ইফতার সামগ্রীর দাম চড়া, বাড়তি দরেই নিত্যপণ্যের বাজার

“কারওয়ানবাজারে লেবু কিনতে গেছি, ৪০ হালি লেবু চার হাজার টাকা চায়, ১০০ টাকা হালি। আমি ক্যামনে কমদামে বেচমু?” বললেন এক বিক্রেতা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 05:25 PM
Updated : 23 March 2023, 05:25 PM

ছোলা-ডালের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাজারে ইফতারের অন্যান্য সামগ্রীর দাম চড়েছে। ফল থেকে শুরু করে সালাদের সবজি কিংবা শরবতের পাউডার সব পণ্যেরই দাম বাড়তি। রোজার আগেরদিন ক্রেতারা স্বস্তি অনুভব করতে পারেননি নিত্যপণ্যের বাজারেও।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন করে আর বাড়েনি ডাল ও ছোলার দাম। তবে বেগুনির মূল উপাদান বেগুনের দাম বাড়তি।

শান্তিনগর বাজারে এ দিন গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজিতে, সবুজ বেগুন ৮০ টাকায়, মোটা বেগুন ৮০ টাকায়, আর বেগুনিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া লম্বা বেগুন বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজিতে।

এই বাজারে শরবতের ‘অপরিহার্য’ উপাদান লেবুর দাম শুনে চোখ কপালে উঠল, প্রতি পিছের দাম ২০-২৫ টাকা। মানভেদে লেবুর হালিতে দাম পড়ছে ৮০-১০০ টাকা। আকারে ছোট কিছু লেবু মিলছে, তবে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা।

সবজি বিক্রেতা মানিক হোসেন বললেন, “কারওয়ানবাজারে লেবু কিনতে গেছি, ৪০ হালি লেবু চার হাজার টাকা চায়, ১০০ টাকা হালি। আমি ক্যামনে কমদামে বেচমু, বেগুন যেইটা ১০০ ট্যাকা- সেইটা আড়তেই ৯০ ট্যাকা।

“ঢাকায় আসতে আসতেই দাম উইঠা যায় অনেক। রমজানের আগে চাহিদা বাড়ছে, আড়তে মাল নাই, এই কারণে দাম খুব চড়া।”

মানিকের কথার সত্যতা মিলল উত্তরের জেলা বগুড়ায় খোঁজ নিয়ে। সেখানকার পাইকারি বাজার রাজাবাজারের কাঁচামাল বিক্রেতা নরেশ মন্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, লেবু প্রতি হালি ৪০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দাম বেড়েছে বিভিন্ন কোম্পানির কৃত্রিম শরবতের পাউডারেরও। দাম কমেনি চিনির, রোজার আগের দিন বাজারগুলোতে খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে, তার পরও অনেক দোকানেই মেলেনি চিনি। আর ইফতারের নানা সামগ্রী তৈরির জন্য দরকারি আটা, ময়দা, বেসনের দাম বাড়তি দরেই ‘স্থিতিশীল’।

কারওয়ানবাজারের এক মুদি দোকানি বলেন, “যেমন কিনি, তেমন বেচি। আমাদের বলে লাভ নাই। চিনি শেষ, অর্ডার দিছি এখনও আসে নাই। কোম্পানিওয়ালারা চালাক, মুড়ির দাম বাড়ায় নাই কিন্তু পরিমাণ কমাইয়া দিছে।

“৫০০ গ্রাম প্যাকেটের জায়গায় ৪০০ গ্রামের প্যাকেট দিছে, খোলা মুড়ি এক কেজি ৮০, আধা কেজির প্যাকেট ৬৫-৭০ ট্যাকা।”

শান্তিনগর বাজারে প্রতিটি ডাবের দাম পড়ছে ১০০-১২০ টাকা, এক কেজি তরমুজ ৪৫ টাকা আর সাইজ হিসেবে নিলে মোটামুটি সাইজের একটি তরমুজ কিনতে গুনতে হচ্ছিল ৩৫০ টাকা কিংবা তারও বেশি। আমদানি করা ফলের মধ্যে আপেলের কেজি ৩৫০ টাকা আর মালটা ২২০ টাকা।

