আমদানি করা ২২৯ টন কাঁচা মরিচ এরই মধ্যে দেশে এসেছে।
Published : 03 Jul 2023, 08:31 PM
আমদানি করা কাঁচা মরিচ দেশের বাজারে ঢোকার পর এক দিনেই দাম এক-তৃতীয়াংশ নেমেছে ঢাকার বাজারে।
সোমবার যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল ও কারওয়ান বাজারে খুচরা পর্যায়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে ২০০ টাকা কেজিতে। অথচ রোববারও এই বাজারগুলোতে কাঁচা মরিচের খুচরা দাম ছিল অন্তত ৬০০ টাকা।
ভারত থেকে আমদানি করা এবং দেশীয় জাত সব ধরনের কাঁচা মরিচই এক দামে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীতে কাঁচা পণ্যের প্রধান আড়ৎ কারওয়ান বাজারে।
অথচ একদিন আগেও দেশি মরিচ মানভেদে প্রতি কেজি কারওয়ান বাজারে পাইকারি পর্যায়ে ছিল ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।
রোববার বিকাল নাগাদ ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ বাংলাদেশে ঢুকেছিল ৫৫ টন, যা রাতেই কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন আড়তে চলে আসে।
তাতে দাম কমার পাশাপাশি বাজারগুলোতে আগের দিনের চেয়ে কাঁচা মরিচের সরবরাহও বেশি দেখা গেছে।
রোববার রংপুরের যে মরিচ ৫২০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান, সোমবার তা ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা যায়।
পাইকারদের মরিচ কেনায় খরচ পড়ছে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) ৭৫০ টাকা। পরিবহন ও শ্রমিক মজুরি ও জায়গা ভাড়া বাবদ প্রতি কেজিতে খরচ দাঁড়িয়েছে ১৭০-১৮০ টাকা।
সেই মরিচ প্রতি কেজি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন জানিয়ে হাবিবুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বাজার দর দেইখা কিনি আর বেচি। কমে পাইলে কমে বেচি, আর বেশি দামে কিনলে বেশি দামেই বিক্রি করি।”
দেশি জাতের মরিচের দাম এক দিনেই এত কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আড়তে যারা মরিচ নিয়ে আসেন, তারা দরের বিষয়টি বলতে পারবেন। আমরা তাদের কাছ থেকেই যে দরে কিনি, তার সঙ্গে খরচ বাদ দিয়ে সামান্য লাভে বিক্রি করে দিই।”
দ্রুত পচনশীল এ পণ্য কেনার পরপরই বিক্রি করে দিতে চেষ্টা করেন আড়তের ব্যবসায়ীরা, বলেন আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী বেলাল আহমেদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাগো হাতে কিছুই নাই। আনি যে দরে কিনি, তার চেয়ে সামান্য বেশি দরে বিক্রি করি। দর লুকানোর কিছুই নাই। পাইকারি আর খুচরা দর এখন বাজারের সবাই জানে।”
পাইকারির পাশাপাশি কারওয়ান বাজারে খুচরা বাজার রয়েছে, যার প্রধান ক্রেতা সেখানকার সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অফিসের কর্মচারীরা।
অফিস শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় কাঁচা বাজারে মরিচ কিনতে এসে শাহনাজ রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল বেশি দাম দেখে কেনা বাদ দিয়েছিলাম। বাসায় যা ছিল তাই দিয়ে চালিয়ে একদিনের অপেক্ষায় ছিলাম। খবরে শুনেছিলাম মরিচ আমদানি হচ্ছে। আজ দাম কমে আসায় আধা কেজি কিনলাম ১০০ টাকা দিয়ে।”
কারওয়ান বাজারে দর অনেক কমে গেলেও রাজধানীর পাড়া-মহল্লার বাজারে দাম এখনও ততটা কমেনি। সোমবার সকালেও বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
দুই মৌসুমের মধ্যবর্তী সময় বর্ষায় কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে দাম একটু বাড়ে প্রতিবারই। কিন্তু এবার দর ক্রেতাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। দুই সপ্তাহ আগেও দাম যেখানে কেজিপ্রতি একশ থেকে দেড়শ টাকার মাঝে ছিল, তা ৭০০ টাকায়ও উঠে যায়।
এই পরিস্থিতিতে ঈদের আগে তিন মাসের জন্য কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।
রোববার পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দিয়েছিল ৩৬ হাজার ৮৩০ টনের। সোমবার তা আরও বাড়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের উপপরিচলক (আমদানি) মুহাম্মদ লিয়াকত হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু সোমবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত (এক দিনে) ভোমরা, বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ১৪২ টন কাঁচা মরিচ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ভারত থেকে।
“সরবরাহ বাড়াতে অনুমোদন বাড়িয়ে সোমবার পর্যন্ত ৪৬ হাজার ২৩০টন আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সোমবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেশে এসেছে ২২৯ টন কাঁচা মরিচ।”