চামড়া শিল্পনগরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যানের

সাভারে চামড়া ছাড়াও অনেক ইন্ডাস্ট্রি পরিবেশ দূষণ করে বলে জানান জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2022, 05:22 PM
Updated : 25 July 2022, 05:22 PM

ঢাকার সাভারে চামড়া শিল্পনগরী পরিদর্শনে এসে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

সোমবার সকালে সাভারের হরিণধরায় চামড়া শিল্পনগরী, ধলেশ্বরী নদীসহ সংযুক্ত খাল-বিল, জলাশয় ও জলাধার দূষণের অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করেন তিনি।

পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, “অনেক অভিযোগ আছে; এই চামড়া শিল্প ধলেশ্বরী নদী দূষণ করছে। এই দূষণের ফলে বংশী নদী এবং বুড়িগঙ্গার সাথেও এখানে এটার সংযোগ আছে; যার ফলে একটা পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা বলা হয়।

“আমরা এটা সরজমিনে দেখতে এসেছি। আমরা যেটা দেখতে পেলাম – আমরা খুব একটা আস্বস্ত হতে পারলাম না।”

এখানে আধুনিক ল্যাব স্থাপন করার জন্য তিনি সরকারি উচ্চ মহলে বলবেন বলে জানান।

এই শিল্প নগরে যে পরিমাণ চামড়া প্রসেস করা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি চামড়া আসে বলে অভিযোগ আছে বলে তিনি জানান।

“ওনারা আমাদেরকে আস্বস্ত করতে পারেন নাই যে এখানে অপরিশোধিত পানি, বর্জ্য যে রিলিজ করা হয় না – এই বিষয়ে আমি কিন্তু এখনও অস্বস্ত না।”

এ জন্য আরও বেশি তদন্ত করার দরকার আছে এবং তারা প্রিলিমিনারি সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, “আমরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে যত স্টেক হোল্ডার আছে যারা চামড়া, চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত, পরিবেশ সাথে জড়িত তাদেরকে নিয়ে একটা মিটিং করব, মিটিং করে আমরা রিকমেন্ডেশন দেব।”

তিনি জানান, আপাতত রেশনিং প্রথা চালু করতে হবে এবং রেশনিং প্রথা করতে যাতে কোনোভাবেই পঁচিশ হাজার কিউবিক মিটারের বেশি বর্জ্য না হয় তার জন্য রেশনিং করা যায়।

“আরেকটা বিষয়, যদি এই ম্যানেজমেন্ট না পারে আমরা রিকমেন্ড করব নতুন ম্যানেজমেন্ট আনা হোক যাতে এই শিল্পটাকে আরও বেশি আধুনিক করা যায়।”

সাভারে লেদার ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও অনেক ইন্ডাস্ট্রি আছে যেগুলো পরিবেশ দূষণ করে বলে তিনি জানান।

“সাভারের মাটি দূষিত হয়ে গেছে, সাভারের পানি দূষিত হয়ে গেছে, সাভারের বাতাস দূষিত, সাভারে আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটারের কথা বলা হচ্ছে যে সেখানেও নাকি ইনজেক্ট করা হয় বর্জ্য,” বলে তিনি।

“সুতরাং আমি মনে করি কী সাভার একটা অভিশপ্ত জনপদে পরিণত হতে যাচ্ছে; এটা হতে দেওয়া যাবে না।”

২০২৩ সালে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আগে ঢাকার চারপাশে সকল নদ-নদী আমরা দূষণমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “সেই উদ্দেশ্যে আমরা কিন্তু প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের মেইন উদ্দেশ্য হচ্ছে এখন নদীর দূষণমুক্ত করা।”

একটা ল্যাবটরির অবস্থা দেখে হতাশা ব্যক্ত করে মনজুর আহমেদ বলেন, “ল্যাবরেটরির ইনচার্জ নেই। সে না থাকলেও তার পরিবর্ততে পরবর্তী লোক নেই। যন্ত্রপাতি কোথায়? যে প্রতিষ্ঠান ভালো সেটাই দেখেছি। সেখানেও আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমরা যা বুঝার বুঝেছি।”

কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কোম্পানি।

এ সময় উপস্থিত এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, আগামী অগাস্টের মধ্যে ল্যাবের সমস্যা সমাধান হবে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার সিইটিপির ২৫ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য পরিশোধের সক্ষমতা থাকলেও সেখানে ৩২ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য আসে। পাশাপাশি সিইটিপিতে সক্ষমতার চেয়ে বেশি তরল বর্জ্য পরিশোধের বিষয়টি সমাধানের জন্য ট্যাানারি মালিকসহ বাংলাদেশ ট্যার্নাস অ্যাসোসিয়েশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার বন্ধ করেন। তবে সিইটিপির পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে।

পরে সাভার উপজেলার হলরুমে উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় যোগদান করেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার, উপপরিচালক খ ম কবিরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. তৌহিদুর রহমানসহ কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাভার নদী রক্ষা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম।