বাংলাদেশের কাছে উড়োজাহাজ বেচতে চায় এয়ারবাস

সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বিমানের বহর আগামীতে বাড়াতেই হবে। সুতরাং তারা এয়ারবাসের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করবেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2023, 04:10 PM
Updated : 22 March 2023, 04:10 PM

বাংলাদেশ সরকারের কাছে কাছে উড়োজাহাজ বিক্রিসহ বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ফ্রান্সের উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি ‘এয়ারবাস’।  

বুধবার ঢাকায় আয়োজিত ‘বাংলাদেশ এভিয়েশন সামিট’ এ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দিনভর এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয় এয়ারবাস প্রতিনিধিদের।

অনুষ্ঠান শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের এয়ারবাস কেনার চিন্তা আছে। আজকের সামিটও সেটা রিফ্লেক্ট করছে। তবে কতোগুলো কেনা হবে তা এই মুহূর্তে বলার মত না, যেহেতু একটা অর্থনৈতিক সংকট আছে।”

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশন ও ফ্রান্স দূতাবাস যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। তবে আয়োজকরা জানিয়েছেন, এ আয়োজনের কেন্দ্রে ছিল উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি ‘এয়ারবাস’।

সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দিনভর আরও ছয়টি সেশনে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রবার্ট সি ডিকসন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপু, বেসামরিক বিমান পরিহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি শফিউল আজিম,  এয়ারবাস ইন্ডিয়া ও সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট রেমি মেইলার্ড, এয়ারবাস কমার্শিয়ালের ফ্রেইটার মার্কেটিং ডিরেক্টর বার্নার্ড ডি ইস্টয়েল, মেনজিস এভিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জন হেন্ডারসন, রোলস রয়েসের রিজিওনাল মার্কেটিং ডিরেক্টর বেনজামিন গান।

অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এয়ারবাস ফ্রান্স ভিত্তিক এবং রোলস রয়েস ও মেনজিস যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি। এয়ারবাস উড়োজাহাজ তৈরি করে। রোলস রয়েস উড়োজাহাজের ইঞ্জিন তৈরি করে। আর মেনজিস এভিয়েশন বিমান বন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও কার্গো হ্যান্ডলিং সেবাদাতা একটি বৈশ্বিক কোম্পানি।

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন সেশনে অংশ নেওয়া বিমানেরে একজন কর্মকর্তা জানান, এয়ারবাসের দেওয়া প্রস্তাবে উড়োজাহাজ বিক্রি ছাড়াও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের বিষয়গুলোও রয়েছে।

ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এভিয়েশন খাতে আমাদের এই যাত্রায় সহায়তার জন্য এয়ারবাসের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের এই অংশীদারীত্বের প্রস্তাব খুবই গুরুত্ববহ।

“ভৌগলিক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে আমাদের একটি রোপম্যাপ করা প্রয়োজন, যাতে আমরা বাংলাদেশকে একটি ‘এভিয়েশন হাব’ এ পরিণত করতে পারি। চলুন আমরা আমাদের এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস খাতকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত করি।”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন। এরপর বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী।

তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত হিসেবে আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এয়ারবাসের এই প্রস্তাবের পেছনে যুক্তরাজ্য সরকার শক্ত রাজনৈতিক সমর্থন দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যুক্তরাজ্য এভিয়েশন খাতের বৈশ্বিক লিডার এবং বিভিন্ন দেশকে এভিয়েশনে সাহায্য করার অনেক ইতিহাস যুক্তরাজ্যের রয়েছে। এয়ারবাসের এই প্রস্তাব বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের চিত্রকে বদলে দিতে পারে।”

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অনুষ্ঠানে বলেন, এভিয়েশন খাতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সঙ্গে কার্যকর অংশীদারীত্বের জন্য এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের জন্য এই অংশীদারীত্ব ‘অনেক গুরুত্ব বহন করছে’।

বিমানের বহরে বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি সুপরিসর বোয়িং, ছয়টি (ন্যারোবডি) বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজ। এয়ারবাসের কোনো উড়োজাহাজ বর্তমানে বিমানের হাতে নেই। তবে আগে বিমান এয়ারবাস ব্যবহার করেছে।

অনুষ্ঠানের পরে বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী মাহাবুব আলী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমাদের বিমান বহর কিন্তু নতুন তারুণ্যদীপ্ত ফ্লিট, আমরা ওটা এক্সপানশনের দিকে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে বিমানের টরন্টো রুট চালু হয়েছে। খুব সফল হয়েছে সেই রুট। যুক্তরাজ্যের ম্যানেচেস্টার ও হিথ্রোতে আমাদের বিমান যাচ্ছে। ইউরোপের অন্যান দেশেও আমরা যাব, রোম, মিলান এগুলোতেও আমাদের চিন্তা ভাবনা আছে।

“কিছুদিনের মধ্যে জাপানেও যেতে চাই আমরা। সেক্ষেত্রে আমাদের নতুন উড়োজাহাজের প্রয়োজন আছে। বহর বাড়াতে হবে। আজকের এই সামিট মূলত এয়ারবাস, ব্রিটিশ ও ফ্রান্স দূতাবাসের আয়োজনে। এভিয়েশন খাতকে এগিয়ে নিতে তাদের কোলাবরেশন প্রয়োজন।”

অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটির জন্য এয়ারবাসের সাথে ইতোমধ্যে সমঝোতা স্মারক হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তারা আমাদের কারিগরি সহায়তা দেবে। এভিয়েশনের জন্য বাংলাদেশ কিন্তু একটা বড় মার্কেট। সারা বিশ্বের নজর আমাদের এই বাংলাদেশের দিকে। সেই লক্ষ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এয়ারপোর্টগুলোকে নতুনভাবে সাজিয়েছেন।

“থার্ড টার্মিনাল একটা অত্যাধুনিক বিমান বন্দর, এটা এ বছরের অক্টোবরে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা চাই অনেকগুলো এয়ারলাইন্স এখানে আসবে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন করার ক্ষেত্রে আমাদের হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্ট ও কক্সবাজার এয়ারপোর্ট ভূমিকা রাখবে।”

অত্যাধুনিক নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী সেবা আন্তর্জাতিক মানের হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “হিথ্রো (লন্ডন) যেভাবে চলে, জেএফকে (নিউইয়র্ক) যেভাবে চলে, সুইজারল্যান্ডে এয়ারপোর্ট যেভাবে চলে সেরকম মান যেন বজায় রাখা যায়, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।”

বিমানের এমডি শফিউল আজিম অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “(এয়ারবাস কেনা) এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা এয়ারলাইন্স হিসেবে আরও উড়োজাহাজ চাই। তারা আমাদের রিকোয়ারমেন্ট যদি ফুলফিল করে, তবে হোয়াই নট? আর ফ্লিট তো অবশ্যই বাড়াতে হবে।

“আমাদের হিউজ ডিমান্ড যেহেতু আছে। আমাদের বিমানের ওপরে কিন্তু যাত্রীদের আস্থা আছে। আপনি লন্ডন, টরন্টো, এমনকি কক্সবাজারেও হুট করে চাইলে বিমানের টিকিট পাবেন না। আমরা এখন ২০৩০ সাল ধরে প্ল্যান করছি। আমরা আলোচনা করছি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। তারা অফার করছে সেটাও আমরা দেখছি।”