শুধু ফলই নয়, বাড়তি দর সালাদের বিভিন্ন আইটেমেও। এই বাজারে দেশি শসার কেজি ৮০ টাকা। কাঁচামরিচ ও ধনিয়া বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে রমজানের আগেই পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়েছে খেজুরের, যার প্রভাব পড়েছে, খুচরা বাজারেও। শান্তিনগর ও কারওয়ানবাজার- দুইখানেই খেজুর কিনতে আসা ক্রেতারা ক্ষোভ দেখিয়েছেন খেজুরের দাম নিয়ে।

কারওয়ানবাজারে ক্রেতা মেহেদি হাসান সুজন বললেন, “রমজানে সবাই খেজুর খাবে, এজন্য এরা দাম বাড়িয়ে ফেলে। পাইকারি বাজার আর খুচরা বাজারে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা কিভাবে তফাৎ হয়। অন্য দেশে রমজান এলে ছাড় দেয়, আর আমাদের দেশে রমজানে ব্যবসায়ীরা আমাদের জিম্মি করে ফেলে।”

বাড়তি দরেই চলছে নিত্যপণ্যের বাজার

শান্তিনগর বাজারে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ করেও ব্যাগ ভর্তি বাজার করতে না পারার আফসোস করছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসাইন।

নিজের ব্যাগ দেখিয়ে বললেন, “৮টা কক মুরগি নিলাম ২৬০০ টাকা নিলো। অথচ এইটা অর্ধেক রমজানও যাবে না। এই সমস্যা তো সাময়িক বলে মনে হচ্ছে না। সাপ্লাই চেইন ঠিক না করলে এইভাবে ঠিক করা যাবে না।

“প্রান্তিক লেভেলে যারা আছে, তারা এই লাভ পাচ্ছে না, আমরাও পাচ্ছি না, মাঝের লোকজন মার্কেটকে অস্থির করে রেখেছে।”

বাজার ঘুরে দেখা যায় বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে- তেল, মসুর ডাল, চাল, সবজি, মাছ, মসলার মতো নিত্যদিনের পণ্য। এফবিসিসিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, দোকান মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্টদের নানা চেষ্টা কথা বললেও বাজারে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। আমিষের বাজারের অস্থিরতা চলছেই।

দুই বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৭০-২৮০ টাকা কেজিতে। সাদা লেয়ারের কেজি ৩৪০ টাকা, আর লাল লেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকায়। দেশি মুরগির ধারে কাছে যেতে পারছেন না ক্রেতারা। এর কেজি উঠেছে ৬৮০ টাকা পর্যন্ত।

শান্তিনগরের দেশি মুরগি দোকানের মালিক দুলাল মিয়া কেজিতে মুরগি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। তার দোকানে এক পিস সোনালী মুরগির দাম ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, “পিসের লাই মানুষে ফাগল ওই যায়। কেজিতে বেচলে পোষায় না। সোনালী বড়টা ৩৭০ কিনি আইনছি, বিক্রি ৩৯০-৪০০, কিন্তু লস। ৩৩০ কিনা ছোট সোনালী, ৩৪০ টাকা বিক্রি। এই দাম থাকব না, বাজার কমি যাইবো।’

দাম কমেনি গরু খাসির মাংসের। খাসি আগের মতোই ১১০০ টাকা কেজি আর গরু বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজিতে। রোজার আগে তেমন পরিবর্তন আসেনি সবজি ও মাছের বাজারেও।

শান্তিনগরের আনারকলি মার্কেটে ব্যবসা করা সাইদুর রহমান বলেন, “কোনোভাবেই চলতে পারতেসি না, আমার প্রতিমাসেই ঋণ।”