সৌদি আরব থেকে আসা অপরিশোধিত তেল খালাসের মাধ্যমে রোববার শুরু হচ্ছে পরীক্ষামূলক যাত্রা।
Published : 23 Jun 2023, 10:11 AM
সাগর থেকে জ্বালানি তেল খালাসে মহেশখালী উপকূলে বহুল প্রতীক্ষিত ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ নির্মাণ শেষে এখন চালুর অপেক্ষায় আছে।
আগামী রোববার সৌদি আরব থেকে আসা অপরিশোধিত তেল মুরিং পয়েন্টে দেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষামূলক সরবরাহ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) কর্মকর্তারা।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী ২৪ জুন রাতে সৌদি আরব থেকে ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েলবাহী (অপরিশোধিত তেল) একটি জাহাজ মহেশখালীতে মুরিং পয়েন্টে আসবে। ২৫ জুন আমরা পরীক্ষামূলক কমিশনিং শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। এরপর পরিশোধিত তেলের জাহাজ আসলে দ্বিতীয় পাইপলাইনটিও কমিশনিং করার প্রস্তুতি আছে।”
জুলাই অথবা অগাস্ট মাসের কোনো একসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
বর্তমানে দেশে সরকারিভাবে সমুদ্রপথে ৬০ লাখ টনেরও বেশি জ্বালানি আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্য কম হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাংকারগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না।
এর ফলে এসব ট্যাংকার গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল খালাস করা হয়। তাতে এক লাখ ডিডব্লিউটি ট্যাংকার খালাস করতে লেগে যায় ১১ দিন।
এ পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় এইচএসডি স্থানান্তরের জন্য ২০১৫ সালে পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পটি (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) হাতে নেওয়া হয়। মোট ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ইতোমধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এর সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ অন্যান্য কারণে খরচ আরেকটু বাড়বে বলে মনে করছে ইআরএল কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান বলেন, “চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণের বিষয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এরপর কাজ শুরু হলে কোভিডের কারণে কাজ আবার পিছিয়ে গেছে।
“সব প্রতিবন্ধকতা শেষে এখন প্রকল্প বাস্তবতার মুখ দেখছে। এটা খুবই উচ্চ প্রযুক্তির প্রকল্প। বাংলাদেশ এ ধরনের প্রকল্প আগে ছিল না।”
এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ৯০ লাখ টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল পরিবহন করা যাবে উল্লেখ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “এর মাধ্যমে সময় সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি বছরে অন্তত ৮০০ কোটি টাকার খরচ সাশ্রয় হবে।”
যেভাবে কাজ করবে এসপিএম
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপিত প্রকল্পের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে।
১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইন প্রথমে নিয়ে আসা হবে কালারমারছড়ায় সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে। সেখান থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইআরএলের রিফাইনারিতে।
ইআরএল এমডি লোকমান বলেন, “এসব পাইপলাইনে ২০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এসপিএম থেকে মহেশখালীতে এসে যেখানে পাম্প হবে, সেখানে দুই লাখ টন ধারণ ক্ষমতার একটি স্টোরেজ নির্মাণ হয়েছে। এর মধ্যে ক্রুড অয়েল থাকবে এক লাখ ২৫ হাজার টন।
“বাকি ৭৫ হাজার টন হবে ডিজেল বা পরিশোধিত তেল। এর মানে হচ্ছে এই পাইপলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে তেলের সংরক্ষণ ক্ষমতাও বেড়েছে।”
বর্তমানে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ৫ লাখ টন সংরক্ষণ ক্ষমতা আছে। এর মধ্যে ক্রুড অয়েল সংরক্ষণ ক্ষমতা দুই লাখ ২৫ হাজার টন। বাকিটা পরিশোধিত তেল রাখার স্টোরেজ।
দেশে এখন ইস্টার্ন রিফাইনারি হয়ে ৬০ লাখ টন তেল আমদানি হয়। এর বাইরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফার্নেস তেলসহ প্রায় এক কোটি টন তেলের প্রয়োজন হয়।