রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে নেওয়া ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করলে ৪ শতাংশ হারে জরিমানার মুখে পড়বেন রপ্তানিকারকরা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি মুদ্রায় গঠিত এ তহবিল থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে কড়াকড়ি করতে ‘প্যানেল ইন্টারেস্ট নামে’ এ জরিমানা সুদ আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের অর্থে গঠিত ইডিএফ তহবিলের আকার কমিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দ্রুত ঋণ ফেরত এনে অর্থ আদায়ে নতুন এ উদ্যোগ নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, অনুমোদিত সময় পরবর্তী সময়ে বকেয়া থাকা ইডিএফ ঋণের অনাদায়ী অর্থের উপর ৪ শতাংশ হারে প্যানেল সুদ যোগ করা হবে। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য এর নাম হবে ক্ষতিপূরণ (কমপেনসেশন)।
ইডিএফ থেকে ২ শতাংশ হারে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে সুদ নেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এরমধ্যে ১ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরিশোধ করে ব্যাংকগুলো।
রপ্তানি আয় ফেরত আসার ১৮০ দিনের মধ্যে ইডিএফ ঋণ পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে তা ২৭০ দিনেও পরিশোধ করা যায়।
বিদেশি মুদ্রার সংকট সামালে দিতে আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার সময় ঝুঁকি বিবেচনায় ইডিএফসহ সব ধরনের দায় রিজার্ভের হিসাব থেকে পৃথক করে দেখাতে সম্মতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর পর থেকে ইডিএফের আকার কমিয়ে আনার পথে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত জানুয়ারিতে এ তহবিলের আকার কমে ৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
১৯৮৯ সালে ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ডলার নিয়ে গঠিত ইডিএফের আকার বেড়ে সাত বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। এটিসহ রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠিত সবগুলো তহবিলের পরিমাণ আট বিলিয়ন ডলারের উপরে। এর সবটুকু রিজার্ভের হিসাবের মধ্যে দেখানো হয়েছে, যা পৃথক করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মূলত রপ্তানি আদেশের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানিতে সহজ শর্তে ইডিএফ থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন উদ্যোক্তারা। রপ্তানি পণ্যের আয় দেশে আসলে তা থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণটি পরিশোধ করে থাকেন।
রপ্তানি আয় আসার পরে ব্যাংকই প্রথমে ইডিএফ ঋণের অর্থ কেটে নিয়ে অবশিষ্ট পরিমাণ টাকায় স্থানান্তর করে গ্রাহককে বুঝিয়ে দিয়ে থাকে।
আইএমএফের সঙ্গে ঋণ আলোচনার মধ্যেই ইডিএফের বিকল্প হিসেবে এটির আদলে উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করতে স্থানীয় মুদ্রা টাকায় দুটি বড় আকারের তহবিল গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এরমধ্যে গত ১ জানুয়ারি গঠন করা হয় ১০ হাজার কোটি টাকার ‘রপ্তানি সহায়ক প্রাক অর্থায়ন তহিবল (ইএফপিএফ)’। ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে, যার মেয়াদ হবে ১৮০ দিন। তবে যে রপ্তানির বিপরীতে ইডিএফ সুবিধা নেওয়া থাকবে তাতে ইএফপিএফ ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন না কোনো গ্রাহক।
এর আগের মাসে ৭ ডিসেম্বর গঠন করা হয় ‘গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ)’ নামের তহবিল, যার আকার ৫ হাজার কোটি টাকার। এ পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মেয়াদ র্নিধারণ করা হয়েছে ৫ থেকে ১০ বছর।