ্ছে না। তবে আগে যেভাবে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা হত, আমি আসার পর তা বন্ধ করে একপাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে আরও নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।”

শুরুতে নিয়ন্ত্রণে না রেখে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আনার চিন্তাভাবনার সমালোচনা করেছেন এলাকাবাসী।

সোমবার সরেজমিন শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, এখনও অনেক প্লট খালি পড়ে আছে। কিছু কারখানায় চামড়া প্রক্রিয়া শুরু হলেও সবার অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়নি।

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে রয়েছে ১৫-১৬টি কারখানা।”

তবে প্রকল্প পরিচালক সাব্বীর বলছেন, “পূর্ণাঙ্গ, আংশিক ও নির্মাণাধীনসহ ১১১টিতে কাজ হচ্ছে। তাদের মধ্যে গ্যাস সংযোগ পেয়েছে ৩৭টি। আর ১৭টি কারখানায় গ্যাস সংযোগ প্রক্রিয়াধীন। এখানে ১৫৪ জনের মালিকায় মোট ২০৫টি প্লট রয়েছে।

“মালিকদের একাধিকবার বিসিকের পক্ষ থেকে নোটিশ করা হয়েছে। তারা গুরুত্বই দিচ্ছেন না।”

বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদের কাছে এ প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।