বিক্রেতারা বলছেন, শীতকাল হাঁস বিক্রির মওসুম। এসময় হাঁসের মাংসের স্বাদও একটু বেশি থাকে, ক্রেতাও বাড়ে অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ।
Published : 27 Dec 2023, 04:27 PM
নগর জীবনে শীতের আড্ডায় আর খানাপিনায় পিঠা-পুলির সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পাতিহাঁসের গরম গরম ভুনা মাংস।
‘হাঁস পার্টি’ ঘিরে রাজধানীতে বেড়েছে হাঁসের কদর। ঢাকায় কয়েকবছর আগেও মুরগির দোকানে হাঁস খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল, এখন বিভিন্ন জাতের হাঁস মিলছে দোকানে।
পাতিহাঁসের চাহিদা যে বেড়েছে, সেটি দোকানিদের বিক্রির হিসাব আর দামেও স্পষ্ট।
ঢাকার মিরপুর শাহআলী কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজার, নিউ মার্কেট কাঁচাবাজার, মিরপুর-২ নম্বর কাঁচাবাজার, শেওড়াপাড়া বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় হাঁসের সরবরাহও বেড়েছে। দাম বেশি হলেও বিক্রি থেমে নেই।
এসব বাজারে প্রতিটি পাতিহাঁস ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কেজি হিসাবে কেউ চাইলে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন দোকানিরা। ‘পিস’ আর কেজির দর প্রায় সমানই পড়ে।
ঢাকায় ডিসেম্বরের শুরু থেকেই পড়েছে শীতের আমেজ। ঠাণ্ডার তীব্রতা কম-বেশি হলেও শীত শীত আবহাওয়া থাকবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি জুড়ে। শীতের এই সময়টায় বাহারি পিঠাপুলি ঘিরে সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠান হয় বেশি।
গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বন্ধুদের এক আয়োজনে মিলিত হয়েছিলেন সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল মতিন। দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা, একসঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি তারা মেতে ওঠেন বাহারি খাবারের আয়োজনে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মতিন বলেন, “দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের মিলনমেলার বড় একটা উপলক্ষ হয় হাঁস পার্টি। আমরা দেড়শ বন্ধু মিলিত হয়েছিলাম। শীতের পিঠাপুলি মিলিয়ে দারুণ এক সন্ধ্যা কাটিয়েছি।”
ঢাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী আকবর হোসেন বলেন, “ঢাকায় আমাদের একটি আঞ্চলিক সংগঠন আছে। নির্বাচনের পর জানুয়ারির মাঝামাঝি আমরাও একটি ভোজসন্ধ্যার আয়োজন করতে যাচ্ছি, যার অন্যতম আকর্ষণ হাঁসের মাংস।”
শীতের আগে দিনে চার-পাঁচটা হাঁস বিক্রি করতেন ঢাকার শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারের দোকানি মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম।
এখন প্রতিদিন ২০-২৫টি হাঁস বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “শীত এলে হাঁসের চাহিদা অনেক বাড়ে। দামও আগের চেয়ে ভালো। দেখা যাচ্ছে, এখন প্রতিটি হাঁস ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা যাচ্ছে।”
পাতিহাঁসের পাশাপাশি চীনা হাঁস ও রাজহাঁসও মিলছে দোকানগুলোতে।
আরিফুল বলেন, “শীত আসার আগে দিনে ৫-৬টা হাঁসও বিক্রি হত না। এখন দেখা যাচ্ছে একজনই একসঙ্গে ১০-২০টা অর্ডার দিয়ে দিচ্ছে। টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ ও অন্যান্য হাওরাঞ্চল থেকে বেশিরভাগ হাঁস আসছে।”
মিরপুর-২ কাঁচা বাজারের দোকানি মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, “মোহাম্মদপুর রায়ের বাজারে বিভিন্ন জেলা থেকে হাঁসের চালান আসে। রাতের ১১টার দিকে গেলে ৩টা-৪টার মধ্যে আমরা হাঁস নিয়ে চলে আসতে পারি। প্রতিটা হাঁসে এখন ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা লাভ করা যায়।”
‘হাঁস পার্টি’ ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন ফুটপাত ও পিঠাপুলির দোকানেও বিক্রি হচ্ছে হাঁসের মাংস। মিরপুর-২-এ স্টেডিয়ামের উত্তর ও পশ্চিম পাশের দোকানগুলোতে হাঁসের মাংস ও রুটি বিক্রি হতে দেখা যায়।
একটি দোকানের কর্মী আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার দোকানে সারা বছরই হাঁসের মাংস আর রুটির ব্যবস্থা থাকে। তবে শীতকাল হাঁসের মাংস বিক্রির মওসুম। এই সময়ে হাঁসের মাংসের স্বাদও একটু বেশি থাকে। ক্রেতাও বেড়ে যায় অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ।”