কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে বলে মনে করেন তিনি।
Published : 14 Oct 2022, 08:02 PM
ডিমের চড়া বাজারে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার আশ্বাস যেমন দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তেমনি বলেছেন, উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কম দামে ডিম বিক্রি করতে বলা যায় না।
কিছু ব্যবসায়ীর ‘একচেটিয়াভাবে’ ডিমের দাম ঠিক করে জনগণকে জিম্মি করার কোনো ব্যবসায়িক প্রচেষ্টাও সরকার মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
শুক্রবার ঢাকায় বিশ্ব ডিম দিবসের অনুষ্ঠানে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের ডিম খাওয়ানোর পর বর্তমানে আলোচিত এ পোল্ট্রি পণ্যের দাম, উৎপাদন ব্যয় ও ব্যবসায়ীদের বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে আলোচনার সময় এসব কথা বলেন।
‘প্রতিদিন একটি ডিম, পুষ্টিময় সারা দিন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিবছরের মত এবারও দেশে বিশ্ব ডিম দিবস উদযাপন করা হচ্ছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে সম্প্রতি হঠাৎ করে ডিমের দাম বাড়তে বাড়তে প্রতি ডজন দেড়শ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ভোক্তা অধিকার ও প্রতিযোগিতা কমিশনের মত সরকারি প্রতিষ্ঠান অভিযান, শুনানি ও মামলার মত পদক্ষেপ নেয়। মাঝে দাম কমে ১২০ টাকায় নামলেও আবার তা বেড়ে প্রতি ডজন ১৪০ টাকা ছাড়ায়।
এর মধ্যেই ডিমের দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যাতে প্রোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদন খাতের বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো ভূমিকা রাখে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে খামারি, ডিম বিপণন ও সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আড়ৎদার, এজেন্ট, ডিলাররাদের একে অপরের উপর দায় চাপানোর খবরও সংবাদ মাধ্যমে আসে।
এমন প্রেক্ষাপটের মধ্যে ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ডিম দিবসের আলোচনায় রেজাউল করিম বলেন, ডিমের মূল্য বৃদ্ধিতে কোথাও সিন্ডিকেট থাকলে সম্পৃক্তদের সঙ্গে কথা বলে তা দূর করা হবে। মনোপলি (একচেটিয়া) ব্যবসার মাধ্যমে ডিমের দাম নির্ধারণ করে জনগণকে জিম্মি করার কোনো ব্যবসায়িক প্রচেষ্টা যদি থাকে নিশ্চয়ই সরকার সেটা মেনে নেবে না।
“পাশাপাশি এটা মনে রাখতে হবে, উৎপাদনে যে প্রকৃত ব্যয় হচ্ছে, যারা প্রচুর বিনিয়োগ করছেন তাদের ব্যয়ের চেয়ে কম মূল্যে ডিম বিক্রি করতে বলা যায় না। অনুরূপভাবে অতি মুনাফালোভীরা ইচ্ছেমত মুনাফা করবে আর মানুষকে জিম্মি করে রাখবে এটা করতে দেওয়া হবে না।"
সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডিমের ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ মূল্য নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে তিনি বলনে, এতে উৎপাদনকারী, বিপণনে জড়িত ও ভোক্তারা উপকৃত হবে। বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্তৃপক্ষের নজরে এলে ডিমের বাজার আরও ভারসাম্যপূর্ণ হবে বলে মনে করেন তিনি।
তার মতে, “অসঙ্গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরে রাষ্ট্র উপকৃত হবে। পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাজার ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইং এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডিমের মূল্য বৃদ্ধিজনিত সমস্যার সমাধান করা হবে।”
রেজাউল বলেন, একটা সময় সবাই নিয়মিত ডিম খেতে পারত না। পোল্ট্রি উৎপাদন খাতে সম্পৃক্তরা এগিয়ে আসায় ডিম ও মাংস উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যারা পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। এ খাতে যারা বিনিয়োগ করেছে তাদের ক্ষয়ক্ষতি ভুলে গেলে চলবে না।
“পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনে যারা প্রান্তিক পর্যায়ে সম্পৃক্ত তাদের করোনাভাইরাসসহ অন্যান্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নগদ প্রণোদনা দিয়েছে।”
সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, অসাধু কারবারি আছে, তারা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে। বাজার ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের সাথে পোল্ট্রি বা ডিম উৎপাদনে সম্পৃক্তদের একাকার করে অভিযুক্ত করলে বিষয়টি নির্দয় আচরণ হয়ে যায়।”
সবার জন্য ডিমের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কোনো উদ্যোগ আছে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আপেক্ষিক। দেশে একেক শ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একেক পর্যায়ের।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে ডিম দিবসের আলোচনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, বিপিআইসিসি ও ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বজলুর রহমান মোল্লা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) রেয়াজুল হক ও বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
ডিমের দাম চোখ রাঙাচ্ছে পুষ্টিতে
ডিমের অস্বাভাবিক দর: সন্দেহ পোল্ট্রি ‘করপোরেটদের’ দিকে
দামি ডিম কেন দামি? তদারকিতে নেই কেউ
ডিমের হালি ৫০ টাকার উপরে, খামারিরা বলছেন, মুরগি ‘কমেছে বলে’