‘৫ লাখ টাকার পণ্য আমদানির খরচই সাড়ে ৩ লাখ টাকা’

‘শুল্ক ছাড়াই বাড়তি’ এ খরচ গুনতে হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে আয়োজিত এফবিসিসিআইয়ের সেমিনারে তুলে ধরা হয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2023, 02:08 PM
Updated : 19 Nov 2023, 02:08 PM

পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটি পটেটো চিপসের চালান আমদানি করতে বিভিন্ন ল্যাব পরীক্ষাতেই ব্যয় হয় আড়াই লাখ টাকা; সময় লাগে আট থেকে নয় দিন। বন্দরের ফি হিসেবে গুণতে হয় আরও এক লাখ টাকা।

রোববার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক এক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, পণ্যের ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় এ খরচ ও সময় অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে এফবিসিসিআই ও ইউএসডিএ (ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার) এর অর্থায়নের প্রকল্প বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (বিটিএফ)।

মূল প্রবন্ধে বিটিএফ এর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর এ এ এম আমিনুল এহসান খান বলেন, সব মিলিয়ে দেখা যায় পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এক চালান পটেটো চিপস আমদানিকারকের গুদামে যেতে যেতে দাম পড়ে যায় ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা; যা প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ৬২ শতাংশ বেশি। প্রতিটি চালানেই নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআই ও পরমাণু শক্তি কমিশনের ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়।

“ট্যাক্স ও ডিউটি ছাড়াই অতিরিক্ত সাড়ে তিন লাখ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। একটি কোম্পানি গত ১৫ বছর ধরে প্রতি বছর ১০ থেকে ১২টি চালান দেশে আনলেও এখন পর্যন্ত কোনো চালানেই কোনো ধরনের দূষণ ধরা পড়েনি।”

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের বন্দরে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিজ পণ্যের সবগুলোর ক্ষেত্রেই একইভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ‘কমপ্লায়েন্স’ ব্যবসায়ীদের জন্য বা পরিচিত ব্র্যান্ডের জন্য কোনো ধরনের সুবিধা নেই। পণ্য কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনো ছাড় দেওয়ার পদ্ধতি চালু নেই।

খরচ, সময় ও ঝামেলা কমানোর জন্য আমদানি পণ্যগুলোকে উচ্চ, মধ্যম ও স্বল্প ঝুঁকির ক্যাটাগরিতে ভাগ করার পরামর্শ দেন আমিনুল এহসান।

বিশ্বব্যাপী চলমান চর্চার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, পণ্যগুলো কোন দেশ থেকে আসছে, আমদানিকারক কারা, সরবরাহকারী কারা এসব বিষয় দেখে ঝুঁকির মাত্রা ঠিক করা হয়। উচ্চ ঝুঁকির পণ্য যেভাবে অডিট করা হয়, স্বল্প ঝুঁকির পণ্য সেভাবে অডিট করতে হবে না। প্রতিটি চালান পরীক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিভিন্ন দেশের উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, অন্য দেশগুলো খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে নতুন কোনো চালান প্রথম পাঁচটা শতভাগ পরীক্ষা করছে। সেগুলো ঠিক থাকলে এর পরের প্রতি চারটায় একটি করে চালান পরীক্ষা করে। তাতেও কোনো ঝামেলা না পাওয়া গেলে তারা প্রতি ২০টি চালানের একটি চালান পরীক্ষা করছে। আবার কোথাও ঝামেলা ধরা পড়লে পরে আবার শতভাগ চালান পরীক্ষা করছে।

“যুক্তরাজ্যে ফল ও সবজির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ পরীক্ষা হয়। পরিশোধিত পণ্যের ক্ষেত্রে মাত্র ১ শতাংশ পণ্য পরীক্ষা করা হয়। আর পোল্ট্রি ও অন্যান্য জীবিত প্রাণীর ক্ষেত্রে শতভাগ পরীক্ষা করা হয়।”

সেমিনারের প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঢাকার পূর্বাচলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পণ্য পরীক্ষা করে সরাসরি কার্গোতে পাঠানো যাবে। ফলে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ অপচয়-দুটিই কমে আসবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গত কয়েক বছরে কৃষিতে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। আন্তঃবাণিজ্য সমস্যা কমাতে সরকার কাজ করছে। এটি আরও সহজ করতে সরকারের সঙ্গে শিগগির আলোচনা করা হবে।

টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনাকে মূল লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা যখন উন্নত দেশে উন্নীত হব, টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা দরকার হবে আমাদের। আর এ জন্য নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

বাংলাদেশ এখন ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ এ রয়েছে জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এ খাতে সর্বাধিক মূল্য সংযোজনের সুযোগ আছে। তৈরি পোশাক শিল্পের পরেই রপ্তানি বহুমুখীকরণের অন্যতম খাত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি প্রণোদনার ও সুযোগ বাড়িয়েছেন এ খাতে।

ইউএসডিএর প্রজেক্ট ডিরেক্টর মাইকেল জে পার বলেন, আমদানি ও রপ্তানিতে সময়ক্ষেপনের মাত্রা কমিয়ে আনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বেশি লাভবান ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। এ দেশের ক্রেতারাও ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারবে। এ আলোচনা থেকে যে সমাধান বেরিয়ে আসবে তা কার্যকরের আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।