ব্যবসায়ীদেরও বলব, বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানান: প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন বিনিয়োগ ও সোর্সিংয়ের জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে “

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও অনুকূল পরিবেশের কথা তুলে ধরে বিদেশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আরও বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার বিজিএমইএ আয়োজিত ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’ উদ্বোধন করে তিনি বলেন, “আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। এর ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন বিনিয়োগ ও সোর্সিংয়ের জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

“দেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতি একইসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে আমি দেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকেও অনুরোধ করছি। আপনারা তাদের প্রযুক্তি, জ্ঞান আপনাদের শিল্পখাতে গ্রহণ করুন।”

বাংলাদেশের বিনিয়োগের ‘চমৎকার’ পরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশের আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে, ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ের সাথে আমরা যুক্ত হচ্ছি। তাছাড়া আমরা ওটারওয়েজ, এয়ারওয়েজ, রেলসহ সবকিছুতেই উন্নয়ন করে যাচ্ছি।

“আমরা রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিশেষ তহবিল, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান, ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের দুঃস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমসহ মোট ২৮টি প্যাকেজের আওতায় অতি স্বল্প সুদে ২ দশমিক ৩৭ ট্রিলিয়ন টাকার ঋণ বরাদ্দ করেছি। এটি ২০২২ অর্থবছেরর মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সময়োচিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের ফলে আমরা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সব বাঁধা সফলভাবে উত্তরণ করতে পেরেছি।”

দেশের পোশাক খাতের সক্ষমতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সাতদিনের প্রদর্শনী ‘মেইড ইন বাংলাদেশ সপ্তাহ ২০২২’ আয়োজন করেছে বিজিএমইএ। প্রথমবার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশ, কোম্পানি ও ব্র্যান্ডের ৭০০ প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। প্রদর্শনী চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।

রোববার এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে সরকারপ্রধান বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পদধ্বনি শুনছি আমরা। যারা শ্রম দেয় তারা আমার বাংলাদেশেরই মানুষ, তাদেরকে আমরা আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলতে চাই। কারণ এখন বিজ্ঞানের কারণে প্রযুক্তির নতুন নতুন আবির্ভাবে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত করে দক্ষ মানব সম্পদ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং উদ্যোক্তাও সৃষ্টি করছে।

“এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে যে প্রভাব ফেলবে সেজন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করা হয়েছে। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যবস্থা নিতে হবে, সেজন্য আমরা প্রস্তুত, আমরা তৈরি করছি।”

জনগণকে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “মানুষের মাথায় আমাদের এই চিন্তাও ঢোকাতে হবে, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে হলে আমাদের দেশে-বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন পড়বে। তারা যাতে প্রযুক্তি জ্ঞানেও দক্ষ হয় সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

দেশের তৈরি পোশাক খাতে নানা সুবিধা দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তৈরি পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য নগদ সহায়তাসহ অন্যান্য সুবিধা আমরা প্রদান করছি। ওয়ারহাউস সুবিধায় বিনাশুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুবিধা, ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলার সুবিধা, হ্রাসকৃত শুল্কে মেশিনারিজ আমদানি এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের অনুকূলে ‘এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) থেকে অতি অল্প সুদে কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।

“ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে অর্জিত হয়েছে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর, ২০২২ সময়ে তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্জিত রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।”

“সুযোগ বা প্রণোদনা অনেককেই দেওয়া হয়, কিন্তু তারা সেটা কাজে লাগাতে পারে না যেটা গার্মেন্টস শিল্প পেরেছে”, বলেন তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের জিডিপিতে রপ্তানি খাতের অবদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিগত অর্থবছরে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য ও সেবাকে দীর্ঘমেয়াদি কর প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্রান্ডকে গ্লোবাল ব্রান্ডে পরিণত করার লক্ষ্যে রপ্তানির নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি এবং পণ্যের বৈচিত্রকরণ ও নতুন বাজার তৈরির উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

“এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে কর হার সাধারণ কারখানার জন্য ১২ শতাংশ এবং গ্রিন কারখানার জন্য ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে আজ বিশ্বসেরা ১০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৯টিই বাংলাদেশে অবস্থিত।”

জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার এখন মাথাপিছু আয়। ক্রয় ক্ষমতাও এদেশের মানুষের বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরি হচ্ছে।

“শুধু রপ্তানি করলেই চলবে না, নিজের দেশের ভেতরেও বাজার সৃষ্টি করতে হবে এবং করোনাকালীন সরকার যতটা সম্ভব তৃণমূলে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া ও সরবরাহ করা যায় সেটা করেছে। এর ফলে মানুষের ভেতর হাহাকার আসেনি।”

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কাপড়ের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং শ্রমবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার আহবান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশন (আইএএইফ) সভাপতি সেম অলটান এবং বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ও সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি বক্তব্য দেন।