উচ্চ মূল্যের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
Published : 12 Nov 2023, 08:59 PM
পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণের বিষয়ে নিম্নতম মজুরি বোর্ডে লিখিত আপত্তি জানিয়েছে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন।
রোববার শ্রমিকনেত্রী তাসলিমা আখতারের নেতৃত্বে ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’ এর ব্যানারে ১১টি শ্রমিক সংগঠন এ আপত্তি জানায়। তারা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবি জানান।
সংগঠনগুলোর অভিযোগ, প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামোতে শিল্প মালিকদের কথা মতো ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ এবং ১ ও ২ নম্বর গ্রেড বাতিল করে শ্রমিকদের ঠকানো হয়েছে।
শ্রমিক নেতারা গ্লোবাল লিভিং ওয়েজ কোয়ালিশনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে ন্যূনতম মাসিক ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ এবং ৫ ও ৬ নম্বর গ্রেডকে ৩ ও ৪ নম্বর গ্রেডের সঙ্গে সমন্বয় করার দাবি জানান।
এদিকে এদিন সন্ধ্যার পর নিম্নতম মজুরি বোর্ডের নির্ধারণ করা মজুরির সুপারিশের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। এতে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন ১২ হাজার ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে।
অপরদিকে পোশাক কারখানার কর্মচারীদের চারটি গ্রেডে বেতন দেওয়ার সুপারিশ করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড; যেখানে তারা সর্বনিম্ন ১২ হাজার ৮০০ এবং সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৮০০ টাকা বেতন পাবেন।
আগে শ্রমিকদের জন্য গ্রেড ছিল সাতটি, যা কমিয়ে পাঁচটি করা হয়েছে। তবে কর্মচারীদের গ্রেড সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে।
গেজেট প্রকাশের আগে ঢাকার তোপখানা রোডে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা জানিয়েছিলেন, খসড়া প্রকাশ না হওয়ায় কোনো আপত্তিপত্র গ্রহণের সময় হয়নি।
পরে শ্রমিক নেতারা বলেন, মজুরি নিয়ে উদ্বেগের কারণে গেজেট প্রকাশের আগেই তারা আপত্তিপত্র নিয়ে এসেছেন। তাছাড়া মজুরি নিয়ে সারাদেশে বিক্ষোভ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ হস্তক্ষেপে তারা শ্রমিকদের জন্য আরও কিছু মজুরির দাবি নিয়ে এসেছেন।
“এর আগের দুইবারে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বিবেচনা করলেও এবার এখনও সেই ধাপটি বাকি রয়েছে। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনা পাবেন শ্রমিকরা,” বলেন কয়েকজন শ্রমিকনেতা।
তারা বিদ্যমান মজুরি কাঠামোর গ্রেডেও কিছু পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছেন।
বর্তমান কাঠামোতে ১ নম্বর গ্রেডে আছেন প্যাটার্ন মাস্টার ও চিফ কোয়ালিটি কনট্রোলার যাদের সর্বশেষ ২০১৮ সালের কাঠামোতে ন্যূনতম মজুরি ছিল ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা।
অপরদিকে ২ নম্বর গ্রেডে রয়েছেন মেকানিক, ইলেক্ট্রেশিয়ান ও কাটিং মাস্টার যারা সর্বশেষ ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা ন্যূনতম মজুরি পেতেন।
নতুন কাঠামোর খসড়ায় এ দুটি গ্রেড রাখা হয়নি। তবে শ্রমিক নেতারা এ দুটি গ্রেড বহাল রেখে ৫ ও ৬ নম্বর গ্রেডকে এর আগের ৩ ও ৪ নম্বর গ্রেডের সঙ্গে সমন্বয় করে মোট পাঁচটি গ্রেড নির্ধারণের দাবি করে আসছেন।
আগের কাঠামোর ৫ নম্বর গ্রেডে রয়েছেন জুনিয়র সুইং মেশিন অপারেটর, জুনিয়র কাটার, ফোল্ডার এবং ৬ নম্বর গ্রেডে রয়েছেন জেনারেল সুইং মেশিন ও বাটন মেশিন অপারেটর।
শ্রমিক নেতা তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে দুটি গ্রেড বাতিল করার প্রস্তাব শ্রমিক সংগঠনগুলোর ছিল; সেগুলো হচ্ছে গ্রেড ৬ ও গ্রেড ৫। কিন্তু প্রস্তাবিত মজুরিতে যে দুটি গ্রেড বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে তাতে লাভবান হওয়ার পরিবর্তে বঞ্চিত হবেন শ্রমিকরা।
আপত্তিপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি বাড়তি দামে বাংলাদেশের মজুরি কেনার জন্য সম্মতি দিয়েছে আমেরিকার এক হাজার ব্র্যান্ডের জোট আমেরিকান অ্যাপারেল ও ফুটওয়্যার অ্যাসেসিয়েশন। তারা ৫ থেকে ৬ শতাংশ বাড়াতে সম্মতি জানিয়েছে। ক্রেতারা যদি বাড়তি মজুরি দিতে সম্মত থাকে তাহলে মালিকদের সামর্থ্য, ক্রেতাদের অংশ নেওয়া এবং সরকারের চেষ্টায় পোশাক শ্রমিকরা কাঙ্খিত মজুরি পেতে পারে। এ অবস্থায় মালিকদের সক্ষমতা বাড়লে শ্রমিকদের বাড়বে না কেন?
আপত্তিপত্রে গত ৫ বছরে শ্রমিকদের নিত্যপণ্যের ব্যয়ভার তুলে ধরে বলা হয়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত সময়ে চাল ১৫ শতাংশ, ডাল ১২০ শতাংশ, আটা ৮৮ শতাংশ, আলু ৮০ শতাংশ, খোলা সয়াবিন ৯৫ শতাংশ, লবণ ৬৮ শতাংশ, ডিম ৬৭ শতাংশ, চিনি ১৮০ শতাংশ, দুধ ১০০ শতাংশ, মুরগি ৪৮ শতাংশ এবং মাছ ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অপরদিকে ২০১৮ এর মজুরির তুলনায় প্রস্তাবিত মজুরি বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। অথচ টিসিবির বাজার দরই বলছে গত ৫ বছরে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির হার কোন কোন ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৮০ থেকে প্রায় ২০০ শতাংশ। বর্তমানে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসে সর্বাধিক।
পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার যেখানে লাগাম ছাড়া, সেখানে মালিকদের সামর্থ্য থাকার পরও কোন যুক্তিতে শ্রমিকের মজুরি যথাযথভাবে বৃদ্ধি পাবে না, সেই প্রশ্ন রাখেন শ্রমিক নেতারা।
আপত্তিপত্রে ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের’ সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার, সদস্য সচিব সাদেকুর রহমান শামীম, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম সভাপতি মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, বিপ্লবী গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি মাহমুদ হোসেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ ও জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন সভাপতি ফয়েজ হোসেন সই করেন।
ক্রেতারা আগে বেশি দাম দিক, তারপর বাড়তি মজুরির প্রশ্ন: বিজিএমইএ
শ্রমিক আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার সবাই বিএনপির লোক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী