বিদেশি পর্যটক টানতে দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও তা উদযাপনে সরকারের কর্মপরিকল্পনা পরিষ্কার নয়।
Published : 23 May 2015, 05:11 PM
পর্যটন শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের ‘মহাপরিকল্পনার’ অংশ হিসেবে সরকারের নেওয়া এই উদ্যোগের বিষয়ে তারা ‘কিছুই জানেন না’।
তারা বলছেন, ঘোষণার পর প্রায় তিন মাস পেরোতে চললেও পর্যটন বর্ষ উদযাপন নিয়ে সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই।
গত ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের কার্যক্রম দ্রুত ও গতিশীল করতে ২০১৬ সালকে ‘পর্যটন বর্ষ’ হিসাবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০১৫-১৬ থেকে শুরু করে তিন অর্থবছরে এ খাতে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে দেশের পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন টোয়াবের নির্বাহী পরিচালক গোলাম কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, এর পরিকল্পনা কী- এ সম্বন্ধে আমরা এখনো কিছু জানি না।”
পর্যটন বর্ষকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০ লাখ বিদেশি পর্যটককে দেশে টানার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
কিন্তু এর জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে এই পর্যটন ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের একটি গবেষণা বলছে, দেশে আসা বিদেশি পর্যটকদের ৩০ শতাংশ সিলেটে যান। পর্যটন মৌসুম বলতে বছরের ৫ থেকে ৬ মাসকেই আমরা বুঝি। প্রতি মাসে ৩০ হাজার মানুষ সিলেটে গেলে সেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে কি?”
তবে পর্যটন বর্ষকে ঘিরে ২০১৬ সালে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, কার্নিভাল ও প্যাকেজ ট্যুর আয়োজনে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
“পর্যটন বর্ষ ২০১৬ বাস্তবায়নে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে একটি আঞ্চলিক সম্মেলনের প্রস্তবনা আছে। এতে সাতটি দেশের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। আমরা এজন্য প্রস্তুতি শুরু করেছি।
“কিছু কিছু অবকাঠামো নির্মাণের কাজও চলছে। কুয়াকাটা যেতে যে তিনটি সেতু পার হতে হয়, সেগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে।”
তবে বেঙ্গল ট্যুরসের মাসুদ মনে করেন, এ ধরনের বড় ইভেন্টের জন্য যে লোগো বা ব্র্যান্ডিংয়ের প্রয়োজন- তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আকতারুজ্জামান কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পর্যটন নিয়ে আমাদের ব্র্যান্ড নেম ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’। সীমিতি পরিসরে আমরা সকলেই এটি নিয়ে কাজ করছি। ইতিমধ্যে এটি সারা বিশ্বে বেশ পরিচিত হয়ে উঠছে।
“রিজিওনাল কানেক্টিভিটি বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে। রিজিওনাল ট্যুরিজমের জন্য ভারত ও নেপালের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। আমরা আশা করি, এর মাধ্যমে দেশে কিছু ব্যবসা আসবে।”
পর্যটন বর্ষের বিস্তারিত বিষয়ে একটি ‘পলিসি গাইডলাই’ তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, “এটি নিয়ে খুব শিগগিরই আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসবো।”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ দেশে পর্যটন একটি রুগ্ন শিল্প। কারণ, যে ধরনের নীতিমালা হওয়া উচিৎ তা এখানে নেই। আর এজন্য বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া উচিৎ।”
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) হিসেবে, এ বছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থীতিশীলতায় পর্যটন খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬শ কোটি টাকা।
সিপিডির অতিরিক্ত পরিচালক্ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “এ শিল্প সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জাতীয় বাজেটে একটি বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। পর্যটনকে মাথায় রেখে বরাদ্দ বৃদ্ধি করলে তা এ শিল্পকে বাঁচাতে সহায়ক হবে।”