সন্দেহজনক লেনদেন: ফিনসেন ফাইলসে বাংলাদেশের ৩ ব্যাংক

বিশ্বজুড়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ‘সন্দেহজনক লেনদেনের’ যে বিপুল নথি ফাঁস হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের তিন ব্যাংকের নাম এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2020, 07:06 AM
Updated : 22 Sept 2020, 11:12 AM

২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে আটটি ‘ট্রানজেকশনে’ সব মিলিয়ে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৭ ডলার লেনদেন ওই তিন ব্যাংকের মাধ্যমে, বর্তমান মুদ্রা বিনিময় হারে বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৭ কোটি টাকার বেশি।

এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে (এসআইবিএল) বিদেশ থেকে টাকা এসেছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক থেকে বিদেশে টাকা পাঠানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফিনানশিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের (ফিনসেন) হাতে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের সন্দেহজন লেনদেনের প্রায় আড়াই হাজার দলিল রোববার প্রকাশ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে), যাকে বলা হচ্ছে ‘ফিনসেন ফাইলস’।

বিভিন্ন ব্যাংক ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ফিনসেনকে এসব লেনদেনের তথ্য পাঠিয়েছিল। এসব লেনদেনে দুই লাখ কোটি ডলারের বেশি অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যার উৎস ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা ব্যাংকগুলো ফিনসেনকে জানিয়েছে।

কোনো লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলো গোপন প্রতিবেদন আকারে ফিনসেনকে তা জানায়, যাকে বলে ‘সাসপিসিয়াস অ্যাক্টিভিটি রিপোর্টস'। এর সবক্ষেত্রেই যে অর্থপাচার বা বেআইনি কিছু ঘটেছে, তা প্রমাণিত নয়।

বাজফিড নিউজ এসব গোপন দলিল হাতে পাওয়ার পর তা তারা আইসিআইজেকে দেয়। এরপর ৮৮টি দেশের ১০৮টি সংবাদমাধ্যমকে এসব নথি দেওয়া হয়, যা ধাপে ধাপে প্রকাশিত হচ্ছে ‘ফিনসেন ফাইলস’ নামে। 

আইসিআইজের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের তিন ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেনের যে আটটি ঘটনার তথ্য এসেছে, সেসব লেনদেনে আন্তর্জাতিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক মেলন করপোরেশন। তারাই ওই আট লেনদেন নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা ফিনসেনকে জানিয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক:  অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং (এএনজেড) থেকে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর তিন ট্রানজেকশনে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৩ ডলার আসে।

এসআইবিএল: লাটভিয়ার রিজিওনাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকে ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশের সোশাল ইসলামী ব্যাংকে আসে ১ হাজার ৬০০ ডলার।

রূপালী ব্যাংক: বাংলাদেশের রূপালী ব্যাংক থেকে ২০১৬ সালের ১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর তিনটি ট্রানজেকশনে জার্মানির ডয়েচে ব্যাংকে পাঠানো হয় মোট চার লাখ ৯৫ হাজার ২০৪ ডলার।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সোশাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কাজী ওসমান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে, “বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। বিষয়টি অগের। এটি একটি রেমিটেন্স, আমার মনে হয় বিষয়টি সন্দেহজনক নয়। ওই টাকাটা আমাদের একজন ভালো গ্রাহকের কাছে এসেছিল, তিনি এখনো আমাদের গ্রাহক এবং নাম করা একজন ব্যবসায়ী। এরকম রেমিটেন্স আমাদের কাছে আসে।”

ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মো. মাহবুব উল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসার জবাবে বলেন, ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে তিনটি ‘রেমিটেন্স, আসার কথা সেখানে বলা হয়েছিল, সেগুলো ছিল ‘নিয়মিত রপ্তানি আয়’।

“দেশের শীর্ষ একটি নিট পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণের রপ্তানির অংশ হিসেবে এ তিনটি রেমিটেন্স এসেছে, যার পরিমাণ ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৩ ডলার। রপ্তানি আয়ের এই তথ্য যথা নিয়মে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।”

মাহবুব উল আলম বলেন, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো অ্যাকাউন্টের লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে সব দেশেই তা রিপোর্ট করার বিধান রয়েছে। প্রয়োজন হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগু তা নিয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থাও নেয়।

“ইসলামী ব্যাংকে আসা রপ্তানি আয়ের ওই অর্থকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক সন্দেহজনক বলে রিপোর্ট করলেও ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ তথ্য সংগ্রহের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বা তদন্ত করেনি। ফলে ওই লেনদেনগুলো নিষ্পত্তিকৃত বলে বিবেচিত হয়।”

এ বিষয়ে কথা বলতে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিআইএফইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আমেরিকান ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স খতিয়ে দেখেছে। এগমন্ট গ্রুপ (১৬৫টি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার সংগঠন) থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছে, অন্য কোনো দেশের ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান যেন এ বিষয় নিয়ে কথা না বলেন।”