প্রতিটি মুরগির ডিম ১৪ টাকায় বিক্রি হলেও তা ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিৎ নয় বলে মনে করেন শ ম রেজাউল করিম।
Published : 13 Aug 2023, 07:39 PM
ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিম আমদানির হুমকি দিলেও তাতে সায় নেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের।
ডিমের দাম বাড়তি বলে স্বীকার করে নিলেও এই সংকটের সমাধানে বাজার ব্যবস্থা বিন্যাসের উপর জোর দিচ্ছেন তিনি।
সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ডিমের দামে রেকর্ড উল্লম্ফন সরকারকেও ভাবিয়ে তুলেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এরই মধ্যে বাজারে বাজারে অভিযানে নেমেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সংকট সমাধানে ডিম আমদানির দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সায় পেলেই আমদানিতে যাবেন তারা।
এদিনই ডিমের দাম নিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন মন্ত্রী শ ম রেজাউল।
এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি মুরগির ডিম এখন বাজারে ১৪ টাকায় বিক্রি হলেও তা ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিৎ নয়।
“প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, একটি ডিম উৎপাদন করতে সাড়ে ১০ টাকার ওপর খরচ পড়ে। অন্যান্য ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে কিছু লাভের বিষয় থাকে। আমার কাছে মনে হয়েছে, একটি ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি নির্ধারিত হওয়া উচিৎ না। এই ১২ টাকা নির্ধারিত হলে উৎপাদনকারীদের লাভ হবে।”
সেক্ষেত্রে ডিম আমদানি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের দিকে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, “ডিম আমদানি করা না করার বিষয়টি আমরা অন্যভাবে বিবেচনা করব। এই বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইন্ডিপেন্ডেন্টলি বিবেচনা করবে কী করবে না, এটা তাদের বিষয়।
“আমার কাছে মনে হয়েছে দেশে ডিমের যে উৎপাদন আছে, আমরা যদি বাজার ব্যবস্থার বিন্যাস করতে পারি, তবে আমদানির কোনো প্রয়োজন হবে বলে আমার মনে হয় না।”
ডিমের দাম কমাতে উৎপাদনকারীদের অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এরপরেও যদি কেউ জনদুর্ভোগ ডেকে নিয়ে আসেন, তা দেখভাল করার জন্য ভোক্তা অধিকার আইন আছে। ভোক্তাদের অধিকার দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ আছে, তারা প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবেন।”
‘উৎপাদন কমায়’ সংকট
মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং লেয়ার মুরগির অনেক খামার বন্ধ হয়ে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়েছে বলে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান দাবি করেছেন।
বয়লার এবং লেয়ার মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারীদের সংগঠনের এই নেতা বলেন, “কোরবানির ঈদের পর থেকে যে ডিমের দাম বাড়বে তা আমরা আগেই বলেছি। কারণ গত বছর থেকে লক্ষ্য করছি আমাদের ডিমের দাম বাড়ল, কিন্তু বাচ্চার দাম বাড়ে না। …আমরা লক্ষ্য করছি, খামারিরা খামার করতে চাচ্ছে না অর্থাৎ খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা উৎসাহ পাচ্ছে না।”
ডিম উৎপাদনের ব্যবসায় নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় জানিয়ে মাহাবুবুর বলেন, “হঠাৎ করে গরম হলে মুরগি মারা যায়, ডিজিজ আসলেও নানান সমস্যা হয়। এই ব্যবসায় নানাবিধ সমস্যা, সংকট। এত টাকা ইনভেস্ট করে কখনো লাভ হয়, কখনও লস হয়। এই অনিশ্চয়তার কারণে বেশিরভাগ খামারিরা কিন্তু অনুৎসাহিত হচ্ছে।”
পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে জানিয়ে মাহাবুবুর বলেন, যুদ্ধের কারণে এদেশে আমদানি বন্ধ হয়েছে। গত বছর ২০ টাকার ভুট্টা ৪০ টাকা হয়ে গিয়েছিল। ৪০ টাকার সয়াবিন কেক ৮০ টাকা হয়েছিল। ফিডের খরচ অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল। ফিডের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে লেয়ার খামারিরা ব্যাপকভাবে লস করেছে। বেশিরভাগ সময় খামারিরা লস করাতে তারা উৎসাহ পাচ্ছে না এ ব্যবসা করতে।
“যে গ্রামে ২০টি খামার ছিল সে গ্রামে ৫টি খামারও কিন্তু এখন চলছে না। যে গ্রামে ৩০টি খামার ছিল সে গ্রামে এখন ১০টি খামারও চলছে না। এই যে উৎপাদনে ব্যাপক ঘাটতি, এটি কিন্তু একদিনে হয়নি। এটি লম্বা সময়ের একটি রেজাল্ট।”
মাহাবুবুর জানান, নানা ধরনের সংকটে পড়ে অনেক খামার বন্ধ হয়েছে। কেউ কেউ খামার ছোট করে ফেলেছেন। ফলে ডিমের উৎপাদন কমে গেছে।
দেশে দিনে ৫ কোটির মতো ডিমের চাহিদা রয়েছে জানিয়ে মাহাবুবুর বলেন, উৎপাদন হচ্ছে চার কোটি বা ৪ কোটি ২০ লাখ। কখনও কখনও আরও কম উৎপাদন হচ্ছে।
“উৎপাদন যদি ১০ লাখ কমে যায়, তাহলে কিন্তু ক্রাইসিস হয়ে যায়। আর যদি ১০ লাখ বেশি উৎপাদন হয়, তাহলেও কিন্তু ওভার প্রোডাকশন হয়ে যায়।”
উৎপাদন বাড়াতে খামারগুলোতে ভর্তুকিসহ সরকারি সহযোগিতাআরও বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।