বাজার মনিটরিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শহিদুল বলেন, এখন রাস্তায় বা বাজারে আগের মতো চাঁদাবাজি নাই। কিন্তু সেটার প্রভাবেও দ্রব্যমূল্য কমল না।
Published : 27 Sep 2024, 11:10 PM
বিজয় সরণি এলাকার কলমিলতা বাজারে ছুটির দিন সকালে সবজি কিনতে এসে একরকম হতাশই হতে হলো শহিদুল ইমলামকে। টমেটো, বেগুনসহ কয়েক পদের সবজির দরদাম করলেও শেষ পর্যন্ত ৪০ টাকায় একটি বাঁধাকপি আর ১৫ টাকায় আধাকেচি পেঁপে কিনেই তুষ্ট থাকতে হলো তাকে।
“পকেটে টাকা কম। তাই হিসাব-নিকাশ করে চলতে হয়। চাহিদা তো আছেই, তাই বলে তো আর যেমন খুশি কেনা যায় না। দেখা যায়, যে জিনিসটা প্রয়োজন, সেটার দাম বেশি, এজন্য সেটা না কিনে যেসব সবজির দাম একটু দাম কম সেগুলো কিনতে হচ্ছে,” বলেন এই সরকারি চাকরিজীবী।
দুর্মূল্যের বাজারে ‘হাত টেনে’ চলতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়ের পড়াশুনার খরচ, স্ত্রী ও আমার ওষুধ এবং বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে হাতে তেমন টাকা থাকে না। তাই শেষে চাপটা বাজরের ওপর দিয়েই যায়। ভালো খাবার খেতে কার না ইচ্ছা হয়? কিন্তু টাকার অভাবেই তো মানুষ ভালো খাবার খেতে পারে না। এখন খাবারের অভাবে মানুষ মরে না ঠিকই, কিন্তু মানসম্মত খাবারের অভাবে আছে মানুষ।”
শহিদুল খেদ ঝাড়লেন বাজার মনিটরিংয়ের ওপরও।
“বাজার নিয়ে বর্তমান সরকার কিছুই করতে পারে নাই। তেমন মনিটরিং হচ্ছে না। শেখ হাসিনাও কিছু করতে পারে নাই। তার বাণিজ্য মন্ত্রী টিটু তো বলছিলই যে, বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙ্গা সম্ভব না। এখন রাস্তায় বা বাজারে আগের মতো চাঁদাবাজি নাই। কিন্তু সেটার প্রভাবেও দ্রব্যমূল্য কমল না।”
মধ্য বয়সী শহিদুল পাশের দোকানে এবার এক আাঁটি কলমি শাক হাতে জানলেন তার দাম ১৫ টাকা করে।
বিক্রেতা রিয়াজুল হক বলেন, “আমরা কারওয়ান বাজার থেকে প্রতি মুঠা (আঁটি) কিনছি ১০ টাকায়। আর ৫ টাকা লাভে বিক্রি করি। আগে ৭-৮ টাকায় কিনে ১০-১২ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন তিন-চারদিন ধইরা দাম বাড়ছে।”
কম কিনছেন ক্রেতারা
আয় আর চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য আনতে ক্রেতারাও কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার কলমিলতা ও মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাট কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জানা গেছে।
কলমিলতা বাজারে তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা কেশব রায় বলেন, “এতো বেশি দাম সবকিছুর। শুধু আমাদের যে কেনা কমে গেছে তাই না। বিক্রেতাদের বেচাবিক্রিও কমে গেছে। আমাদের মতো বিক্রেতার উপরও প্রভাব পড়ছে।”
মহাখালীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে কেশব জানালেন, পাঁচ বছরে তার আয় মাত্র ৫ শতাংশ বাড়লেও বাজারের খরচ আগের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে।
মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা জালাল আহমেদ বলেন, “এই বাজারে (গুদারাঘাট কাঁচা বাজার) সবজির দাম বলেন আর মাছের দামই বলেন, সবকিছুর দাম বেশি বেশি লাগে। আর আজ তো আরও বেশি। তাই চাহিদা অনেক থাকলেও কিনলাম কম।”
বাজার দুইটিতে কাঁচা মরিচের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ৮০ টাকা বেশিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত বুধবার কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়।
দেশে ভারতীয় আলুর আমদানি অব্যাহত থাকলেও দাম কমেনি। বাজারে এখনও ৬০ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। আর পেঁয়াজের কেজি ১১০ টাকা।
কলমিলতা কাঁচা বাজারে সবজির দর সপ্তাহের ব্যবধানে একটু বাড়তি দেখা গেছে। সবধরনের সবজিতে কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকার মতো বেড়েছে।
এই বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, লাউ (একটি) ৪০ টাকা, দেশি শসা ৭৫ টাকা ও হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৬০-১০০ টাকা কেজি এবং লতি, চিচিঙ্গা ও ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
কলমিলতা কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সবুজ বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে সবধরনের সবজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে দাম বেশি।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, “বৃষ্টি হওয়ায় সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক নাই৷ চাহিদা চেয়ে কম মাল আসছে। তাই দাম একটু বাড়তি।”
মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাট কাঁচা বাজারে আবার সবজির দর কলমিলতা কাঁচা বাজারের চেয়ে বেশি দেখা গেছে।
এই বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১০০ টাকা ও লাল গোল বেগুন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ও লাউ (প্রতিটি) ৭০ টাকা, করলা, পটল ও দেশি শসা ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০, বরবটি ১২০ টাকা ও টমেটো ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গুদারাঘাট কাঁচা বাজারের বিক্রেতা জুম্মন শেখ বলেন, “ভাই, আমাদের চাপ দিয়ে লাভ নাই। আমরা কারওয়ান বাজার থেকে আনি। সেখানে দেখেন। আর মালের বাজার এই দুইদিন ধরে উল্টাপাল্টা। এখন বাজারের রিপোর্ট দেওয়া যাইত না, ঝামেলা আছে।”
উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল ডিম ও মুরগি
এদিকে তিনদিনের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে হালিতে দুই টাকা আর ডজনে বেড়েছে পাঁচ টাকা। বাজারে লাল ডিম ৫৫ টাকা হালি ও ডজন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। আর সাদা ডিম ৫২ টাকা হালি ও ডজন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়।
কলমিলতা কাঁচা বাজারের এম এ স্টোরের বিক্রেতা জিসান আহমেদ বলেন, “ডিমের দাম এখন একটু বাড়তির দিকে। তিন-চারদিনের ব্যবধানে ডজন প্রতি ৫ টাকা করে বাড়ছে।”
বাজারে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। সোনালি মুরগি মানভেদে ২৬০- ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও গরুর মাংস ৭৫০ ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা কেজি দরে।
মাছের বাজার
সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের বাজারও কিছুটা চড়া দেখা গেছে।
বাজারে পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, মাগুর ৭৫০ টাকা, টেংরা ৬৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, রুই আকারভেদে ৩০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।
গুদারাঘাট কাাঁচা বাজারের বিক্রেতা পাগল চাঁন দাস বলেন, “সব মাছেরই দাম বাড়ছে ২০-৩০ টাকার উপরে। আর চিংড়িতে বাড়ছে ১০০ টাকার উপরে। গতকাল যে চিংড়ি বেচছি ৬০০ টাকায়, আজ তা ৭০০ টাকা।”