ইলিশে নিষেধাজ্ঞা দুদিন পর, দামে চড়া

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে শেষ সময়ে ধরা পড়া সব মাছই আসছে আড়তে; তবুও দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2022, 01:26 PM
Updated : 5 Oct 2022, 01:26 PM

ইলিশ ধরা ও কেনাবেচা বন্ধের দিন কয়েক আগে থেকেই দাম বাড়ছে এ মাছের; আকারভেদে প্রতি কেজিতে দেড়শ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা অনেক বেশি হওয়ার কারণেই মূলত দাম বাড়ছে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে শেষ সময়ে ধরা পড়া সব মাছই আসছে আড়তে। এরপরও গত এক সপ্তাহের চেয়ে বেশি দামে আড়তেই মাছ সংগ্রহের কথা জানালেন আড়তদাররা। যে কারণে খুচরায় এর প্রভাব পড়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরায় এক কেজি সাইজের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাইজ দেড় কেজি হলে দাম বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা। আবার ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৫০০ টাকা। ওজন ৫০০ গ্রামের বেশি হলে দাম কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা।

আগামী শুক্রবার ৭ অক্টোবর থেকে প্রজনন মৌসুমের কারণে মা ইলিশ ধরার পাশাপাশি বিক্রি ও পরিবহনসহ সব ধরনের কেনাবেচা আবার ২২ দিন বন্ধ হতে যাচ্ছে। এর আগেই অনেকে বেশি পরিমাণে কিনে মজুদ করায় এবং পূজায় মাছের চাহিদা বাড়ার সুযোগে রূপালী এ মাছ দামে চড়া হয়ে পড়েছে।

বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের চেয়ে আকার অনুযায়ী কেজিপ্রতি দেড়শ থেকে চারশত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ইলিশের দাম। সব আকারের ইলিশই পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন বাজার, আড়তসহ অলিগলি ও পাড়া-মহল্লার ফেরিওয়ালাদের কাছে।

তবে গত তিন থেকে চার দিনের ব্যবধানে দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের নাগালের অনেকটাই বাইরে চলে গেছে দাম।

সরেজমিনে বুধবার সকালে রাজধানীর শোয়ারীঘাটের ইলিশের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি ৩৫০ থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। গত তিন থেকে চার দিনে আড়তে আসার আগেই দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খুচরায় কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে শুরু করে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান।

আড়তদার শরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নদীতে ও সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বলে তারা ঘাট থেকে জেনেছেন। আড়তেও আগের চেয়ে অনেক বেশি মাছ উঠছে। তবে চাহিদাও আগের চেয়ে বেশি।

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আগে এক কেজি সাইজের ইলিশ আমরা ৭০০ টাকা দরে কিনতাম এখন সেটা ৯০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। আর দুই কেজি সাইজের ইলিশ আগে কিনতে হত ১৮০০ টাকা কেজি, এখন সেটা ২২০০ টাকা কেজি। আমাদের কেনার উপরে বিক্রি। আমরা বলতে পারব না।”

লালবাগের স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী মাছ কিনতে এসেছেন শোয়ারীঘাটে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি নিয়মিত এখান থেকেই মাছ নেই। এক সপ্তাহ আগে দেড় কেজির যে মাছ ১২০০ টাকা কেজি কিনেছি সেটা আজকে ১৬০০ টাকা চাচ্ছে।“

দাম হঠাৎ কেন এত বেড়েছে পাল্টা সেই প্রশ্ন করেন তিনি।

নিমতলীর আনন্দ বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি হাঁকায় অনেকেই অন্য মাছ কেনার কথা জানালেন। কেউ কেউ কিনলেও বড় মাছের জায়গায় ছোট আকারের ইলিশ কিনেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “দেড় কেজি সাইজের মাছ কিনতে এসে দেখি ১৮০০ টাকা চায়। তাই এখন ১২০০ টাকা দিয়ে এক কেজি সাইজের ইলিশ নিয়েছি।”

আজিমপুরের ছাপড়া মসজিদের সামনের বাজারে কেজিতে পাঁচটা ওঠে এমন আকারের ইলিশ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেল। এ আকারের মাছের দাম কেজিতে আগে ছিল ৪০০ টাকা কেজি। তিন দিন আগে এক কেজি ওজনের মাছ পাওয়া গেছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। দেড় কেজির দাম ছিল ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা এবং দুই কেজির দাম ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা।

ইলিশের সরবরাহ পরিস্থিতি ও দাম বাড়ার বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার প্রধান মাসুদ আরা মমি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইলিশের সরবরাহ ব্যাপক। তবে এখন পাঁচ থেকে সাত বছর আগের চেয়ে ইলিশ ধরার খরচ অনেক বেড়েছে। এছাড়া ট্রান্সপোর্ট খরচ তো আরও বেড়েছে। চাহিদাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।“

দুদিন পরেই ২২ দিনের জন্য ধরা, বাজারজাত করা, বিপণন করা বন্ধ থাকবে ইলিশের। ফলে নদীতে বা সাগরে যে ইলিশ ধরা পড়ছে সবই বাজারে আসছে। এ কারণে সরবরাহও বেশি বলে জানান তিনি।

আগামী ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর প্রতিবছরের মত এ বছরও ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে সরকারি এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় কেনাবেচা, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে।

বন্ধের আগে বেশি পরিমাণে মজুদের কারণে ইলিশের দাম বাড়ছে কি না জানতে চাইলে ওই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “বড় পরিসরে স্টক করছে বলে আমার মনে হয় না। ২০১৫-১৬ সালের দিকেও মানুষ ইলিশ ধরা বন্ধের বিষয়টা তেমন জানত না। এখন শুধু শহরে নয়, গ্রামের মানুষও ৫-১০টা ইলিশ কিনে ঘরে রেখে দেয়। মোট কথা ইলিশের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন সব পেশার মানুষই ইলিশ খেতে পছন্দ করে। এমনকি ঘরোয়া দাওয়াতেও ইলিশের চাহিদা থাকে। এজন্য দাম একটু বেড়েছে।”

তিনি জানান, এ বছর ইলিশ উৎপাদন পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৫ হাজার টন।