এক দশকে বাংলাদেশের আকাশপথে যাত্রী বেড়ে দ্বিগুণ হবে, বোয়িংয়ের পূর্বাভাস

ছোট বহরে একাধিক নির্মাতার উড়োজাহাজ থাকলে তা পরিচালন ব্যয় অনেক বাড়াবে, ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে দাবি কোম্পানিটির এক কর্মকর্তার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 07:31 PM
Updated : 10 May 2023, 07:31 PM

আগামী এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়বে উল্লেখ করে উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং আভাস দিয়েছে, ২০৩২ সাল নাগাদ এ দেশের আকাশপথেও যাত্রী সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হবে।

বুধবার ঢাকায় হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এ খাতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।

বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক উড়োজাহাজের চাহিদা বিষয়ক বোয়িংয়ের বার্ষিক প্রকাশনা কমার্শিয়াল মার্কেট আউটলুকের (সিএমও) পূর্বাভাস তুলে ধরে কোম্পানিটির এশিয়া প্যাসিফিক ও ভারতের মার্কেটিং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেভ শাল্টে বলেন, ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি ৫ শতাংশের বেশি হারে বাড়বে, যা বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। পাশাপাশি উড়োজাহাজে ভ্রমণের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ।

তিনি জানান, কোভিড মহামারীকালে ২০২২ সাল থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করায় বাংলাদেশে সক্ষমতা বছরে ১১ শতাংশ বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতে আঞ্চলিক ট্র্যাফিক বিবেচনায় আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের উড়োজাহাজ ভ্রমণ দ্বিগুণ হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস কেনার আলোচনার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং কর্মকর্তারা ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানালেন।

বিমান বাংলাদেশের বহরে এখন যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ বেশি এবং ফ্রান্সের এয়ারবাসের কোনো উড়োজাহাজ নেই। তবে আগে বিমান এয়ারবাস ব্যবহার করেছে।

সম্প্রতি এয়ারবাস কেনার বিষয়ে বাংলাদেশ বিমান প্রক্রিয়া শুরু করেছে এমন খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এর আগে গত ২২ মার্চ ঢাকা ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ এভিয়েশন সামিটে বিমানকে এয়ারবাস কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কোম্পানির কর্মকর্তারা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশন ও ফ্রান্স দূতাবাস আয়োজিত ওই সম্মেলনের পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমাদের এয়ারবাস কেনার চিন্তা আছে। তবে কতোগুলো কেনা হবে তা এই মুহূর্তে বলার মতো না, যেহেতু একটা অর্থনৈতিক সংকট আছে।”

বিমান ছাড়াও বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা সম্প্রতি দুটি এয়ারবাস কেনার ঘোষণা দিয়েছে।

এর দেড় মাসের মাথায় বুধবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে এলেন বোয়িং কর্মকর্তারা। এতে ডেভ শাল্টে ছাড়াও কথা বলেন বোয়িং এর নর্থ ইস্ট এশিয়া কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেন বিভাগের রিজিয়নাল ডিরেক্টর (কমিউনিকেশন) কেভিন ইও।

সংবাদ সম্মেলনে ডেভ শাল্টের দাবি কোনও এয়ারলাইন্স ছোট বহর নিয়ে একাধিক নির্মাতা কোম্পানির উড়োজাহাজ ব্যবহার করলে তাদের পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। দুই নির্মাতার উড়োজাহাজের জন্য পৃথক পাইলট ও প্রকৌশলীর প্রয়োজন হবে। তাদের পৃথক প্রশিক্ষণ লাগবে, যা প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় বাড়াবে।

কারও নাম উল্লেখ না করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দিকেই ইঙ্গিত করে তিনি জানান, দুই কোম্পানির উড়োজাহাজ থাকলে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণে পৃথকভাবে খুচরা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু বহরে একই নির্মাতার উড়োজাহাজ থাকলে একই রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীরা পুরো বহরের দেখভাল করতে করতে সক্ষম হবেন। একই পাইলট দিয়ে সবগুলো উড়োজাহাজ পরিচালনা করা যাবে।

নিজের উপস্থাপনায় কোনো এয়ারলাইনের নাম না উল্লেখ করে ডেভ শাল্টে বলেন, কোনও এয়ারলাইনের বহরে যদি ১০টি বোয়িং ৭৮৭ উড়োজাহাজ থাকে তাহলে তার যে পরিচালন ব্যয় হবে মিশ্র উড়োজাহাজের বহরে তা বেড়ে যাবে অনেকগুণ।

তার হিসাবে কারও বহরে পাঁচটি বোয়িং ৭৮৭ এবং পাঁচটি এয়ারবাস এ৩৫০ থাকলে খরচ বাড়বে বাংলাদেশি টাকায় ৬৪০ কোটি টাকা, যা দিয়ে ২ হাজার ১০০টি ভক্সওয়াগন গাড়ি কেনা যায় বলেও তুলনা দেন তিনি।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানের বহরে বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি সুপরিসর বোয়িং, ছয়টি (ন্যারোবডি) বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজ। এয়ারবাসের কোনো উড়োজাহাজ বর্তমানে বিমানের হাতে নেই। তবে আগে বিমান এয়ারবাস ব্যবহার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমও এর পূর্বাভাস তুলে ধরে বলা হয়, আগামী ২০ বছরে উড়োজাহাজের বৈশ্বিক বহর দ্বিগুণ হবে। ২০১৯ সালে বিশ্বে ২৫ হাজার ৯০০টির মতো উড়োজাহাজ সেবা দিত। ২০৪১ সালে এই সংখ্যা হবে ৪৭ হাজার ৮০টি। এই ২০ বছরে বিশ্বের এয়ারলাইন্সগুলো নিজেদের বহরে ৪১ হাজার ১৭০টি নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করবে বলে বোয়িংয়ের পূর্বাভাস।

Also Read: বাংলাদেশের কাছে উড়োজাহাজ বেচতে চায় এয়ারবাস

এ সময়ের মধ্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চলের এয়ারলাইন্সগুলোর বহরে যুক্ত হবে ১৭ হাজার ৮০টি উড়োজাহাজ। বোয়িংয়ের ২০১৯ সালের হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে ৭০০টির মতো উড়োজাহাজ চলছে। ২০৪১ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার প্রয়োজন হবে ২৩০০টি উড়োজাহাজ। পুরনোগুলো প্রতিস্থাপন ও নতুন কেনা- সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সংস্থাগুলো কিনবে প্রায় ১৯০০ টি উড়োজাহাজ।

বোয়িং বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে উড়োজাহাজ ও কারিগরি সেবা দিয়ে আসছে জানিয়ে কেভিন ইও বলেন, “বাংলাদেশে আমরা বোয়িংয়ের একটা সম্ভাবনা দেখেছি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চলমান। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিমানবন্দরের ক্যাটাগরি আপগ্রেডেশনে দীর্ঘদিন থেকে কাজ চলছে।”