সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ১২ দিনে সাড়ে চারশ কোটি টাকা ক্ষতির কথা জানিয়ে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি বলেছেন, প্রয়োজনে তারা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন।
Published : 12 Jan 2015, 02:58 PM
সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ১২ দিনে সাড়ে চারশ কোটি টাকা ক্ষতির কথা জানিয়ে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি বলেছেন, প্রয়োজনে তারা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন।
বিএনপির ডাকা টানা অবরোধের সপ্তম দিন সোমবার রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এই সংকটের কথা তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে রাজনীতিবিদরা আমাদের বিনিয়োগকে জিম্মি করেছে। এতে করে গভীর সংকটে পড়েছে পোশাক শিল্প। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পোশাক শিল্পে এক উৎকণ্ঠাময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই শিল্প এক রকম বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত।”
আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকটের সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।
“আমি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলব, পোশাক শিল্প জাতীয় শিল্প। একে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সকলের। রাজনৈতিক সমস্যা আপনারা (রাজনৈতিক দলগুলো) আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুন। আমাদের কাঁধে বন্দুক রেখে রাজনীতি করা যাবে না।”
“আমাদের এলসি ক্যান্সেল হবে, বেতন-ওভারটাইম দিতে হবে। আবার রাজনৈতিক কারণে অর্ডার বাতিল হবে। এটা হতে পারে না। আমরা জিম্মি হয়ে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যেন- ভিক্ষা চাই না, কুত্তা সামলান।”
আন্দোলন বন্ধ করার আহ্বান নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কি না- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অনুরোধ জানাচ্ছি পোশাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখুন।”
অনুরোধ না রাখলে কী করবেন- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “যদি কিছু না হয়, তাহলে যাব। আমরা সবাই তো দেশের নাগরিক।”
গত তিন বছরে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানিতে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশের তথ্য তুলে ধরে রাজনীতিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সব কিছুতে ভালো করার পরও কেন আমরা পিছিয়ে পড়ছি”?
আমদানি ও রপ্তানি সচল রাখার স্বার্থে পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোকে হরতাল-অবরোধের আওতায়মুক্ত রাখার দাবি জানান আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “সব রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের জোর দাবি। আপনারা রাজনীতি করেন, আমরা অর্থনীতি সচল রাখার চেষ্টা করি। বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের শিল্পকে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখুন।”
সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান বিজিএমইএ সভাপতি।
হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং অস্থিরতার কারণে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের গার্মেন্টগুলোতে কাজ দিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
“২০১৩ সালের ঘটনার প্রেক্ষিতে (রাজনৈতিক অস্থিরতা) ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছিল। পরে সেই সংকট কাটিয়ে একটা স্থিতিশীল বছর গেছে। আমরা শঙ্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি।”
“আমরা যখন ক্রেতাদের বলছি, উই আর ব্যাক টু দ্য বিজনেস, তখন তারা বলছে- ‘ফর দ্য লাস্ট টুয়েলভ ডেইজ, ইওর কাট্রি ব্যাক টু দ্যা প্যাভেলিয়ন’। ক্রেতাদের এই বার্তা পোশাক শিল্পের জন্য অশনি সংকেত।”
৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তির দিনে ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে সারা দেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
অবরোধের কারণে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।
রাজনৈতিক কারণে তৈরি পোশাক শিল্পে কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, তার একটি হিসেব তুলে ধরেন আতিকুল ইসলাম।
“জানুয়ারি মাসের এই ১২ দিনে পোশাক শিল্পে ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ডিসকাউন্ট, এয়ার শিপমেন্ট ও অর্ডার ক্যান্সেলের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। বলা যায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে।”
এরকম রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলতে থাকলে আরও কারখানা বন্ধ হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।