সরকার নয়, জনগণই গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূস।
Published : 28 Jun 2013, 05:03 PM
১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হয়। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে।
এরপর ২০১০ এর ডিসেম্বরে নরওয়ের টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে। এরপর দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় একটি কমিশন গঠন করে সরকার। সম্প্রতি কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ব্যাংকের বর্তমান কাঠামো বদলে বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করে বলে গণমাধমের খবর। অবশ্য অর্থমন্ত্রী এরমধ্যেই সংসদে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামো পরিবর্তনের ইচ্ছা সরকারের নেই।
ইউনূস বলেন, “যে ব্যাংক দেশের জন্য অবদান রেখেছে, সেই ব্যাংককে এভাবে ধ্বংস হতে দেয়া হবে না। এটা মানুষের প্রতিষ্ঠান, মানুষই তা প্রতিহত করবে।”
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচিত নারী সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের পাশে থাকবো। আপনাদের ব্যাংক কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।”
সামাজিক ব্যবসা দিবস
মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মদিন ২৮ জুনকে গত চার বছর সামাজিক ব্যবসা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ইউনূস সেন্টার।
‘কল্পনাকে বাস্তবতায় রূপান্তর’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার এ দিবস পালন করা হয়।
সামাজিক ব্যবসা সম্পর্কে ইউনূস বলেন, “প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সামাজিক ব্যবসা সম্পর্কে তাদের আগ্রহের কথা জানাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ নিয়ে নীতিমালা করেছে। জার্মানিতে সামাজিক ব্যবসা সিটি করা হচ্ছে। এটা এখন আর ক্ষুদ্র বিষয় নয়।”
সামাজিক ব্যবসার পরিসর বাড়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ছোট উদ্যোক্তারাও এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। দশ বিশ করে একদিন হাজার হাজার কোটি ডলার হবে সামাজিক ব্যবসার পরিধি।”
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেন, “ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ আজ আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। ইউনূস দেখিয়েছেন পুঁজিবিহীন অদক্ষ দরিদ্র মানুষ কীভাবে উদ্যোক্তা হতে পারে, সমাজের কল্যাণে অবদান রাখতে পারে।”
অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
মুহাম্মদ ইউনূস চলে যাওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক আরো ভালো চলছে-অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যদি ভালোই চলে তবে গ্রামীণ ব্যাংককে নষ্ট করার দরকার নেই।”
ইউনূস আসলেই রাজনীতিবিদ - বলে অর্থমন্ত্রীর আরেক মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রী আমার প্রশংসা করলেন না কি দুর্নাম করলেন, বুঝলাম না।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপি নেতারা আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে এসেছিলেন। এছাড়া কংগ্রেশনাল মেডেল পাওয়ায় অভিনন্দন জানানোও তাদের উদ্দেশ্য ছিল।”
সামাজিক ব্যবসা দিবসের অনুষ্ঠানে ৩০টি দেশের দেড় শতাধিক অতিথি অংশ নেন। অনেকে নিজের অভিজ্ঞতা ও মতামত তুলে ধরেন।
সকালের অধিবেশেনে অন্যদের মধ্যে ফ্রান্সভিত্তিক ড্যানোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমান্যুয়েল ফেবার, নেপালের চৌধুরী গ্রুপের চেয়ারম্যান বিনোদ চৌধুরী, মালয়শিয়ার সেরেমবান প্রদেশের প্রিন্স টিংকু রেধা উদ্দিন, মালয়শিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য্ দাঁতো রহমান মোহাম্মাদ, জার্মানির ডায়ালগ ইন দ্যা ডার্কের প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রে হেনিক প্রমুখ বক্তব্য দেন।