করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর লকডাউনে নিত্যপণ্য কেনাকাটায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে রাজধানী ঢাকার কিছু নির্ধারিত স্থান থেকে কাঁচাবাজার সরিয়ে পাশের সড়কে অস্থায়ীভাবে বসানোর উদ্যোগে খুব বেশি খুশি নন দোকানিরা।
Published : 03 Jul 2021, 09:18 PM
লকডাউনের তৃতীয় দিনে বেশ কিছু এলাকার বাজার সচরাচর ব্যস্ত রাস্তায় বসানো হলেও এই সময়ে সাধারণ যান চলাচল বন্ধ থাকায় এসব সড়কে চলাচলে কোনো ঝামেলা হচ্ছে না বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
তবে রোদ আর বৃষ্টিতে অস্থায়ী এসব দোকানে তাদের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে উল্লেখ করে দোকানীদের অনেকেই বলছেন, এমনিতেই কেনাবেচা কমে গেছে। এরসঙ্গে দোকান স্থানান্তরের কারণে জটিলতা বেড়েছে তাদের।
শনিবার রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার মাছ ও সবজির দোকানগুলো পাশের সড়কে বসিয়ে বেচাবিক্রি চলছে। ভেতরে বাজার ছিল ফাঁকা।
তবে মুদির দোকানসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের বাজার নির্ধারিত আগের জায়গাতেই রয়েছে।
আরও বেশ কিছু পরিচিত বাজারের অংশ বিশেষ সড়কে বসানো হয়েছে। এর মধ্যে রামপুরা কাঁচাবাজার, শান্তিনগর বাজার, যাত্রাবাড়ি মৎস্য আড়ৎ, মধ্য বাড্ডা ও আলির মোড় কাঁচাবাজারের একটি অংশ পাশ্ববর্তী সড়কের কিছু অংশে বসানো হয়েছে।
“তারপরও যারা খুব প্রয়োজনে কেনাকাটার জন্য রেব হবেন, তারা যেন বাজারে এসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা শেষ করতে পারেন, সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে মালিবাগ কাঁচাবাজার সড়কের খোলা জায়গায় আপাতত বসানো হয়েছে।”
বিধিনিষেধ পরিপালনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের দেওয়া প্রজ্ঞাপনেও সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাবেচা করা যাবে বলে উল্লেখ করা আছে।
মালিবাগ রেলগেইটের পাশের সড়কে কাঁচাবাজার বসানো হলেও গাড়ি চলাচল কম থাকায় যান চলাচলে কোনো বিঘ্ন হতে দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে কোথাও কোথাও বাজার সড়কে বসতে পুলিশও ‘জোর’ করছে বলে অভিযোগ করে দোকানীরা বিভিন্ন সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন।
এছাড়া চলমান লকডাউনে লোকজন ঘর থেকে খুব একটা বের না হওয়ায় বেচাবিক্রিও কমে গেছে বলেও জানান তারা।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম বলেন, “ওসি সাহেবের নির্দেশে আমরা বাজার থেকে দোকানপাট সরিয়ে পাশের রাস্তায় নিয়েছি, কিন্তু সেখানে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।
“বৃষ্টি হলে ভিজতে হচ্ছে, রোদ উঠলে পুড়তে হচ্ছে। এতে করে শরীর খারাপ করে, অসুস্থ হয়ে যাব।”
এছাড়া খোলা জায়গায় রোদ উঠলে তাপ বেড়ে এবং বৃষ্টিতে বরফ গলে মাছ নষ্ট হয়ে যায় বলেও অভিযোগ তার।
একই বাজারের সবজি বিক্রেতা তাজুল ইসলাম বলেন, “এমনিতে কাস্টমার কম, মানুষ ঘর থেকে খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছে না, যে কারণে বিক্রি অনেক কমে গেছে। এর মধ্যে খোলা আকাশের নিচে গতকাল (শুক্রবার) বৃষ্টিতে ভিজে দোকানদারী করতে হয়েছে।”
এই বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা আনসার আলী বলেন, “লকডাউনের কারণে মানুষ আগের মত বাজার সদায় করে না। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যা না কিনলেই হয় না সেগুলো ছাড়া অন্যান্য কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে।
“করোনার আগে সাধারণত দৈনিক দুই থেকে তিনটি গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করতে পেরেছি। এখন লকডাউনের কারণে একটা গরুই বিক্রি শেষ হয় না। এতে করে খরচ ও দোকান ভাড়া নিয়ে লোকসানেই পড়তে হবে।”
পাশের আরেকটি দোকানের সাইফুল গোস্ত বিতানের খাসির মাংস বিক্রেতা নুর ইসলাম জানান, তারা সচরাচর একদিনে আট থেকে দশটি খাসি বিক্রি করতে পারতেন। এখন লকডাউনে দুইটাই বিক্রি হয় না বলে জানান।