বিলাসী পণ্য নিরুৎসাহিত করাসহ আমদানিতে বেশ কিছু স্বল্পমেয়াদি ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
Published : 24 Jul 2022, 08:37 PM
বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে বাংলাদেশ এখনও পাকিস্তানের মত খাদের কিনারে যায়নি। বরং সময়মত বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করাসহ আমদানিতে বেশ কিছু স্বল্প মেয়াদি ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে।
এখন ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ডলার পাচার ঠেকাতে আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার পর সেই পণ্য আসছে না কি খালি কন্টেইনার আসছে তা কঠোর নজরদারি করা দরকার।
রোববার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগ (সিপিডি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব বক্তব্য উঠে এসেছে।
‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: কতটা ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক এ মিডিয়া ব্রিফিংয়ে দেশের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য রক্ষায় বক্তারা আরও কিছু পরামর্শ দেন।
সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত এ আলোচনায় ভার্চুয়াল মাধ্যমেও অনেকে অংশ নেন।
আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বর্তমানে আমাদের যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে প্রায় পাঁচ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আর পাকিস্তানের রয়েছে প্রায় দুই মাসের আমদানি ব্যয়। সুতরাং আমরা পাকিস্তানের মত খাদের কিনারে পড়িনি।”
বৈদেশিক লেনদেনের বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টির শুরু থেকেই সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সময়োপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী রাখতে এলসি করা পণ্যের বিপরীতে খালি কন্টেইনার আসছে কি না তা যাচাইয়ে শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ আছে এটা দিয়ে ৪ দশমিক ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। বর্তমানে বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের যে মূল্য রয়েছে তাতে ২০২৩ সালে আরও কিছুটা চাপ তৈরি হতে পারে। তবে ২০২৪ সালে এ চাপ কমে আসবে।”
তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে আইএমএফ ও আইডিবিসহ বেশি কয়েকটি দাতা সংস্থার সঙ্গে বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এর পাশাপাশি তিনি সৌদি আরব ও কাতারসহ বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বাজেট সহায়তা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
জ্বালানি তেলে ভর্তুকি তুলে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. ফাহমিদা বলেন, “এতে জ্বালানির ব্যবহার কমবে। আবার সরকারের ওপর চাপও কমে আসবে।”
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হলেও এর বিপরীতে খাতটির জন্য ২৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। ফলে এ খাতের রপ্তানি থেকে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করার কথা তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে।
তিনি বলেন, “রপ্তানির বিপরীতে নিট বৈদেশিক মুদ্রা কত আসছে, ব্যবসায়ীরা আমদানির যে ঋণপত্র খুলছে তাতে ওভার ইনভয়েসিং বা পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে কম মূল্যের পণ্য আমদানি করে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করছে কি না এসব বিষয়ে কঠোর মনিটরিং করতে হবে।”
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে দেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ম তামিম বলেন, ২০০৭-০৮ সালে যখন জরুরিভাবে রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়া হয় তখন তিন বছরের পথরেখা নেওয়া হয়েছিল। সর্বোচ্চ এটা পাঁচ বছর হতে পারত। এখনও বিকল্প উৎপাদন কীভাবে হতে পারে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কয়লা উত্তোলনে ক্ষতির কথা মাথায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আমদানিনির্ভর এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে কোনও পদক্ষেপ না থাকারও সমালোচনা করেন তিনি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম কোভিড ১৯ পরবর্তী এবং ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে ইউরোপের রপ্তানি বাজার থেকে জিএসপি প্লাস সুবিধা আদায়ে সরকারকে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।